ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আয়ান আব্রাজ

অবসরের পর শারাপোভার দিনকাল

প্রকাশিত: ০১:৪১, ২২ জুলাই ২০২০

অবসরের পর শারাপোভার দিনকাল

চলতি বছরের শুরুতেই অবসরের ঘোষণা দেন মারিয়া শারাপোভা। ৩২ বছর বয়সেই টেনিস থেকে সরে দাঁড়ান পাঁচবারের গ্র্যান্ডস্লামজয়ী বিশ্বের সর্বাধিক অর্থ উপার্জনকারী এই ক্রীড়াবিদ। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ডোপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে ১৫ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হবার আগেও তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডস্লাম জিতে নিজেকে প্রকৃতি প্রদত্ত সেরা খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। তবে রাশিয়ার সাবেক এই এক নম্বর টেনিস তারকার গোধূলিবেলার পারফর্মেন্স ছিল একেবারেই নিষ্প্রভ। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩৭৩ নম্বরে ছিলেন তিনি। ইনজুরি আর ফর্মহীনতার কারণেই টেনিস থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন রুশ সুন্দরী। কাঁধের সমস্যার কারণে গত এক বছর ধরে কঠিন সময় পার করছিলেন তিনি। মাঠে নেমে কিছু কিছু খেলায় জয় পেলেও হেরেছেন প্রচুর ম্যাচে। মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও দেখা যায় তার বাজে পারফর্মেন্স। প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন তিনি। যে কারণেই টেনিসকে বিদায় বলার সিদ্ধান্ত নেন রাশিয়ান টেনিসের এই গ্ল্যামারগার্ল। শারাপোভার অবসরের পরপরই বিশ্বব্যাপী দেখা দেয় করোনাভাইরাসের প্রভাব। করোনাভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে ঘরে থাকার আহ্বান জানান জনপ্রিয় ক্রীড়া তারকারা। কিন্তু ঘরবন্দি থাকতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেন মানুষ। স্থবির এই সময়ের চূড়ান্ত বিরক্তি কাটাতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন মারিয়া শারাপোভা। শত শত অচেনা ভক্তদের সঙ্গে ভিডিও চ্যাটে কথা বলছেন তিনি। উন্মুক্ত করে দেন নিজের মোবাইল ফোন নম্বর! কোটি কোটি ভক্তদের আবদারের উৎপাতে তারকারা সাধারণত নিজেদের গুটিয়েই রাখেন। শারাপোভা সেদিক থেকে একেবারেই ভিন্ন ধরনের এক উদ্যোগ নেন। নিজের স্বীকৃত ইন্সটাগ্রাম এ্যাকাউন্টে চমক নিয়ে আসেন এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় এই টেনিস তারকা। শারাপোভা বলেন, ‘এই সময়ে আমি আমার ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। এক সপ্তাহে ১৫০ জনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছি। দারুণ ছিল ভিডিও চ্যাটিং। আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা পৃথিবীর মানুষ এখন শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছি। আমি তাই ভক্তদের সঙ্গে আরও যুক্ত থাকতে চাই, আপনারা কী ভাবছেন সেটা আমাকে জানান। আমি আমার ফোন নম্বরটা আপনাদের দিয়ে দিচ্ছি। আপনারা আমাকে মেসেজ করতে পারবেন, আমি সরাসরি এটা পাব এবং জবাব দেব।’ শুধু তাই নয়, করোনা সংক্রমণের কারণে সারা দুনিয়ায় এখনও টেনিস খেলা বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে ভার্চুয়াল টেনিসও খেলেছেন শারাপোভা। ঘরে বসেই খেলেছেন। যার নাম দেয়া হয় ‘স্টে এ্যাট হোম স্ল্যাম’। অংশ নেন উইলিয়ামস বোনেরাও। এছাড়া আছেন ডিজে, সিঙ্গার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সেলিব্রেটিসহ ৮ শীর্ষ তারকা। এই ভার্চুয়াল টেনিস টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন অর্জিত পুরস্কার মূল্য ১ মিলিয়ন ডলার দান করা হয় ‘নো কিড হাংগ্রি’ নামের একটি সংস্থাকে। যারা আমেরিকায় ক্ষুধার্ত শিশুর মুখে খাদ্য তুলে দেয়। সাইবেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করা শারাপোভা প্রথম র‌্যাকেট হাতে নেন চার বছর বয়সে। সোচিতে। ১৯৮৬ সালে চেরোনোবিল ধ্বংসযজ্ঞের সময় তার বেলারুশের বাবা-মায়ের সঙ্গে সেখান থেকে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি জয় করেন উইম্বলডন শিরোপা। তৃতীয় কমবয়সী হিসেবে ঘাসযুক্ত কোর্ট থেকে এই শিরোপা জয় করেছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে ১৮ বছর বয়সে ইউএস ওপেন জিতে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ স্থান দখল করেন এই রুশ কিশোরী। তার সফলতার পেছনের কারণ হিসেবে মাশা বলেন, ‘আমার সফলতার অন্যতম কারণ হচ্ছে আমি কখনও পেছন ফিরে তাকাই না। আবার সামনের দিকেও তাকাই না। আমি বিশ্বাস করি বার বার নিষ্পেষণ করতে পারলে আমি নিজেকে অসাধারণ অবস্থানে নিয়ে যেতে পারব।’ ২০০৭ সাল থেকে মাঠে ও মাঠের বাইরে কাঁধের ইনজুরির সঙ্গে লড়াই শুরু হয় শারাপোভার। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ছিল তার। কিন্তু মৌসুমের দ্বিতীয় রাউন্ডে ইনজুরির কারণে লড়াই থেকে সরে যেতে বাধ্য হন তিনি। এ সময় তিনি অংশ নিতে পারেননি ইউএস ওপেন ও বেজিং অলিম্পিকে। ২০১২ সালে ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জয় করেন শারাপোভা। এর মাধ্যমে ১০ম নারী হিসেবে পাঁচটি গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের নজির গড়েন তিনি। একই বছর সাইবেরিয়ায় জন্ম নেয়া এই নারী জয় করেন অলিম্পিকের রৌপ্য পদকও। শারাপোভা বলেন, ‘আমি টেনিসকে আমার জীবন দিয়েছি, আর টেনিস আমাকে জীবন দিয়েছে। টেনিসকে আমি প্রতিদিন মিস করি। মিস করি আমার প্রতিদিনের রুটিন এবং অনুশীলন।’
×