ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেডিক্যাল ডেন্টালের প্রশ্ন ফাঁসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস জড়িত

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২৪ জুলাই ২০২০

মেডিক্যাল ডেন্টালের প্রশ্ন ফাঁসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস জড়িত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল, আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস জড়িত রয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডির)। ওই প্রেসে কর্মরত সদস্য বা তাদের পরিবারের কেউ মেডিক্যালের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তকারী সংস্থার সাইবার ক্রাইম পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস এ তথ্য জানান। এদিকে সরকারী মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের তিন সদস্যকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস জানান, গত ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতা জসিম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নুসহ (৪৫) পাঁচজনকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার দল। অন্যরা হচ্ছেন পারভেজ খান, জাকির হোসেন ওরফে দিপু, মোহাইমিনুল ওরফে বাঁধন ও এসএম সানোয়ার হোসেন। তিনি জানান, গ্রেফতারের সময় চক্রের হোতা জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং তার সহযোগী পারভেজ খানের (৩২) কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে সিআইডি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডির সাইবার ক্রাইমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস জানান, এ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, ১৯৮৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে একটি প্রেস থেকে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপানো হয়। ওই প্রেসে চাকরি করে এমন সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো এসব কাজে যুক্ত থাকতে পারে। গ্রেফতার হওয়া চক্রের সদস্যরা ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাপাখানা থেকে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের হোতা জসিম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নুর অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। যা মানিলন্ডারিং মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। তিনি জানান, গত ১৯ জুলাই এস এম সানোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে সাইবার পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সানোয়ার ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হোতা জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া মুন্নু, পারভেজ খান, জাকির হোসেন দিপু এবং সামিউল জাফর সিটুকে গ্রেফতার করা হয়। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস জানান, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করি। ওই মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দেয় সিআইডি। যার মধ্যে গ্রেফতার হয়েছিল ৪৭ জন। এদের মধ্যে ৪৬ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় তদন্ত করার সময়ে ২০১৮ সালে একটি চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি। তিনজন সাত দিনের রিমান্ডে ॥ সরকারী মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের তিন সদস্যের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রিমান্ড প্রাপ্তরা আসামিরা হলেন জসিমউদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নু (৪৫), পারভেজ খান (৩২) ও জাকির হাসান দিপু (৪০)। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা (ভার্চুয়াল) শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আদালতে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার মিরপুর থানায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী আবু সাঈদ। এ সময় আসামিদের ভার্চুয়াল আদালতে উপস্থিত দেখানো হয়। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০ জুলাই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে সিআইডির সদস্যরা। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় এজাহারনামীয় ১৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে সিআইডি।
×