ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিবিসিতে সালাউদ্দিনের সাক্ষাতকার

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ২৩ জুলাই ২০২০

বিবিসিতে সালাউদ্দিনের সাক্ষাতকার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী মোঃ সালাহউদ্দিন "বাংলাদেশের ফুটবলের নায়করা" শিরোনামে মার্চ ১৪, ২০১৯ তারিখে বিবিসিকে দেয়া (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন) একটি সাক্ষাৎকারে তার মুক্তিযুদ্ধের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা এবং স্মৃতি কথা তুলে ধরেন। বাফুফে সেই সাক্ষাতকারটি বাংলায় অনুবাদ করে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরণ করে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল এবং এর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্ট্রাইকার কাজী সালাহউদ্দিন জানান, "যখন আমরা কৃষ্ণনগরে বাংলাদেশের পতাকা প্রথম ওড়াই, তখন বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে স্বীকৃত ছিলনা। তাই আমরাই প্রথম যারা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করি। এটা ছিল অনেক আত্মতৃপ্তির। আমি গর্ববোধ করছি।" তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ এমন একটা জাতি যারা তাদের সংস্কৃতি, শিক্ষা ও খেলাধুলার জন্য যুদ্ধ করেছে। তাই এই ভাবমূর্তি আমরা ভারতসহ সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম। আপনি জানেন যে, খেলাধুলা বিশ্বে একটি বড় ভূমিকা পালন করে এবং যার মধ্যে ফুটবল হচ্ছে বিশ্বের এক নম্বর খেলা।" যুদ্ধের কঠিন দিনগুলির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমরা ২৫ জন একই রুমে থাকতাম, যাদের জন্য ১টি গোসলখানা ও ১টি টয়লেট ছিল। আমাদের খাবারের জন্য যে টাকা দেওয়া হতো তা দিয়ে আমরা কেবল দুবেলা খেতে পারতাম। আমি তখন যা করতাম তা হলো আমি খুব কঠোর পরিশ্রম করতাম, তারপর গোসল করতাম বেলা ১২ টার দিকে একবেলা খাবার খেতাম। সন্ধ্যা বেলা ৬.৩০ টার দিকে আমি দ্বিতীয়বার খাবার গ্রহণ করতাম। এই টাকার স্বল্পতাই আমাকে একজন ভালো ফুটবলার হতে সাহায্য করেছিল, কারণ আমি কঠোর পরিশ্রম করতাম।" স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের জনাকীর্ণ কৃষ্ণনগর স্টেডিয়ামে তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে। সেই দিনের কথা স্মরণ করে বাফুফের সভাপতি জানান, স্টেডিয়ামের বাইরে অনেক গাছ ছিল। সে গাছগুলোতে উঠে মানুষ খেলা দেখছিল। এছাড়া প্রতিটি বাড়ির ছাদ থেকেও খেলা দেখছিল। আমার তখন লম্বা চুল ছিল, সে যুগের বিটলস্ ও জর্জ বেস্ট এর মতো। এই ফ্যাশনটি তখন ভারতে প্রচলিত ছিল না। কিছু মানুষ আমাকে দেখে হাসি তামাশা করছিল এবং বলছিল এটা কি ছেলে না মেয়ে? আমার সহ খেলোয়াড়রা আমাকে বলছিল তোমাকে নিয়ে সবাই মজা করছে। আমি তখন বললাম এগুলো বাদ দিয়ে আমরা খেলায় মনোযোগী হই।" "আমি মারা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঐ দিনটি ভুলতে পারবো না। বাংলাদেশের পতাকা ঐ দিন প্রথম উত্তোলিত হয়েছিল। ঐ খেলার ফলাফল ছিল ২-২ ড্র। ঐ ম্যাচে আমি ১টি গোল পেয়েছিলাম। এরপর হতে আমরা আর ফিরে তাকাইনি। পরবর্তীতে আমরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে ১৬টি ম্যাচ খেলেছি। যেখানে আমরা খেলেছি সেখানেই ২০ থেকে ৪০ হাজার দর্শক থাকতো।" স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতে ১৬ টি ম্যাচের ১২ টিতে জয়লাভ করে। আগস্ট মাসে বাংলাদেশ দলের ২য় খেলা হয় শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল মোহনবাগানের বিপক্ষে। দ্বিতীয় খেলা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, সে সময়ের এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী ক্লাব ছিল মোহনবাগান। এই খেলার পর মোহনবাগান দল আমাকে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে খেলার আমন্ত্রণ জানায়, যা আমি প্রত্যাখ্যান করি। ৩য় ম্যাচটি বোম্বাই এ যেখানে বড় বড় তারকা উপস্থিত ছিল চমৎকার পরিবেশ। এতে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য টাকা সংগ্রহ করতে সমর্থ হই। খেলা শেষে তারা একটি পার্টির আয়োজন করে, সেখানে যাওয়ার জন্য আমার ভালো কাপড় ছিল না। তাই ট্র্যাকস্যুট পরে অনুষ্ঠানে যোগদান করি। যাতে তারা বুঝতে না পারে আমরা কতটা গরিব।" স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা। তিনি বলেছিলেন, “আমরা যে টাকা সংগ্রহ করেছি, তা আমাদের ম্যানেজার কলকাতায় মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে জমা দিয়ে আসতো, যা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমরা প্রতিনিয়ত করে এসেছি।" “আমরা যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম তা আমরা পেয়েছি। আমরা বিশ্বকে জানাতে চেয়েছি জাতি হিসেবে আমাদের ব্যক্তিত্ব কতটা উন্নত, জাতি হিসেবে আমরা কতটা শিক্ষিত। এই জিনিসটিই আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি," সালাউদ্দিন বলেন।
×