ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন ॥ ১৫০০ কোটি বিনিয়োগে চিন্তায় ভারত

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২২ জুলাই ২০২০

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন ॥ ১৫০০ কোটি বিনিয়োগে চিন্তায় ভারত

অনলাইন ডেস্ক ॥ ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নিরাপদ এবং করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট। ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নালে এই সংবাদ প্রকাশের পরপরই ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা সেরামের সিইও আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, সামনের আগস্টেই ভারতে মানুষের শরীরে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হবে। আর তারা গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত খুবই অল্প সময়ে-মাত্র ৩০ মিনিটে। এই ভ্যাকসিনের আনুমানিক দাম ধরা হয়েছে ১০০০ টাকা। ইতোমধ্যে তারা ১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছে। আর এতেই চিন্তায় পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাটি। সেরামের সিইও পুনাওয়ালা বলছেন, ‘এখনো সম্পূর্ণ টেস্ট হয়নি এমন একটা ভ্যাকসিনের জন্য প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা লাগিয়েছি আমরা। যদি পরের পর্যায়গুলোর ট্রায়াল সফল না হয়, তাহলে পুরো স্টক নষ্ট করে ফেলতে হবে। অর্থাৎ পুরো ১৫০০ কোটি টাকা পানিতে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছিল এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাই আমরা মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ট্রায়ালের আগেই আমরা তার জন্য ১৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশের মানুষের জন্যই এই ঝুঁকিটা নিয়েছি আমরা।’ ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে এ ভ্যাকসিন তৈরি করেছে অক্সফোর্ড। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে চুক্তি করে ভারতে অক্সফোর্ডের ফর্মুলায় ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করছে পুণের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। তার জন্য ১৫০০ কোটি টাকার চুক্তি করেছে তারা। তবে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের বিষয়ে ল্যানসেটে সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই সেরামের সিইও আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছিলেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ইতিবাচক ফল মিলেছে বলেই খবর এসেছে। ব্রিটেনে অক্সফোর্ডের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের প্রতি পদক্ষেপের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। সবুজ সংকেত মিললেই ভারতে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হবে মানুষের শরীরে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওষুধ তৈরির সংস্থা সেরাম জানিয়েছে, ভারতের প্রতিটি মানুষকে ভ্যাকসিনের টিকা দিতে অন্তত দুই বছর সময় লাগতে পারে। সোমবার প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট সামনে আনে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকা। ওই রিপোর্টে জানানো হয়, দুই পর্যায়ে এক হাজার ৭৭ জনকে এই টিকা দেয়া হয়েছিল। দুটি দলে ভাগ করে একটি দলকে ভ্যাকসিনের একটি ডোজ ও অন্যদলকে নির্দিষ্ট দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ দেয়া হয়। দেখা গেছে, যাদের একটি ডোজ দেয়া হয়েছিল তাদের ৯০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তবে ইতিবাচক দিক হলো এই ভ্যাকসিন শুধু অ্যান্টিবডিই তৈরি করছে না; দেহকোষের টি-কোষকেও সক্রিয় করে তুলছে। এই টি-কোষ হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধের মূল অস্ত্র। সাধারণত ভ্যাকসিনে কাজ হলে ইনজেকশন দেয়ার ১৪ দিনের মাথায় টি-কোষ সক্রিয় হয়ে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলতে শুরু করে। বি-কোষ সক্রিয় হয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি করে ২৮ দিনের মাথায়। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনও তাই করেছে। সেরামের সিইও আদর পুনাওয়ালা বলেছেন, যেকোনো ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে প্রথম পর্যায়ের রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রিপোর্ট দেখেই বোঝা যায় ভ্যাকসিন আগামী দিনে কতটা কার্যকরী হবে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে সেই আশা জেগেছে। তাই আর দেরি না করে আগস্টেই হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করার জন্য ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমতি চাওয়া হবে। এক বছরের মধ্যে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রায় ১০০ কোটি ডোজ তৈরির পরিকল্পনা আছে বলেও জানিয়েছেন সেরামের সিইও। তিনি বলেছেন, মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রভাব কার্যকরী প্রমাণিত হলেই প্রতি মাসে এক কোটিরও বেশি ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরি শুরু হয়ে যাবে। কাজ করবে পুণের দুটি ফার্ম। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি শনাক্ত হয়। এর পর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষকে আক্রান্ত এবং ৬ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কাড়লেও এখন পর্যন্ত এর কোনও ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। সূত্র : দ্য ওয়াল ডট ইন
×