ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রানজিট সুবিধা চালু

আজ ভারতীয় পণ্যের প্রথম চালানের ডাল ও রড আগরতলায় পৌঁছবে

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২৩ জুলাই ২০২০

আজ ভারতীয় পণ্যের প্রথম চালানের ডাল ও রড আগরতলায় পৌঁছবে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ট্রানজিট সুবিধার আওতায় ভারতের কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্যের প্রথম চালানটি স্থলপথে আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছেছে। বুধবার ভোররাতেই পণ্য বোঝাই চারটি কন্টেনার আখাউড়ায় পৌঁছে যায়। বহুল প্রতীক্ষিত ট্রানজিটের এ পণ্য আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে আগরতলায় আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবে সে দেশের কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক জনকণ্ঠকে জানান, রড ও ডালবোঝাই এ চারটি কন্টেনার মঙ্গলবার রাতেই জাহাজ থেকে নামিয়ে স্থলপথে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের দেশের পরিবহনেই এগুলো আখাউড়া পর্যন্ত পরিবাহিত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই নিশ্চিত করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ এ চালানের ওপর আরোপিত চার্জ গ্রহণ করেছে। কলকাতা থেকে আসা জাহাজ এমভি সেঁজুতির এজেন্ট ম্যাঙ্গো শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান জানান, ভারতের পণ্য নিয়ে আসা জাহাজটি ভিড়ে চট্টগ্রাম বন্দর এনসিটির এক নম্বর জেটিতে। বহির্নোঙরে থাকতেই কাস্টমসের সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়। কন্টেনার চারটি আনলোড করে রাতে তোলা হয় আমাদের দেশী প্রাইম মুভারে। ভোরের দিকে তা আখাউড়ায় চলে যায়। সীমান্ত অতিক্রম করেছে কিনা এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এক্ষেত্রে ভারতের আগরতলায় কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ট্রানজিটের প্রথম চালানটি গ্রহণ করা হবে। এদিকে, ভারতকে স্থলপথে পণ্য পরিবহনের ট্রানজিট প্রদান করায় বাংলাদেশের আর্থিক লাভ কেমন হচ্ছে তা নিয়ে রয়েছে নানামুখী আলোচনা। চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টমস ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রথম চার কন্টেনারে বাংলাদেশ সরকারের আয় হয়েছে প্রায় ৫৯ হাজার টাকা, যা বিদেশী মুদ্রায় প্রায় ৭শ’ ডলার। এছাড়া পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বেসরকারী খাতের আয় হবে আরও বেশি। ম্যাঙ্গো শিপিং লাইন্স কর্তৃপক্ষ জাহাজ ও গাড়ি ভাড়া বাবদ আয় করেছে ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। চার কন্টেনার পণ্য থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের আয় প্রায় ৩১ হাজার টাকা। মাসুল ও মূল্য সংযোজন কর হিসাবে এই আয়। এছাড়া কাস্টমস কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে কিছু বাড়তি মাসুল। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, প্রথম এ জাহাজে এসেছে ২২১টি কন্টেনার। এরমধ্যে চারটি কন্টেনার ট্রানজিটের। বাকি কন্টেনারগুলোতে রয়েছে বাংলাদেশী আমদানিকারকদের পণ্য। ট্রানজিটের চার কন্টেনারের দুটিতে রয়েছে রড, যা আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে যাবে ত্রিপুরার জিরানিয়ায়। পণ্যগুলো ভারতের প্রতিষ্ঠান এসএম কর্পোরেশনের। বাকি দুটি কন্টেনারে ডালসহ ভোগ্যপণ্য। এগুলো যাবে আসামের করিমগঞ্জে। পণ্যগুলো গ্রহণ করবে সেখানকার প্রতিষ্ঠান জেইন ট্রেডার্স। ভারতীয় পণ্যের ট্রানজিট/ট্রান্সশিপমেন্টের ক্ষেত্রে কী ধরনের চার্জ নেয়া হবে তা ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় কনসাইনমেন্টে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি টন প্রতি ৩০, নিরাপত্তা চার্জ টন প্রতি ১০০, এসকর্ট চার্জ টন প্রতি ৫০, অন্যান্য প্রশাসনিক চার্জ ১০০ এবং প্রতি কন্টেনার স্ক্যানিং চার্জ ২৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ইলেকট্রিক লক, সিল ইত্যাদির জন্য ভিন্ন চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর এ কাজের জন্য তাদের নির্ধারিত শুল্ক পাবে। বন্দর পাবে পণ্য ওঠানামার মাসুল, রিভার ডিউজ, পোর্ট ডিউজসহ কিছু চার্জ। এ আয় নির্ভর করছে কন্টেনারে কী পরিমাণ পণ্য থাকে তার ওপর। ট্রানজিটের পণ্য সড়ক পথে পরিবাহিত হবে বাংলাদেশের পরিবহন দিয়ে। এই পরিবহনের বিপরীতে ভাড়া পাবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহ, যা হবে প্রতি কন্টেনারে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রামে আসার ৭ দিনের মধ্যে পণ্য খালাস করে নিয়ে যাবে ভারত। বন্দরের নিয়মানুযায়ী পণ্য এসে পৌঁছাবার পর চারদিন বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পাওয়া যাবে। কোন কারণে এ সময়ের মধ্যে ট্রানজিটের পণ্য বন্দর থেকে নেয়া না গেলে সময় বাড়াতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কাস্টমসের কাছে আবেদন করা যাবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলায় যাবে রড ও ডাল। বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের চুক্তি অনুযায়ী ট্রানজিটের প্রথম চালানের পণ্য বুধবার আখাউড়া স্থল বন্দরে এসেছে। যাওয়ার কথা থাকলেও ‘আনুষ্ঠানিকতার’ মধ্যদিয়ে বৃহস্পতিবার আখাউড়া ও আগরতলা স্থলবন্দরের শূন্যরেখায় ত্রিপুরার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব উপস্থিত থেকে চালান গ্রহণ করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই একদিন পেছানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ভারতীয় পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ব¡াধিকারী মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, বুধবার পণ্যগুলো আগরতলায় পাঠানোর জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া ছিল। কিন্তু ভারতীয় হাইকমিশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে এদিন পণ্য গ্রহণ করা হবে না, বৃহস্পতিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হবে। এ আনুষ্ঠানিকতায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন’। আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার কাজী ইরাজ ইশতিয়াক বলেন, ‘ভারতীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। পণ্য পরিবহনের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে মাসুল নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরেই মাসুল আদায়ের বিষয়গুলো সম্পাদিত হবে’।
×