ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সওজ প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে কাদের

ঈদযাত্রায় যানজটে বৃষ্টি যেন অজুহাত হিসেবে না আসে

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৩ জুলাই ২০২০

ঈদযাত্রায় যানজটে বৃষ্টি যেন অজুহাত হিসেবে না আসে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি ও বন্যার মধ্যে জনস্বার্থে সরকার গণপরিবহন চালু রেখেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঈদযাত্রা যে কোন মূল্যে নির্বিঘœ করতে হবে। কোনভাবেই যেন মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত না হয়। যানজটের জন্য বৃষ্টির দোহাই দেয়া যাবে না। বুধবার আসন্ন ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নবনির্মিত ভবনে দেশের সড়ক-মহাসড়কের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকৌশলীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব নির্দেশ দেন। নিজের সরকারী বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সভায় যুক্ত হন মন্ত্রী। মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে ঈদের আগে ও পরে ১৪ দিন ফ্লাইওভার এবং আন্ডারপাসসহ চলমান কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী এক আগস্ট ঈদ উদযাপিত হবে। অর্থাৎ ঈদ উৎসবের ঠিক নয়দিন আগে এ রকম নির্দেশনা এলো। যদিও সওজের দাবি তারা অনেক আগে থেকেই সড়ক মেরামতের কাজে নেমেছে। তবে ঈদ যাত্রার অন্যতম পয়েন্ট বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বেশিরভাগ সড়কের এখনও বেহাল দশা চলছে। বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পের কাজের কারণে বেশিরভাগ সড়ক এখন ভেঙ্গে চুড়ে খানখান। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণেও দুর্ভোগ তো আছেই। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে অতিবৃষ্টিতে সড়ক ডুবে থাকা। ফলে এক লেনে যানবাহন চলতে হচ্ছে। চলমান দুর্ভোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনুমোদনহীন যানবাহনের ইচ্ছেমতো চলাচল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগে এই সড়কটির প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে দুর্ভোগ কোন অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এখনই বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর পাড়ি দিতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। এবার এক কঠিন বাস্তবতায় ঈদ উদযাপন হতে যাচ্ছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, একদিকে বৈশ্বিক মহামারী করোনা, অন্যদিকে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়া বন্যা। সরকার নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে গণ চলাচল অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সড়ক-মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা, সুরক্ষা এবং তাৎক্ষণিক মেরামতে অতীতের মতো সড়ক ও জনপদ বিভাগকে অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। জনগণের ঈদযাত্রা করতে হবে নির্বিঘœ। এ সব সমস্যা সমাধানে আসন্ন ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, একেক জোনের বাস্তবতা একেক রকম। গাড়ির চাপ মহাসড়কভেদে ভিন্ন। তাই আমি চাই আপনারা জোনভিত্তিক ও আন্তঃজোনভিত্তিক সমন্বয় করে পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। মহাসড়কে যান চলাচলে যাতে বিঘœ না ঘটে তা আগে থেকেই মেরামত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত সড়ক-মহাসড়কের খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং যে কোন মূল্যে সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। ঈদের আগের সাতদিন এবং পরের সাতদিন ফ্লাইওভার এবং আন্ডারপাসসহ চলমান কাজ বন্ধ রাখতে হবে। ভুলতা, নবীনগর, চন্দ্রা, গাজীপুরের মতো রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথগুলোতে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আগে থেকেই খেয়ালে রেখে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক বা কমিউনিটি পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বন্যার পানি প্রবাহ এবং গাড়ির অত্যাধিক চাপের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর প্রতি নজর রেখে বিকল্প পথ ঠিক রাখার আহ্বানও জানান সেতুমন্ত্রী। সড়ক-মহাসড়কে যাতে পশুর হাট না বসে সেজন্য প্রত্যেক জোন, সার্কেল ও বিভাগকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, গ্রামমুখী মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে প্রচার বাড়াতে হবে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে সড়ক-মহাসড়ক এখন ভাল আছে দাবি করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি বাড়িয়েছে অবিরাম বৃষ্টি। চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে অতীতের মতো এবারও সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। সড়ক ও মহাসড়ক অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহরিয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সবুজ উদ্দিন খানসহ অন্য উর্ধতন কর্মকর্তারা সভায় অংশ নেন। ঈদে ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘœ করতে সড়ক প্রকৌশলীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, ঈদযাত্রায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির পাশাপাশি অবিরাম বর্ষণ ও বন্যাকে আরেকটি নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ঈদে কর্মস্থল ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। তাই সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করুন। তিনি বলেন, যে সব এলাকায় তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা রয়েছে, সেসব এলাকায় ঘরমুখো যাত্রীদের বাড়তি চাপ মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে সমন্বয় করে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণে মন্ত্রী সওজ’কে নির্দেশ দেন। করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি ও বন্যার মধ্যে জনস্বার্থে সরকার গণপরিবহন চালু রেখেছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে হবে। মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হবে না। যানজটে বৃষ্টি যেন অজুহাত হিসেবে না আসে।
×