ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই ফাঁস হত মেডিকেলের প্রশ্ন

প্রকাশিত: ১৬:২৫, ২৩ জুলাই ২০২০

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই ফাঁস হত মেডিকেলের প্রশ্ন

অনলাইন রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই বারবার মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে সিআইডি। সিআইডি জানায়, সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে সাইবার পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন- জসিম উদ্দিন ভুইয়া মুন্নু, পারভেজ খান, জাকির হোসেন দিপু ও সামিউল জাফর সিটু। গত ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময়ে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের মূল হোতা জসিমের কাছ থেকে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করে সিআইডি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সাইবার ক্রাইমের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সুমন কুমার দাস। এ সময় সেখানে সাইবার ক্রাইমের ডিআইজি মো. শাহ আলমসহ সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এএসপি সুমন কুমার দাস জানান, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। এ ঘটনায় করা মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি, যার মধ্যে গ্রেফতার ছিল ৪৭ জন। তাদের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলা তদন্তকালে ২০১৮ সালে একটি চক্রের সন্ধান পায় সিআইভি। গত ১৯ জুলাই পুলিশ এস এম সানােয়ার হােসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিপিসির পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলামের তত্ত্বাবধায়নে একটি দল ওই দিনই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিন ভুইয়া মুন্না, পারভেজ খান ও জাকির হাসান দিপুকে গ্রেফতার করে। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাপাখানা থেকে মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করতো। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় ২০ জুলাই এজাহারনামীয় ১৪ জনসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে সিআইডি। তাদের মধ্যে জসিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২৭ লাখ সঞ্চয়পত্র, ২ কোটি ৩০ লাখ চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে। সুমন কুমার দাস বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বারবার ফাঁস হয়েছে। প্রেসের মেশিনম্যান সালাম এবং তার খালাতো ভাই জসিম মিলে দেশব্যাপী একটি চক্র গড়ে তুলেছিলেন। চক্রটির মাধ্যমে শত শত শিক্ষার্থী টাকার জোরে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হয়েছে। দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করেছে সিআইডির তদন্তকারী দল। সিআইডি আরও জানায়, ইতোমধ্যে মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন ভূইয়াসহ চক্রের ১১ সদস্য সিআইডির সাইবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এছাড়া অধিদফতরের ক্ষমতাবান কর্তাদের মদদে প্রেস থেকে বহু বছর ধরে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করতেন মেশিনম্যান আবদুস সালাম। তার খালাতো ভাই জসিমের কাজ ছিল সারাদেশে প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়া। এ জন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিল তার। দেশব্যাপী চক্রটির প্রায় অর্ধশত সহযোগীর খোঁজ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
×