ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

প্রকাশিত: ২০:১৮, ২৪ জুলাই ২০২০

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরির্বতিত রয়েছে। ধরলা, তিস্তা, ব্রক্ষপুত্র, দুধকুমোরসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার ধরলা নদীর পানি বিপদ সীমার ৮৭ সেঃ মিঃ ও ব্রক্ষপুত্র নদের পানি ৭৪ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দীর্ঘ এক মাস ধরে জেলার ৬৫টি ইউনিয়নে ৪০৫টি চর-দ্বীপ চরের প্রায় সাড়ে ৬শতাধিক গ্রামে সাড়ে ৪ লক্ষাধিক মানুস পানি বন্দী মানুষ চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এ মানুষগুলো নিজ ঘরবাড়ীতে পানির মধ্যে নৌকা,কলা গাছের ভেলা ঘরের মাচানে ও টিনের চালে খেয়ে না খেয়ে দিনের পর দিন রাত কাটাচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে আসা ইঞ্জিনের নৌকার শব্দ শুনলেই মুহুর্তেই ত্রানের আশায় ছুটে আসছে। এভাবে দিনভর ছুটাছুটি করে নিরাশ হচ্ছে বার বার। মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের কর্মজীবি মানুষেরা। প্রয়োজনীয় ত্রান সহায়তা না মেলায় খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন তারা। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে ও দীর্ঘদিন পানির মধ্যে বসবাস করায় মানুষজন আক্রান্ত হচ্ছেন পানি বাহিত নানা রোগে। দিনে দিনে তীব্র হয়ে উঠছে গো-খাদ্যের সংকট। দুর্ভোগ বেড়েছে উঁচু বাঁধ ও পাকা সড়কে আশ্রয় নেয়া বানভাসী মানুষদেরও। গত ১ মাসে পানিতে ডুবে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১৬ জনই শিশু। জেলার চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফা জানান, আমরা ত্রান সঠিকভাবে পাচ্ছি না, যেভাবে পাওয়া উচিৎ জনগণ সেভাবে পাচ্ছে না। এই মূহুর্তে শুকনো খাবার, স্যানিটেশন, পানি ও ঔষধের ভীষণ প্রয়োজন। এই বন্যার মধ্যেই তিস্তা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নের কাসিম বাজারে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়ির হাট এলাকায় ক্রস বারের মাটির ৫০ মিটার পানিতে ভেসে গেছে। ভাঙ্গন দেখা দিয়ে রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিরাম এলাকার ক্রস বারেও। এতে করে ঐ দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম ভাঙ্গনের হুমকীতে পড়েছে। গত ৫ দিন ধরে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভাঙন কবলিত এলাকার আব্দুল আজিজ (৬২) জানান, তিস্তার ভাঙনে ৬ বার বাড়ি ভেঙেছি। এবার আর জায়গা না থাকায় চর বিদ্যানন্দ থেকে পার্শ্ববর্তী গাবুর হেলানে জামাই নুর মোহাম্মদের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছি। এই এলাকার হক্কানী মিয়া জানান, এখানে গত ৮দিন ধরে ভাঙন চলছে। আজও ৫টি বাড়ি সড়িয়েছে। এরা হলো আব্দুল আজিজ, কাজী, রহমান, হবি ও নজরুল। যেভাবে ভাঙছে তাতে হুমকীর মুখে রয়েছে গাবুর হেলান মসজিদ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাজাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়, সোলাবাড়ি সারকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৈয়ব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহাসানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাঘব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থান। যা বিলিনের পথে রয়েছে। জেলা ত্রান অফিস সুত্রে জানা গেছে বন্যা দুর্গত সহ জেলার ৯টি উপজেলায় ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫শ ২৫ পরিবারকে ভিজি এফ এর চাল দেয়া হচ্ছে পর্যায ক্রমে। ইতিমধ্যে ১শত ৯২ মেঃ টঃ চাল ৬ হাজার শুকনো খাবার ২লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৪ লাখ টাকার গো খাদ্য পর্যায় ক্রমে বিতরণ করা হয়েছে বন্যার্তদের মাঝে।
×