ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে ৯ আগস্ট

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ২০ জুলাই ২০২০

অবশেষে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে ৯ আগস্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার ছোবলে সঙ্কটে পড়া শিক্ষা ক্যালেন্ডারের বিপদ কাটাতে অবশেষে শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণীর ভর্তি প্রক্রিয়া। করোনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের অন্তত তিন মাস পিছিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃ শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ৯ আগস্ট থেকে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এই সময়ের মধ্যে তিন ধাপে আবেদন ও ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ আবুল খায়ের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর সময়সূচীর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে অনলাইন ভর্তির কার্যক্রম আগামী ৯ আগস্ট রবিবার থেকে শুরু হয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার শেষ হবে। ভর্তির যাবতীয় তথ্য শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সভাপতিত্বে এক অনলাইন মিটিংয়ে রবিবার এ সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক, আন্তঃ শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে যেন সমাস্যা না হয় সেদিকে প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া তিনি বলেন, কোভিড নাইনটিনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই হয়ত ভর্তির ফি একসঙ্গে দিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তারা যেন কিস্তিতে ভর্তি ফি দিতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। আন্তঃ শিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, অনেক সময় চলে গেছে। আসলে শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করাটাই আমাদের অগ্রাধিকার। আগামী ৯ আগস্ট থেকে আমরা কলেজ ভর্তির আবেদন শুরু করব। সম্পূর্ন অনলাইনে চলবে আবেদন প্রক্রিয়া। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষ করব। আবেদনের শেষ সময় সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, আবেদনের শেষ সময়সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তারিখ সোমবার (আজ) বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ড জানিয়ে দেবে। চেয়ারম্যান জানান, গত বছরের মতো এবারও তিন ধাপে আবেদন ও ভর্তির জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ফলে তিন দফায় আবেদনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তিন ধাপে তালিকা প্রকাশ করা হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে ১৫ সেপ্টেম্বর। প্রাণঘাতী করোনার ছোবলের এক উদ্বেগজনক প্রেক্ষাপটে গত ৩১ মে প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার রীতিমতো আকাশচুম্বী সাফল্য অর্জন করেছিল শিক্ষার্থীরা। করোনার কারণে স্বাভাবিক সময়েরও বেশ কিছুদিন পরে এবার প্রকাশ করা হয় ফল। এবার পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তি বৃদ্ধি, ছেলেদের পেছনে ফেলে মেয়েদের সামনে চলে আসা, ঝরে পড়া কমে যাওয়া, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি ও শতভাগ ফেল করা স্কুল কমে যাওয়া থেকে শুরু করে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে ফলাফলের সব সূচকে। পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছরেই সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৩০৪ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৯৪ জন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করেন। এরপর সচিবালয় থেকে ফেসবুক লাইভে মাধ্যমিকের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি। এবার ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন পাস করেছে। নয়টি সাধারণ বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, মাদ্রাসা বোর্ডের দাখিলে ৮২ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনালে ৭১ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। প্রতিবছর ফল প্রকাশের এক সপ্তাহ পরে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এবার সেভাবেই শিক্ষা বোর্ডগুলো ৬ জুন থেকে অনলাইনে কলেজ ভর্তি শুরু করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আটকে যায় প্রক্রিয়া। জানা গেছে, এ বছর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী ও বিকেএসপি কোটা বহাল থাকছে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও ব্যয় কমাতে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। শুধু অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০ প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ভর্তিতে আবেদন ফি ও ভর্তি ফি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ভর্তির সময় পরিবর্তন হলেও প্রকাশিত নীতিমালা অনুসারেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। নীতিমালায় একাদশে বিশেষ কোটা হিসেবে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, দশমিক পাঁচ শতাংশ বিকেএসপি এবং দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রবাসী কোটা বহাল থাকছে। এবার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার এমপিওভুক্ত কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। এছাড়া ঢাকার মধ্যে আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানের বাংলা মাধ্যম ভর্তির জন্য ৯ হাজার ও ইংরেজী মাধ্যমের ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে। সব প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্নয়ন ফি ৩ হাজার টাকার বেশি করা যাবে না। প্রতিটি খাতে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে রসিদ প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মফস্বল ও পৌর এলাকার জন্য ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার টাকা, পৌর জেলা সদরে দুই হাজার টাকা, ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না। নীতিমালায় অনুসারে এবারও অনলাইনে ১০ কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এর জন্য নেয়া হবে ১৫০ টাকা। ফলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএস করে ভর্তির জন্য আবেদন আর করা যাবে না। আগে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে প্রতিটি আবেদনের জন্য ১২০ টাকা ফি নেয়া হতো। এদিকে নীতিমালায় পরিবর্তনের বিষয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, ভর্তি নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। কারণ এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম ও ভোগান্তি তৈরি হয়। অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর অনুমতি ছাড়াই আবেদন করে ফেলেন। পরে সমস্যা নিয়ে সবাই শিক্ষা বোর্ডে এসে আর্তনাদ করেন। এ সমস্যা সমাধানে এবার মোবাইলে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করে শুধু অনলাইনে আবেদনের কথা বলা হয়েছে।
×