ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১ সেতু নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণে চুক্তি সই

বিএনপি জনরোষের ভয়ে আতঙ্কে আছে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৪ জুলাই ২০২০

বিএনপি জনরোষের ভয়ে আতঙ্কে আছে ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাপান সরকারের সহায়তায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ছোট-বড় একুশটি সেতু নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সাড়ে ছয় শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুগুলো নির্মাণের লক্ষ্যে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের চুক্তি সই হয়েছে। বৃহস্পতিবার বনানীর প্রকল্প অফিসে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে নিজ বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। ফরেন এইডেড প্রজেক্ট ‘আরএইচডি’ ভবনে ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (ডব্লিউবিবিআইপি) আওতায় জাইকা ঋণ সহায়তায় চলমান দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি এখন মানসিকভাবে বিপন্ন। ধারাবাহিক ব্যর্থতায় বিএনপি নিজেরাই জনরোষের ভয়ে আতঙ্কে আছে। তিনি বলেন, তারা জনগণকে সাহস না দিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তারা করোনার বেপরোয়া চালকের মতো রাজনীতিতেও বেপরোয়া আচরণ করছে। চুক্তিপত্রে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মৃত্যুঞ্জয় ঘোষাল সই করেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং জাইকার বাংলাদেশ অফিস প্রধান ইউহো হায়াকাওয়া ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন। এ সময় মন্ত্রী দেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে জাপানের অব্যাহত সহায়তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, জাপান বাংলাদেশের বিশ^স্ত বন্ধু। দু’দেশের সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল রুট-৬ জাপানের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এছাড়া জাপানের আর্থিক সহায়তায় নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ২য় কাঁচপুর, ২য় মেঘনা ও ২য় গোমতী সেতুর। চট্টগ্রাম থেকে দেশের পর্যটন তীর্থ কক্সবাজার পর্যন্ত মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণে জাপানের অর্থায়ন ইতোমধ্যে নীতিগত অনুমোদন হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে নেয়ার অংশ হিসেবে করোনায় আক্রান্ত জনবলের চিকিৎসায় দুটি ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের নির্মিত ভায়াডাক্টের উপর রেললাইন ও বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক এ সময় বলেন, বিএনপি মানুষের দুর্যোগ এবং কষ্টের সময় পাশে না দাঁড়িয়ে কথামালার ধারা বর্ষণ করে যাচ্ছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তায় সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টা তুলে ধরে তিনি বলেন, পানিবন্দী মানুষের মানবিক সহায়তার পাশাপাশি বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন ও কৃষি খাতসহ বিভিন্ন খাতে ক্ষতি পুষিয়ে দিতে নেয়া হচ্ছে গুচ্ছ পরিকল্পনা। উল্লেখ্য, জাপানের অর্থায়নে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের তেইশটি জেলায় ছোট ও মাঝারি একষট্টিটি সেতু নির্মাণে ইতোপূর্বে গ্রহণ করা হয় ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের পঁচিশটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এবং পঁয়ত্রিশটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হতে চলেছে। নতুন করে একুশটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগের ফলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্য পরিবহণে অর্থ সাশ্রয় হবে এবং ভ্রমণ সময় কমে আসবে। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব চন্দন কুমার দে, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ শাহরিয়ার হোসেনসহ প্রকল্প কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির সমালোচনা করে কাদের বলেন, ‘বিএনপি মানুষের দুর্যোগ ও কষ্টে গণমাধ্যমে কথামালার ধারা বর্ষণ করে গেলেও করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে নেই। নেই কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যখন অসহায় মানুষের সহায়তায় অনন্য নজির স্থাপন করেছে, তখন এই দলটি ঘরে বসে থেকে ক্লান্ত। গৃহকোণ থেকে বুলি ছোড়া তাদের কাজ। তিনি বলেন, সরকার এবং আওয়ামী লীগ এখন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারী উদ্যোগে চলছে ত্রাণ তৎপরতা। তখনও বিএনপি নিজেদের দুর্গত মনে করে বিপন্ন বোধ করছে। তারা আসলেই মানসিকভাবে বিপন্ন। তারা নিজেরাই জনরোষের ভয়ে আতঙ্কে আছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, মানুষ নাকি আতঙ্কে আছে। তিনি ঠিকই বলেছেন মানুষ বিএনপির কর্মহীন, প্রত্যাশাহীন বাক্যবাণের আতঙ্কে আছে। তারা জনগণকে সাহস না দিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত সরকার মানুষকে যেভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, বিএনপি তা মেনে নিতে পারছে না। প্রতিহিংসায় জ্বলছে। তারা প্রতিহিংসার আতঙ্কে আছে। পুড়ছে আত্মদহনে। জনগণের পাশে না থাকলে একটি রাজনৈতিক দল এভাবে জনবিচ্ছিন্ন ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে আমি বিরোধী দলসহ সবাইকে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ভুল হলে তা শুধরে দেয়ার পরামর্শ আপনারা দিতে পারেন, এটা আমাদের প্রত্যাশা। গঠনমূলক যে কোন সমালোচনাকে সরকার স্বাগত জানায়। ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্প্রতি ফেসবুকে দেশে-বিদেশে বিরোধী দলের কেউ কেউ দেশের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। সরকারের সমালোচনা করতে গিয়ে দেশের ক্ষতি ও ভাবমূর্তি নষ্ট না করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। চলমান বন্যায় সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের সহায়তায় প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে এগিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। দুর্গত মানুষকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্রে। খাবারসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দুর্গত মানুষদের রান্না করা খাবার সরবরাহে প্রশাসনকে সহযোগিতা করে আসছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বন্যায় কৃষি খাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গোশত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমি বন্যাদুর্গত মানুষদের মনে সাহস রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের পাশে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনারা কোন অবস্থাতে মনোবল হারাবেন না। আল্লাহ আমাদের সহায় আছেন। নেত্রী আমাদের পাশে আছেন।’ সেতু নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ২৩ জেলায় ছোট-বড় ৬১টি সেতু নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণে গ্রহণ করা হয় ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে জাপানের সহায়তা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পে নতুন করে আরও ২১টি সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে আজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি সই হলো। চুক্তি মূল্য ৬৫০ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২৪ মাসের মধ্যে এ সেতুগুলো নির্মাণ কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, এই ২১টি ও আগের ৬১টিসহ মোট ৮২টি সেতু নির্মিত হলে দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী হবে। মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ী হবে। ভ্রমণের সময় কমে আসবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প রুট-৬ এর নির্মাণ কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি ৪৭ ভাগ। বর্তমান ভায়াডাক্টের ওপর রেললাইন, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলেছে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এছাড়া, মেট্রো রেল রুট-১ এর নির্মাণ কাজ শুরুর লক্ষ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষে বিস্তারিত নক্সা প্রণয়ণের কাজ চলছে। শুরু হয়েছে ডিপো এলাকার ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতিও। মেট্রোরেল রুট-৫ এর নর্দান অঞ্চলের কাজ শুরুর লক্ষ্যে বিস্তারিত নক্সা প্রণয়নসহ অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজে সম্প্রতি পরামর্শ নিয়োগের চুক্তি হয়েছে। ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতরকে চলমান প্রকল্পগুলোর বাধা নিষ্পত্তি করে দ্রুত সম্পাদনের জন্য বিশেষ তদারকি টিম গঠনের নির্দেশ দেন।
×