ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিজেন্টের নথিপত্রের জন্য স্বাস্থ্য ভবনে দুদক

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২০ জুলাই ২০২০

রিজেন্টের নথিপত্রের জন্য স্বাস্থ্য ভবনে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতালের সকল তথ্য এবং নথিপত্রের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম। পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী এ টিম স্বাস্থ্য অধিদফতরে গেলেও দুদকের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য প্রদান না করেই টিমকে ফেরত দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদক টিমের প্রধান সংস্থার উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক। আজ সোমবার স্বাস্থ্য অধিফতর এসব তথ্য প্রদান করবে বলে জানান তিনি। রবিবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিট থেকে প্রায় দেড়ঘণ্টা দুদকের ওই টিম স্বাস্থ্য অধিদফতরে অবস্থান করে এবং অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক চলাকালে ভেতর থেকে কাউকে বাইরে এবং বাইরে থেকে কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। গত ১৪ জুলাই মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে পাঠানো চিঠিতে অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখার নিবন্ধন ইস্যু, নবায়নের সত্যায়িত কপি, কোভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে হাসপাতাল দুটির সঙ্গে অধিদফতরের চুক্তি সংক্রান্ত নথিপত্রসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নথিপত্রের সত্যায়িত কপি যথা শীঘ্রই পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এসব তথ্য সংগ্রহের জন্যই স্বাস্থ্য অধিদফতরে যায় দুদক টিম। বৈঠক শেষে দুদকের দলনেতা ও সংস্থার উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৫ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতাল সংক্রান্ত বেশকিছু নথিপত্র স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আমরা চেয়েছিলাম। রবিবার তাদের তথ্য দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা দেননি। তারা বলেছেন, সোমবার দুদক কার্যালয়ে তারা রেকর্ডপত্র পাঠিয়ে দেবেন। রিজেন্টে বিষয়ে কোন তথ্যে অসঙ্গতি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ রেকর্ডপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে কিছু অসঙ্গতি আমরা পেয়েছি। যেমন করোনা টেস্টের জন্য কোন টাকা নেয়ার কথা না থাকলেও রিজেন্ট হাসপাতাল টাকা নিয়েছিল। আসলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রেকর্ডপত্র পাওয়ার পরেই আমরা সবকিছু বলতে পারব। কমিশনের অনুসন্ধান দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন মোঃ নেয়ামুল হাসান গাজী ও শেখ মোঃ গোলাম মাওলা। এছাড়া অনুসন্ধান কার্যক্রম তদারক করছেন কমিশনের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২ অনু বিভাগের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। গত ১৩ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতাল ও এর চেয়ারম্যান মোঃ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মাধ্যমে এ অভিযোগটি অনুসন্ধান করা হবে। যার জন্য তিন সদস্যের একটি দলও গঠন করে সংস্থাটি। মাইক্রোক্রেডিট ও এমএলএম ব্যবসার নামে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ, বহুমাত্রিক জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে সরকারী অর্থ আত্মসাত, আয়কর ফাঁকি, ভুয়া নাম ও পরিচয়ে ব্যাংক ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাহেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। সূত্র জানায়, এর আগে কমিশনের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি, গণমাধ্যম, ভার্চুয়াল মাধ্যমসহ বিভিন্ন উৎস থেকে সাহেদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো সংগ্রহ করে। এসব তথ্য-উপাত্ত সংবলিত অভিযোগ কমিশনের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল কমিশনে উপস্থাপন করলে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মাধ্যমে এই অভিযোগটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এদিকে দুদক টিম রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমের দুর্নীতির খোঁজ করতে গিয়ে তার মালিকানাধীন সংশ্লিষ্ট আরও আটটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পায় দুদক। তার দুর্নীতি খুঁজে বের করতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে দুদক। এরই অংশ হিসেবে ১৪ জুলাই দেশী-বিদেশী ব্যাংকে সাহেদের সব হিসাব জব্দ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এবং করোনা চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে রিজেন্টের চুক্তির যাবতীয় নথিপত্র চেয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে এবং তার আয়কর নথি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে দুদক। পাশাপাশি তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনসহ (ডিএনসিসি) সংশ্লিষ্ট ৯ প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায় দুদক। এতে সাহেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে চিঠিতে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় তথ্য চাওয়া হয়। দুদক সূত্র জানায়, সাহেদের বিরুদ্ধে দেশের সরলমনা মানুষকে অতি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসার অভিযোগও রয়েছে। এমএলএম কোম্পানির নথি চেয়ে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে চিঠি পাঠিয়েছে। এ ছাড়া করোনার নমুনা পরীক্ষায় ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে সরকারী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় র‌্যাবের করা তিন মামলার কপি চেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। অপরদিকে সাহেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ও আনুষঙ্গিক তথ্য চেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই চিঠিতে শাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ, মুনলাইট রিসোর্ট, ফোর স্টার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মুনলাইট বিল্ডার্স, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড, দৈনিক অন্য দিগন্ত ও কর্মমুখী কর্মসংস্থান সোসাইটির তথ্য চাওয়া হয়। একই সঙ্গে রাজধানীর উত্তরার তার কর্পোরেট অফিস সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুদক সাহেদের ব্যাংকিং হিসাব সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের উত্তরা শাখার ম্যানেজার, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের বিমানবন্দর শাখার ম্যানেজার, এনবিআরের কর অঞ্চল-৯-এর উপ-কর কমিশনার ও জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায়। দুদক কর্তৃক ৯ প্রতিষ্ঠানে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, সাহেদের বিরুদ্ধে মাইক্রোক্রেডিট ও এমএলএম ব্যবসার নামে জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ, বহুমাত্রিক জালজালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে সরকারী অর্থ আত্মসাত, আয়কর ফাঁকি, ভুয়া নাম ও পরিচয়ে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতপূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ৬ জুলাই নানা অনিয়ম, প্রতারণা, করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট ও সার্টিফিকেট দেয়া ও রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপের উত্তরা ও মিরপুরের দু’টি হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরদিন ৭ জুলাই রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয় এবং দু’টি হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়। হাসপাতালটি প্রতারণা করে ১০ হাজারেরও বেশি করোনা পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়েছে। অভিযানে রিজেন্ট হাসপাতালের পরিচালক ও ব্যবস্থাপকসহ আটজনকে আটক করেছে র‌্যাব। এরপর চেয়ারম্যান মোঃ সাহেদকে গত ১৫ জুলাই ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
×