ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পদত্যাগ যথেষ্ট নয়

প্রকাশিত: ২১:১০, ২৪ জুলাই ২০২০

পদত্যাগ যথেষ্ট নয়

করোনা দুর্যোগে সারাদেশ যখন বিপন্ন, দিশেহারা, তেমন দুঃসময়ে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং লাগামহীন বিশৃঙ্খলার চিত্র উঠে এসেছে, তা যেমন অমানবিক তেমনই ন্যক্কারজনক নজির। যেখানে সব মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়ে মানবিক দায়িত্ব পালন করার কথা, সেখানে ক্রমাগত দৃশ্যমান হচ্ছে হরেক রকম দুর্বৃত্তায়ন এবং অব্যবস্থাপনার দুঃসহ চিত্র। সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ, ডাঃ সাবরিনা-আরিফ দম্পতিসহ সাহাবুদ্দীন হাসপাতালের যে নাজুক অব্যবস্থাপনার দৃশ্যপট উন্মোচিত হয়েছে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আরম্ভ করে অধিদফতর এমনকি পুরো স্বাস্থ্য খাতকে যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন করেছে তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন পথ আদৌ আছে কিনা তা বলা মুশকিল। বিড়ম্বিত এই স্বাস্থ্য খাতটির দুর্নীতি-অনিয়ম মোকাবেলায় শুধু কি আইনী পদক্ষেপ যথেষ্ট? তার চেয়েও বেশি জরুরী পুরো ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে ঢেলে সাজানো। অভিযোগ, আপত্তি এবং বিপন্ন পরিস্থিতিকে সামাল দিতে না পেরে পদত্যাগ করেছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। যে গুরুতর অভিযোগ নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হলেন এই অধিকর্তা, সেখানে স্বীয় মানমর্যাদার মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলা মুশকিল। স্বাস্থ্য খাতের মতো স্পর্শকাতর অধিদফতরের প্রধান কর্তাব্যক্তিটির এমন দুরবস্থা করোনার এই মহা সঙ্কটে ভাবাও যায় না। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতকে নিয়ে বিভিন্ন সময় হরেক রকম ওজর-আপত্তি বরাবরই ছিল। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদফতর থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনায় যে দুর্নীতি, অবহেলা, নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট প্রবল হয়ে উঠেছিল, করোনার দুঃসহ পরিস্থিতিতে তা একেবারে সমূলে বের হয়ে আসল। তবে আশ্বস্তের ব্যাপার অপরাধী ও অভিযুক্তরা ঘটনার বাতাবরণে চিহ্নিত হচ্ছেন। অনেকেই আটক হয়েছেন। কেউবা স্বেচ্ছায় পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত সেই সতর্কবাণী দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে সরকারপ্রধান ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতিতেই অটল রয়েছেন। যথার্থ এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্ত এবং অপরাধীদের কর্মকা- খতিয়ে দেখা আবশ্যক। রিজেন্ট, শাহাবুদ্দীন ও জেকেজির দুর্বৃত্তায়ান হতবাক মানুষ প্রথম থেকেই ভাবতে শুরু করেছে, মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া করোনা মহামারী পরীক্ষার সুযোগ সংশ্লিষ্টরা কিভাবে পেল? এর জন্য সমূহ দুর্ভোগের শিকার হয়েছে করোনা পরীক্ষা করতে আসা সাধারণ মানুষ। প্রতারিত এসব অসহায় মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকি নেয়াই শুধু নয়, বরং অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দেয়া হয়েছে টাকার বিনিময়ে। কি ভয়ঙ্কর কারাসাজি! ভাবাও যায় না। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিরা তাদের দায়দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পাারেন না। সমাজের বিশিষ্টজনেরা বলছেন, মহামারীর এই সঙ্কটকালে আরও দক্ষ ও যোগ্য নেতৃত্বের বিকল্প নেই। জোরালো জনস্বাস্থ্যনীতি নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানোই এই সময়ের দাবি। স্বাস্থ্য খাতের সমস্ত অনিয়ম দূর করে পরিচ্ছন্ন ও জনবান্ধব স্বাস্থ্যনীতি প্রবর্তনসহ বাস্তবায়নই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা।
×