ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ফ্রি চিকিৎসা ॥ চট্টগ্রামে ১০ তরুণের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১৯:১৮, ২৫ জুলাই ২০২০

করোনা আতঙ্কের মধ্যেই ফ্রি চিকিৎসা ॥ চট্টগ্রামে ১০ তরুণের উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ করোনা আতঙ্কে শহর ও গ্রামের সব চিকিৎসা কেন্দ্র বন্ধ প্রায়। রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে দৌড়াচ্ছে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ডাক্তারদের। করোনা আতঙ্কে ডাক্তরা এখন আর সর্দি-কাশি আর গলা ব্যথা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় দশ তরুণ গড়ে তুলেছেন ‘পাহাড়তলী অস্থায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র।’ ফ্রি চিকিৎসা কেন্দ্রে রোগীদের দেখে শুনে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন দুই চিকিৎসক। সেই সঙ্গে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য পুনরায় সাক্ষাতেরও সময় বেধে দিচ্ছেন ব্যবস্থাপত্রে। বিত্তবানদের সহায়তায় আগত রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। এমনকি এলাকায় শ্বাসকষ্টে থাকা করোনা রোগীকে বিনামূল্যে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে দশ তরুণের মহত্ব উদ্যোগ। প্রথম পর্যায়ে চারমাসের জন্য গড়ে তোলা এ চিকিৎসা কেন্দ্র এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন ভেলুয়ারদীঘি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ৫ জুলাই থেকে এ স্কুলের দ্বিতীয় তলায় পাহাড়তলী অস্থায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সরাইপাড়া এলাকার ১০ তরুণ মিলে করোনাকালীন সময়ে এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বারগুলো যখন সর্দি, কাশি, জ¦র আর গলাব্যথা রোগীদের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দিয়েছে ঠিক সেই মুহূর্তেই মানবিকতার টানে এ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা দিতে নগরীর একে খান এলাকার দি আরবান ক্লিনিক্যাল সার্ভিসের জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ মোঃ মাসুদ আলম ও সাগরিকা এলাকার এসএ হেলথ কেয়ারের ডাঃ মোঃ দিদারুল আলম স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন রোগীদের। সপ্তাহে তিনদিন রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিনামূল্যে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিত্তবানদের সহায়তায় প্রত্যেক রোগীকে মাস্কসহ ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বিনামূল্যে ওষুধও সরবরাহ করা হচ্ছে এ চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে। শুধু তাই নয়, ডাক্তারি পরামর্শে রোগীর রোগ নির্ণয়ে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকলে তাও আবার ৫০ শতাংশ কমমূল্যে নগরীর বিভিন্ন প্যাথলজি থেকে করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তরুণ এ যোদ্ধারা। এ পর্যন্ত প্রায় ৫শ’ রোগী চিকিৎসা দেয়ার নজির তৈরি করেছে গত কয়েকদিনে। এ ব্যাপারে অস্থায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রের মানবিক চিকিৎসক ডাঃ মাসুদ আলম জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে এখন রোগীদের সমস্যার কথা শোনার কেউ নেই। ধরে ছুয়ে ও আলাপ-আলোচনা না করে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া খুবই অমানবিক। ফলে তরুণ সমাজের আহ্বানে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি এ কেন্দ্রে। শুধু তাই নয়, ওষুধপত্র ছাড়াও শ্বাসকষ্টে থাকা রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্টও দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। এমনকি ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ওষুধ সেবনের পর কয়েকদিনের মধ্যে পুনরায় সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ফলে রোগীদের সাড়াও মিলছে বেশ। বিশেষ করে হতদরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর রোগীরাই এ কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসছেন সবচেয়ে বেশি।
×