ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মঞ্চায়নে হুমায়ূন

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৩ জুলাই ২০২০

মঞ্চায়নে হুমায়ূন

এটা পাগলামি হতে পারে না, এটা এক চূড়ান্ত দূর্তামী অন্তত পোস্টারের একপাশে কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সমান্তরাল একজন অচেনা-অজানা-অপ্রতিষ্ঠিত আসাদুল ইসলামের ছবি এঁটে দেয়া। এটা নিজেকে রাতারাতি প্রতিষ্ঠিত করার বাইরে কি অন্য কিছু ? তাও আবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির দৃশ্যমান চত্বরে। নাটকের নাম অপরের মুখ থেকে না শুনে, শুধু পড়ে বলব কিনা ‘নদ্দিউ নতিম’ সেও এক জটিল অঙ্ক। দলের নাম ম্যাড থিয়েটার। মেজাজটা কি ঠা-া থাকে। জীবনে পাগল আমরা কম দেখিনি কিন্তু ঘোষণা দিয়ে মঞ্চে পাগলামির দেখা এই প্রথম। হিসাব-নিকাশ শেষে উদ্বোধনী মঞ্চায়নের ছয় মাস অবসানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটি দেখতে বসা। গরমের পাগল, ঠা-ায় সুস্থ থাকার কথা। পাগলামির অভিনয় সারাটা বছর চালিয়ে নেয়া দক্ষ অনুশীলন ছাড়া সম্ভব নয়। হুমায়ূন আহমেদের ‘কে কথা কয়’ উপন্যাসের রূপান্তরিত নাটক নদ্দিউ নতিম। হুমায়ূন আহমেদের রচনা নাটকীয়, সংলাপ আরও নাটকীয়। রূপান্তরিত নাট্যকার আসাদুল ইসলামের সেখানে খুব বেশি করণীয় নেই। করার আছে, নিরাকার কল্পনার, আকার মঞ্চায়নে। একি দেখছি! ক্ষেত্র বিশেষ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত সাহিত্য বাজারে একজন কবি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে নিচ্ছেন আন্তর্জাতিক আবহে নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এবং তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলিকে চেপে ধরে দলিলে সই করিয়ে স্বীকৃতিনামার বদৌলতে। একটা মনোবিকার গ্রস্ত সময় বাস্তবতায় একটি প্রতিবন্ধী শিশুর মনের প্রতিবন্ধকতা হতে না দিতে চাওয়ায় এক সত্যের ধারক ও বাহক কবি, যেভাবে ঘ্রাণ ছড়ালেন পুড়ে পুড়ে, তাতে ভাবা গেল প্রতিভার পাগলামি না থাকলে এই সৃজন অসম্ভব। ব্যাধের ছোড়া তীরে স্ত্রী পাখি মারা গেলে পুরুষ পাখিটির যে বিলাপ তা বোঝাতেই তো মহাকবি বাল্মিকীর রচনা মহাকাব্য রামায়ণ। কমলের জন্য মতিন উদ্দিনের আত্মত্যাগই তো হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘কে কথা কয়।’ আর কন্যা আর্য মেঘ দূতের অভিনয় চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে সীমানার প্রাচীর অতিক্রম করতে কবি পিতা আসাদুল ইসলামের ঝাঁপিয়ে পড়াটাই মঞ্চনাটক ‘নদ্দিউ নতিম।’ কমল চরিত্রে আর্য মেঘদূত, কমল তথা পদ্মফুলের মতো বিস্ময় নিয়ে উপস্থাপিত। মুনা রূপ রূপবতী খ্যাত অভিনেত্রী সোনিয়া হাসান, আস্তরণে আস্তরণে আভিজাত্যের মোড়কে ঘেরা। আর অভিনেতা আসাদুল ইসলাম যেন নিষ্ঠুরভাবে ঝলসাতে ঝলসাতে প্রজ¦লিত উদ্ভাসিত সপ্তবর্ণের আলোক মালা। আলোকের এই ঝরণা ধারায় সারাদেশ হয়ে আগরতলা-গোহাটী-কলকাতা-লন্ডনের মঞ্চ অবগাহন করছে সে সবইতো আজ সবার জানা। জানা এবং জানানোর ক্ষেত্রে প্রভাত বেলায় অনেকের একজন হয়ে আমিও ছিলাম, ভাবতেই মন আনন্দে আনমনা। আজকের কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণ দিবসের আয়োজনে উপস্থিত অতিথি এবং অনুরাগী দর্শক-শ্রোতা যারা শুনছেন সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং ম্যাড থিয়েটারের ডাক পেয়ে প্রকাশ করছি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। রইল নদ্দিউ নতিম পুনঃ দেখার তীব্র ব্যাকূল অপেক্ষা।
×