ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা পরীক্ষায় জালিয়াতি পেয়ে বন্ধ ঘোষণা

এবার সাহাবুদ্দীন মেডিক্যালে র‌্যাবের অভিযান

প্রকাশিত: ২২:৩২, ২০ জুলাই ২০২০

এবার সাহাবুদ্দীন মেডিক্যালে র‌্যাবের অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রিজেন্টের পর এবার করোনা পরীক্ষা জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর গুলশানের সাহাবুদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই র‌্যাপিড কিট দিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের এ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে আসছিল রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত হাসপাতালটি। এদিকে অভিযানে অসহযোগিতা করায় হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ আবুল হাসনাতকে হাতকড়া পরিয়ে র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের ইনভেন্টরি অফিসার শাহরিজ কবির সাদিকে র‌্যাবের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এদিকে অভিযানে অপারেশন থিয়েটারটিতে মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচটি সার্জিক্যাল সামগ্রী (এনডোট্রাসিয়াল টিউব) উদ্ধার করা হয়। রবিবার বিকেলে হাসপাতালটিতে অভিযান শুরু করে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সন্ধ্যার ৭টার দিকেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযান চলছিল। অভিযান চলাকালে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারোয়ার আলম জনকণ্ঠকে জানান, এখনও অভিযান চলছে। তবে হাসপাতালটি অনুমোদন ছাড়াই র‌্যাপিড কিট দিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের এ্যান্টিবডি টেস্টের কাজ করছিল। এছাড়াও তারা এ্যান্টিবডি পরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা করেও নেয় বলে অভিযোগ পেয়েছি। হাসপাতালটিতে আমরা তিনটি অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু তাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষার স্বয়ংক্রিয় মেশিন না থাকায় অনুমোদন বাতিল করা হয়। এরপরও তারা কোভিড-১৯ পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিল। তারা বাইরের রোগীদেরও টেস্ট করেছে। এ টেস্টগুলো অননুমোদিত ডিভাইসের মাধ্যমে করেছে। যে রিপোর্ট দিয়েছে তা সবই ভুয়া। তিনি জানান, দ্বিতীয় অভিযোগ হলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু পরীক্ষা বাইরের হাসপাতাল থেকে করে তা নিজেদের হাসপাতালের প্যাডে লিখে রোগীদের দিয়েছে। তৃতীয়ত তারা কিছু পণ্য যেমন মাস্ক, গ্লাভস এগুলো একাধিকবার ব্যবহার করছে। এগুলো মূলত একবারই ব্যবহারযোগ্য (ওয়ানটাইম ইউজেবল)। কিন্তু তারা এগুলো বারবার ব্যবহার করছে। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারোয়ার আলম জানান, হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। এসব সার্জিক্যাল সামগ্রী অপারেশন করার সময় রোগীদের অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত হতো বলে জানিয়েছেন অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তারা। এ সময় অপারেশন থিয়েটারটিতে মেয়াদোত্তীর্ণ পাঁচটি সার্জিক্যাল সামগ্রী (এনডোট্রাসিয়াল টিউব) উদ্ধার করা হয়। পরে এসব সার্জিক্যাল সামগ্রী যাচাই করে দেখা যায়, এগুলোর কোনটির মেয়াদ ২০০৯ সালে আবার কোনটির মেয়াদ ২০১১ সালে শেষ হয়েছে। হাসপাতালটির বাকি চারটি অপারেশন থিয়েটার তালা মারা। অভিযানে উপস্থিত ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, এসব সার্জিক্যাল সামগ্রী অপারেশন করার সময় রোগীর গলার ভেতর ঢোকানো হয়। তবে এই সামগ্রীগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় রোগীর মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট সাহাবুদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হলেও বাস্তবে হাসপাতালটি গোপনে এই পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিল। সম্প্রতি কিছু অনিয়মের অভিযোগ ওঠে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। এর আগে গত ৬ জুলাই করোনা পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর মিরপুর ও উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে র‌্যাব দেখতে পায়, করোনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দিত রিজেন্টের উত্তরা শাখা। অভিযানে অসংখ্য ভুয়া করোনা রিপোর্টসহ নানা নথি জব্দ করা হয়। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিলসহ নানা অভিযোগেরও সত্যতা মেলে।
×