ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পলিথিনের নিচে বসবাসকারীরা বাড়ি পেয়ে খুশি

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ২৫ জুলাই ২০২০

পলিথিনের নিচে বসবাসকারীরা বাড়ি পেয়ে খুশি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ পর্যটন শহরের খুরুশকুলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর দেখতে যাওয়া এবং শুঁটকি ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করার বিষয় নিয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন জেলাবাসী। শুঁটকি উৎপাদনকারী জেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই অনুভূতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সেখানে যাব আর শুঁটকি ভর্তা দিয়ে ভাত খাব।’ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে জলবায়ু উদ্বাস্তুদর জন্য নির্মিত কক্সবাজারে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে খুরুশকুলের চেহারা বদলে যাবে বলে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য সঠিক জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, বাঁকখালী নদীর তীর ঘেঁষা বৃহৎ এ প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে ৪ হাজার ৪৪৮টি পরিবার ফ্ল্যাট পাবে। তাদের আর কোন অভাব থাকবে না। এর আগেও দেশব্যাপী ঘরছাড়া ব্যক্তিদের পাকা বাড়ি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কক্সবাজারেও এক সময় যাদের বসতি ছিল পলিথিনের নিচে, তাদের আওয়ামী লীগ সরকার পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে। নিজের এক খন্ড ভিটায় বিনামূল্যে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন কক্সবাজারে বাড়ি পাওয়া হতদরিদ্র অনেকে। বাপ-দাদার ভিটায় ঝুপড়ি ঘরে পলিথিনের ছাউনির নিচে উখিয়ার রত্না পালং টেকপাড়ার প্রতিবন্ধী মরিয়ম বেগমের (টুনি) দিনযাপন ছিল খুবই কষ্টের। একটু বৃষ্টি হলে ছাউনির ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ত। বর্ষায় যেন তাদের ঘুম হারাম। তবে জীর্ণ বাড়িতে থাকার দিন এখন অতীত হয়েছে। নিজের জমিতে পাকা বাড়ি করে দিয়েছে সরকার। এমন একটা বাড়িতে বসবাস করতে পেরে প্রতিবন্ধী টুনি পরিবারের সদস্যরা কষ্টের কথা ভুলে গেছেন। স্বপ্নের বাড়িতে তাদের এখন সুখময় জীবন। উখিয়ার রাজাপালং ফলিয়া পাড়ার হতদরিদ্র শামসুল আলমের স্ত্রী জমিলা বেগম, রত্নাপালং মৃত আমীর আলীর পুত্র মীর আহমদ, হলদিয়া পালংয়ের হালুকিয়া গ্রামের ফয়েজ আহমদ এবং রহিম উল্লাহও সরকারের দেয়া বাড়ি পেয়ে দারুণ খুশি। তারা জানান, আমরা গ্রামের মানুষ। খেত খামারে দিনমজুরের কাজ করে কোনরকম সংসার চালায়। এই হতদরিদ্র লোকজনের জীবনে কখনও পাকা বাড়ির মালিক হবো স্বপ্নেও ভাবিনি কেউ। বঙ্গবন্ধু কন্যার রাষ্ট্র পরিচালনায় এখন তা বাস্তবতা। রত্নাপালং টেকপাড়ার মৃত শামসুল আলমের স্ত্রী প্রতিবন্ধী মরিয়ম বেগম টুনি নতুন পাকা বাড়ি বুঝে পেয়ে বলেন, এমন একটা পাকা বাড়িতে থাকতে পারব, জীবনে কল্পনাও করিনি। নিজের এক খন্ড ভিটায় বিনামূল্যে বাড়ি তৈরি করে দেয়ায় গরিব দরদী আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান টুনি। রত্নাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জানান, জমি আছে ঘর নাই, এমন দরিদ্র ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের সরকার বিনামূল্যে পাকা বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে। এটি যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ আওতায় ‘জমি আছে ঘর নেই’ ও দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পে প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে উখিয়ায় ১৪৪টি বাসগৃহ নির্মাণ করে দিয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, আশ্রয়ণ-২ আওতায় ‘জমি আছে ঘর নেই’ কর্মসূচীর আওতায় ১০৫টি এবং দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্প আওতায় ৩৯টিসহ মোট ১৪৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সার্বিক মনিটরিং করে প্রকৃত গৃহহীন দরিদ্র পরিবারকে নতুন ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে হতদরিদ্র ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের বিনামূল্যে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়। শহরতলী খুরুশকুলেও শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ১৯টি পাঁচতলা ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় সেখানে ৬০০ উদ্বাস্তু পরিবারকে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জলবায়ু উদ্বাস্তু ৬০০ পরিবার নতুন ফ্ল্যাট পেয়েছেন।
×