ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৩ জুলাই ২০২০

লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র জিলহজ মাসের পহেলা তারিখ। জিলহজ মানে হজের স্মৃতিবাহী মাস। দু’মাস আগে আমরা বার্ষিক প্রধান উৎসব ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করেছি। এ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদ-উল-আজহা বা কোরবানি দিবস। এ বছর ঈদ-উল-ফিতর, হজ ও ঈদ-উল-আজহা সবই করোনাভাইরাসের নির্মম করালগ্রাসে আক্রান্ত। অনেকটা নিরানন্দ ও গতানুগতিক ধারায় পালিত হচ্ছে। তবুও ঈদকে যদি ইবাদত মনে করি আমাদের করণীয় আছেই। এটি বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর হক। এছাড়া জিলহজের প্রথম দশ দিন আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। আমরা এ কয়দিনের ধারাবাহিক কলামে সেসব বিষয় নিয়ে উদ্দীপ্ত হব। বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ ইবনে মাজাহতে উল্লেখ আছে, জনৈক সাহাবা হুজুরকে (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল কোরবানি কী? তিনি জানালেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নাত।’ সাহাবী ফের জানতে চাইলেন, এটি পালন করলে আমরা কী পাব? প্রত্যেকটি চুলের বিনিময়ে একটি করে নেকি লাভ করবে।’ বস্তুত ঈদ-উল-আজহাতে আমরা যে পশু কোরবানি দেই তা ইব্রাহীম ও ইসমাঈলের (আঃ) ত্যাগ ও উৎসর্গেরই প্রতিফলন। আল্লাহু সুবাহানাহু তায়ালা তার প্রিয় বান্দা ইব্রাহীম নবীকে প্রাণের চেয়েও প্রিয় বস্তুটি কোরবানি দানের হুকুম দেন। ইব্রাহীম তার বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র প্রাণাধিক প্রিয় দুলাল ইসমাঈলকে কোরবানি দিতে সিদ্ধান্ত নিলেন। নবীর পুত্র ইসমাঈল ছিলেন পিতার মতোই ইমানে পরিপক্ব, দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। তিনি জানিয়ে দিলেন, বাবা আমার! প্রাপ্ত হুকুম মতো আপনি কাজ করুন। ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন।’- (সাফফাতঃ ১৩২)। এদিকে আল্লাহ কখনও একটি তরতাজা সম্ভাবনাময় শিশুর অকাল মৃত্যু চাননি, তিনি নিতে চেয়েছিলেন শুধু ইব্র্রাহিমের অন্তরের পরীক্ষা। তাই যখনই ইব্রাহিম সন্তানকে কোরবানির জন্য শুইয়ে দিলেন আর সজোরে গলার নরম স্থানে চালালেন শাণিত ছুরি, আল্লাহ ডাক দিলেনÑ থামো ইব্রাহিম! তোমার স্বপ্নকে তুমি বাস্তবে রূপ দান করলেÑ।’ সত্যি সত্যিই ইব্রাহিম দেখলেন ছুরির নিচে ইসমাঈলের বদলায় একটি বেহেস্তি দুম্বা কোরবানি হয়ে আছে। নবী ইব্রাহীমের সে পুতঃ ত্যাগ স্মরণে প্রতি বছর সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানি দেন। এ ক্ষেত্রে নিছক পশু জবাই বড় কথা নয়, কোরবানিদাতার ঐকান্তিক নিষ্ঠা, একাগ্রতা, আল্লাহকে ভয় করার মাঝেই রয়েছে কোরবানির মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। আমাদের উচিত হবে হজ ও কোরবানিসহ নানা আমলে সালিহর মাধ্যমে যথাসম্ভব এ মাসের মর্যাদা রক্ষা করা এবং এর ফজিলত অর্জনের মাধ্যমে নিজের জীবনকে পরিশুদ্ধ করা। আমলে সালিহ বা সৎকর্ম বলতে এখানে আমরা নফল নামাজ আদায়, নফল রোজা রাখা, জিকির আসকার, তিলাওয়াত তাসবিহ ও দান সাদকাকে বোঝাচ্ছি। আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা কোরান মাজিদের ৩০তম পারায় সূরা আল ফজরের প্রারম্ভে শপথ করে বলেছেন : শপথ ফজর বেলার, শপথ দশটি রাতের, শপথ জোড় (দিনÑরাত) এর...। বিশ্ববিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ জালালাইন শরীফে (উপরোক্ত) দশটি রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতকেই উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ পাকের গুরুত্বপূর্ণ শপথ বাক্য থেকে জিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের মহা ফজিলত ও মর্যাদা প্রমাণিত হয়। হুজুরে আকরাম (সঃ) এর উদ্ধৃতি দিয়ে মহান সাহাবী হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) বলেন, জিলহজের এই দশদিনের তুলনায় আর কোনদিনের নেক আমলই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম তখন জানতে চাইলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সঃ) এমনকি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাও কি এই দশদিনের সমান নয়? হুজুর (সঃ) বললেন, না।’ তবে একমাত্র ঐ ব্যক্তি যে নিজের প্রাণ ও সমূদয় সম্পদ নিয়ে জিহাদে বের হলো অতঃপর সে আর কিছু নিয়েই ফিরে আসতে পারেনি। (বুখারী , মিশকাত)। জিলহজ মাসের দশদিনের সম্মানকারীকে আল্লাহ দশটি বোযর্গী দান করেন। যেমন: ১) তার আয়ু বৃদ্ধি পায়; ২) ধনÑদৌলত বর্ধিত হয়; ৩) আল্লাহ তার পরিবারÑপরিজনকে দেখাশোনা করেন; ৪) তার অন্যায় অপরাধ ক্ষমা করে দেন; ৫) পুণ্য দ্বিগুণ করেন; ৬) মৃত্যুকষ্ট লাঘব করেন; ৭) অন্ধকারে আলো দান করেন; ৮) পুণ্যের পাল্লা ভারি করে দেন; ৯) দোযখ হতে মুক্তিদান করেন এবং ১০) তার জন্য বেহেশতের দরজা উন্মুক্ত করে দেন। -(গুনিয়া)। আল্লাহ আমাদেরকে এ মাসের যথাযথ মর্যাদা দানের মাধ্যমে আমাদের ইহকাল, পরকাল, নিষ্পাপ ও মঙ্গলময় করার তওফিক দান করুন। আমরা যেন এ পবিত্র দিনগুলোতে কথা-কাজে, চিন্তা-চেতনায় আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর পেয়ারা হাবিব হুজুরে কারিম (সঃ) এর রিজামন্দি হাসিলের জন্য কৃত সংকল্প হই। স্বাগত জানাই এ মাসের নির্ধারিত অনুষ্ঠান পবিত্র হজ ও কোরবানিকে।
×