ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের পরই মাঠে ফিরছেন সাকিব

প্রকাশিত: ২১:০৭, ২৫ জুলাই ২০২০

ঈদের পরই মাঠে ফিরছেন সাকিব

মিথুন আশরাফ ॥ এখনও ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ আছেন দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। এ বছর ২৯ অক্টোবর তার নিষিদ্ধ থাকার শাস্তি শেষ হয়ে যাবে। এই সময়ের মধ্যে কোন ধরনের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না তিনি। নিষিদ্ধ সময় শেষ হয়ে গেলে ক্রিকেট খেলতে পারবেন। ক্রিকেটের সঙ্গে পুরোদমে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। তবে সাকিব এর আগে আগস্টেই, ঈদের পরই মাঠে ফিরবেন। অনুশীলনে নেমে যাবেন। ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন শুরু করে দেবেন সাকিব। ক্রিকেটে ফিরতেই যেন ফিট থাকতে পারেন, সেই কাজ শুরু করে দেবেন। সাকিব নিজেই তা জানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি জুয়ারির কাছ থেকে ম্যাচ গড়াপেটার প্রস্তাব পেয়েও যে আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগকে না জানিয়ে ভুল করেছেন, এমন যেন কেউ না করে শিক্ষা নিতে বলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী নিষিদ্ধ থাকার সময় আইসিসির অধীনে থাকা ক্রিকেট বোর্ড বা বোর্ডের অধীনে থাকা সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন না। এখনও তিন মাস বাকি আছে। নিষিদ্ধ থেকে মুক্ত হতে আরও তিন মাস লাগবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে ফিট রাখতে, প্রস্তুত রাখতে অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারবেন। সাকিব তাই করবেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। ১০ মাস হয়ে গেছে। ক্রিকেট থেকে দূরে আছেন। ঈদের পর জানা যাচ্ছে, ইংল্যান্ডে ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে ফিট করতে অনুশীলন চালিয়ে যাবেন। গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মেডিসন শহরে নিজ পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন সাকিব। নিজেকে ফিট রাখার জন্য বিদেশেই অনুশীলন কার্যক্রম চালাবেন। সাকিব বলেন, ‘আগামী মাস থেকেই আমার অনুশীলনে ফেরার কথা। তিন মাস সময় পাব নিজেকে ভাল মতো প্রস্তুত করার জন্য। আমি এত দিন কিছু করিনি। এই তিন মাসই যথেষ্ট, নিজেকে ক্রিকেটের জন্য আদর্শ গড়নে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আপাতত এটাই পরিকল্পনা।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহ মেয়েদের দেখাশোনা করেই কাটবে, পরিবারের সঙ্গে কাটাব। এরপর আমি ক্রিকেটে মনোযোগ দেব।’ সাকিব নিজে যে ভুল করেছেন, তা থেকে বাকি ক্রিকেটারদের শিক্ষা নিতে বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘এটা অন্য যে কারও সঙ্গে হতে পারত এবং আমি তার কাছ থেকে শিখতে পারতাম। কিন্তু এটা আমার সঙ্গে হয়েছে এবং এখন সবাই আমার কাছ থেকে শিখতে পারে। প্রথম দিন থেকে আমি সৎ থাকার চেষ্টায় ছিলাম। পরে ওরা (আইসিসি) যখন আমাকে প্রশ্ন শুরু করে তখন আমি ওদের কাছ থেকে কিছু লুকাইনি। আমি সব সরাসরি বলেছি। আমি ভুল করেছি। এমন ভুল আমার মতো ক্রিকেটারের করা উচিত নয়। এটার জন্য আমি ক্ষমা চেয়েছি। আমি সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আমি চাই সবাই আমার ভুল থেকে শিক্ষা নিক এবং এমন ভুল না করুক।’ সঙ্গে সাকিব জনপ্রিয় ক্রিকেট ভিত্তিক ওয়েবসাইট ইএসপিএনকে জানান, ‘আপনাকে সৎ হতে হবে। আপনার কারও সঙ্গেই মিথ্যা বলা ঠিক না এবং অন্য কিছু দেখানো উচিত না। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। সবাই ভুল করতে বাধ্য। আপনি কখনও শতভাগ সঠিক হবেন না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনি কিভাবে সেসব ভুল থেকে ফিরে আসেন। আপনি অন্য সবাইকে বলতে পারেন সেই সব ভুল না করতে। সেই পথ সম্পর্কে অন্যদের জানাবেন যাতে করে তারা না যায়।’ ক্রিকেটে ফেরার পর ভুলের সংখ্যা যত কমিয়ে ফেলা যায়, সেই চেষ্টাই করবেন সাকিব। জানান, ‘অবশ্যই আমি চেষ্টা করব, আমার ভুলের সংখ্যা কমিয়ে আনার। প্রথম নেতৃত্ব যাওয়ার পরে আমি বিয়ে করেছি। আমার দুটি বাচ্চা হয়েছে। এখন জীবন এবং খেলাটা আমি অনেক ভাল বুঝি। ২০ বছরের সাকিবের চেয়ে এখনকার সাকিব অনেক বেশি ঠাণ্ডা মাথার। নিজেকে আমি অনেক পরিবর্তন করেছি। এখন আমাকে মানুষ খুব বেশি ভুল করতে দেখবে না। আমার দুই মেয়ে আমার জীবন পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।’ বদলে যাওয়া সাকিব নিজের বিষয়ে আরও কিছুই জানান। খেলোয়াড়ি জীবনে একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছেন সাকিব। ২০০৯ সালে প্রথমবার অধিনায়ক হয়ে বোর্ড প্রধান, নির্বাচক ও গণমাধ্যমের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন। মূলত সে কারণেই ২০০৯-১০ সালে তাকে পুরোপুরিভাবে অধিনায়কত্ব দেয়া হয়নি। সাকিব মনে করেন সেই অভিজ্ঞতাই তাকে মানুষ হিসেবে পাল্টে যেতে সাহায্য করেছে। সাকিব বলেন, ‘মনে করি বিতর্ক আমার জীবনে পরিপূরক। খুব অল্প বয়সেই আমার জীবনে দায়িত্ব চেপেছে। তাই ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। মাত্র ২১ বছর বয়সে অধিনায়ক হয়েছি। অনেক ভুল করেছি। মানুষজন আমাকে নিয়ে অনেক কিছু চিন্তা করে। জানি আমার ভুলটা কোথায়, আবার কিছু জায়গায় আমাকে ভুলও বোঝা হচ্ছে। উপমহাদেশে বিতর্ক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০ বছর বয়সী সাকিবের চেয়ে আমি এখন অনেক শান্ত।’ সাকিব নেতৃত্ব পাওয়ার পর তার অধীনে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মোহাম্মদ আশরাফুলের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররাও খেলেছেন। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে মাশরাফির চোটের কারণে নেতৃত্ব পাওয়া সাকিব ২০১১ সালে বিশ্বকাপের পর জিম্বাবুইয়ের কাছে সিরিজ হারেই নেতৃত্ব হারান। নেতৃত্বে সিনিয়রদের কাছ থেকে কখনোই সমস্যার সম্মুখীন হননি বলে জানান সাকিব। বলেছেন, ‘কখনোই সিনিয়র ক্রিকেটারদের থেকে সমস্যার সম্মুখীন হইনি। এটা কখনোই সমস্যা ছিল না। আমরা জয় পাওয়ার জন্য তখন লড়াই করছিলাম, সুতরাং আমাদের তখন চিন্তা ছিল জয় পাওয়া। মাঠের বাইরে অবশ্যই অসংখ্য ঝামেলা আছে। কিন্তু যদি মিডিয়ার সামনে এ নিয়ে মুখ খোলেন, সেটা ভিন্ন খাতে চলে যাবে। আমার তখন সেই শিক্ষাটা দরকার ছিল, এগুলো আমাকে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।’ অনেক কথাই বললেন সাকিব। তবে তিনি যে ঈদের পরই অনুশীলনে ফিরছেন, ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এটা অনেক বড়, আনন্দের খবর!
×