ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশ ফেরতদের ১১ খাতে ঋণ দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৪ জুলাই ২০২০

বিদেশ ফেরতদের ১১ খাতে ঋণ দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা প্রাদুর্ভাবের সময় দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা অনেক বাংলাদেশী। কাজ হারিয়ে তাদের অনেকেই এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকার বিদেশ ফেরত এসব কর্মহীন ব্যক্তিকে ব্যবসা করার জন্য ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মী এবং মৃত কর্মীর পরিবারের জন্য পুনর্বাসন ঋণ বিতরণের নীতিমালা প্রকাশ করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। মাত্র চার শতাংশ সুদে এই ঋণ বিতরণ শুরু করেছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব জাবিন বলেন, ‘যারা বিদেশে কর্ম হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন, তাদের ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ঋণ দেয়া হবে ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য। ঋণের টাকা দিয়ে তারা মুরগির খামার, গরুর খামার করতে পারবে।’ গত ১৫ জুলাই থেকে এই ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। মাহতাব জাবিন বলেন, ‘করোনায় চাকরি হারিয়ে বিদেশ ফেরত যে কেউ এখনই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের যে কোন শাখায় গিয়ে ঋণের জন্য আবেদন করলে তাকে ঋণ দেয়া হবে।’ ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব নিয়মকানুন মানতে হয়, ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীদেরও সেসব নিয়ম মানতে হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বিদেশে ক্ষতিগ্রস্তরা দেশে এসে যদি বৈধভাবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন তাহলে তাদের ঋণ দেয়া হবে। এছাড়া, কেউ একজন বিদেশে কর্মরত আছেন- এমন প্রবাসীর পরিবারের কোন সদস্য ইচ্ছে করলে ব্যবসার জন্য ঋণ নিতে পারবেন। তাদের জন্যও সুদের হার চার শতাংশই।’ মূলত, করোনা সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের ১ মার্চের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীরা পাবেন এই ঋণ। অন্যদিকে, বিদেশে যে প্রবাসী কর্মী মারা গেছেন, তার পরিবারের যেকোন একজন সদস্য এই ঋণ পাওয়ার জন্য যোগ্য হবেন। ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা হিসেবে নীতিমালায় বলা হয়, ১৮ বছর বয়সী আবেদনকারীকে ব্যাংকের শাখার আওতাধীন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, এক ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সরল সুদের এই ঋণের মেয়াদ হবে খাত অনুযায়ী এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। আবেদনকারীর পাসপোর্টের (পাসপোর্টের বহির্গমন ও আগমনী সিলযুক্ত পাতাসহ) সত্যায়িত ফটোকপির সঙ্গে বিএমইটির স্মার্ট কার্ড বা চাকরিরত দেশের আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি বা বৈধ পথে বিদেশ গমনের প্রমাণপত্র বা বিদেশে চাকরির চুক্তিপত্র বা বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে জমা দিতে হবে ‘ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী কর্মী’ এই মর্মে সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের প্রত্যয়নপত্র। ঋণ আবেদনকারীকে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ‘ঋণ খেলাপী নন বলে’ হলফনামা দাখিল করতে হবে। তবে অন্য কোন সংস্থা, ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ খেলাপী ব্যক্তি এই ঋণ পাবেন না। উন্মাদ, দেউলিয়া, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামিও এই ঋণের জন্য বিবেচিত হবেন না। সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ‘সহজামানত’ রাখতে হবে না। তবে এর উর্ধে হলে দেড়গুণ সমপরিমাণ সহজামানত জমা দিতে হবে। আবেদনকারীর বৈধ ব্যবসা বা প্রকল্পটি প্রাথমিকভাবে শুরু করার পর আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীর জামানতের জন্য গ্যারান্টিকৃত সম্পত্তি নিজ নামে বা পিতার নামে থাকতে হবে। ঋণ পরিশোধে সক্ষম ন্যূনতম একজনকে গ্যারান্টার হিসেবে রাখার শর্ত দিয়ে নীতিমালায় বলা হয়, এক্ষেত্রে আবেদনকারীর পিতা, মাতা, স্বামী বা স্ত্রী, ভাই, বোন বা নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের বাইরে আর্থিকভাবে সচ্ছল ‘সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিকেও’ গ্যারান্টার হিসেবে রাখা হবে। চার শতাংশ সরল সুদে ঋণ দেয়া হলেও মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে কিস্তি খেলাপী এবং ক্যাশ ক্রেডিট ঋণের ক্ষেত্রে মঞ্জুরিপত্রের শর্ত মোতাবেক যথাসময়ে সমন্বয়ে ব্যর্থতার জন্য ২ শতাংশ দ- সুদ আরোপ করা হতে পারে। প্রসঙ্গত, ঋণ বিতরণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে বিনা সুদে ২০০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। পরবর্তীতে ৫০০ কোটি টাকার ব্যাপক আকারের প্রবাসী পুনর্বাসন কর্মসূচী গ্রহণ করার কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি দুই লাখেরও বেশি শ্রমিক দেশে ছুটিতে এসেছিলেন। এরপর গত দুই মাসে আরও প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক দেশে আসেন। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রগুলো- কৃষি ঋণ প্রকল্প; মাঝারি ধরনের কৃষিনির্ভর শিল্প ঋণ প্রকল্প; মুরগির খামার প্রকল্প; মৎস্য চাষ প্রকল্প; বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট প্রকল্প; সৌর জ্বালানি খাত প্রকল্প; তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর উদ্যোক্তা ঋণ প্রকল্প; একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প; নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রকল্প; গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প এবং দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামার প্রকল্প।
×