ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতের গরু-মহিষ

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ২২ জুলাই ২০২০

কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আসছে ভারতের গরু-মহিষ

রাজুমোস্তাফিজ,কুড়িগ্রাম ॥ সীমান্ত এলাকার গরুর হাটগুলোতে অবৈধ পথে আনা ভারতীয় গরু-মহিষ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। নদীপথে ভারতীয় সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে পাচার হয়ে আসছে এসব গরু-মহিষ। পরে সীমান্তের হাটে বিক্রির জন্য সারিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। ভারতীয় এসব পশুর কারণে দেশীয় খামারিরা পশুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গরুর পাচার রোধে সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদে প্রতিদিন ভেসে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ। দৈ খাওয়া, সাহেবের আলগা, নারায়ণপুর, রলাকাটা, কচাকাটাসহ কয়েকটি সীমান্তে নদীপথে পশু পাচার করছে দু’দেশের চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। বন্যার সুযোগে এবং কোরবানিকে কেন্দ্র করে বেড়েছে পাচার। পরে সীমান্তবর্তী যাত্রাপুরসহ কয়েকটি হাটে চিহ্নিত ভারতীয় গরু-মহিষ বিক্রির জন্য সারিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা তুলনামূলক সস্তায় এসব পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বন্যার কারণে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রচুর গরু-মহিষ বাংলাদেশে ভাসিয়ে পাচার করছে চোরাকারবারিরা। যাত্রাপুর হাটে ৫০-৬০ জন ভারতীয় গরুর কারবার করেন। শনি ও মঙ্গলবার যাত্রাপুর হাট বসে। প্রতি হাটে ৪০০-৫০০ ভারতীয় ছোট গরু (বাছুর) ও ২০০-৩০০ বড় গরু ও মহিষ ওঠে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাত্রাপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় পুরো হাট কাদায় থৈ থৈ। এরই মধ্যে গরু বেচাকেনা হচ্ছে। অবশ্য ভারতীয় বড় গরু ও মহিষগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে টিনের চালাঘরে। আর দেশী গরুসহ ভারতীয় ছোট গরুগুলো খোলা আকাশের নিচে বেচাকেনা হচ্ছে। ভারতীয় গরুর গায়ের এক ধরনের বিশেষ চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছে। পাচারকালে নদীতে গরু ভাসিয়ে দেয়ার আগেই গরুর মালিকের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে এসব চিহ্ন দেয়া হয়। ব্রহ্মপুত্রের চর কালির আলগার গরু ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, ‘সারারাত বর্ডারে থাকি। নদী পথে ইন্ডিয়ার ব্যবসায়ীরা গরু ভাসিয়ে দেয়। নৌকা বা কলাগাছের ভেলায় কামলারা অপেক্ষা করে। তারপর গরু ধরে আমাদের বুঝিয়ে দেয়। আমরা কমিশনের ব্যবসা করি। বিক্রি করে টাকা পাঠিয়ে দেই।’ তিনি জানান, গরুর গায়ে চিহ্ন দেখে মালিকানা সম্পর্কে নিশ্চিত হন তারা। একজোড়া গরু ধরে বুঝিয়ে দেয়ার পর কামলা বা রাখালদের ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক দেয়া হয়। যাত্রাপুরের গরু ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান জানান, গরু ভেসে আসার সময় স্রোতের কারণে অনেক গরু মরে যায়। আবার আধমরা গরু চরের মানুষ ধরে জবাই করে ভাগাভাগি করে নেয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী ভুট্টু মিয়া জানান, গত বছরের চেয়ে ভারতীয় গরুর দাম অনেক কম। গত বছর যে গরু কিনেছেন এক লাখ টাকায়, এ বছর তা ৭০-৮০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। করোনার কারণে ক্রেতা স্বল্পতার কারণে কম দামে গরু কিনেও পোষাতে পারছেন না তারা। অবশ্য যাত্রাপুর হাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি জনি শেখ দাবি করেছেন, সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে পাচার কমে গেছে। যেসব গরু দেখা যাচ্ছে, তা অনেক আগেই ভারত থেকে আনা। খামারিরা লালন পালন করে হাটে তুলছেন। এদিকে বিজিবি মাঝেমধ্যে গরু আটক করলেও থেমে নেই পাচার। গত জুন মাসে বিজিবি ১৬৮টি গরু আটক করে। দুদিন আগে আটক করা হয় ২৫টি গরু। বিজিবির ২২ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জামাল হোসেন জানান, কোরবানির সময় বন্যা হওয়ায় পাচারকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বন্যার কারণে বিএসএফ ও বিজিবির পক্ষে অনেক পোস্টে সব সময় অবস্থান করা সম্ভব হয়না। সেই সুযোগে গরু পাচারের চেষ্টা হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম জানানা, সীমান্তপথে ভারতীয় গরু পাচার রোধে বিজিবি, পুলিশসহ প্রশাসনের পক্ষ সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে।
×