ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় গুলি ও গণপিটুনিতে মৃত্যু বেড়ে চার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৮ জুলাই ২০২০

খুলনায় গুলি ও গণপিটুনিতে মৃত্যু বেড়ে চার

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনায় গুলি ও গণপিটুনিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪ জনে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) খানজাহান আলী থানার আটরা গিলাতলার মশিয়ালী এলাকায় প্রভাবশালী একটি পক্ষ নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে গুরুতর আহত হন কমপক্ষে ১০ জন। প্রতিপক্ষের গুলিতে প্রথমে ওই গ্রামের মোঃ নজরুল ইসলাম (৫০) ও একই এলাকার গোলাম রসুল (৩০) নিহত হন। পরে গুলিবিদ্ধ সাইফুল ইসলাম (২২) গভীররাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ২টার দিকে জিহাদ শেখ (৩০) নামের এক যুবককে গণপিটুনি দিলে এতে তার মৃত্যু হয়। এদিকে গুলি বর্ষণকারী জাফরীন বাহিনীর সহযোগী জাহাঙ্গীর নামে একজনকে পুলিশ যশোরের অভয়নগর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে। মশিয়ালী এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অভিযুক্তদের ধরতে ব্যাপক অভিযান চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে মশিয়ালী গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলি বর্ষণের ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত নজরুল ও রসুলকে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ সাইফুল ইসলাম, আফসার শেখ গভীর রাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। আহত অন্যরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এলাকাবাসী জানায়, মশিয়ালী আলিয়া মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-প্রচার সম্পাদক মোঃ জাকারিয়া সভাপতি পদে পরাজিত হন। পরাজয় মেনে নিতে না পেরে তিনি ও তার ভাইয়েরা স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার খানজাহান আলী থানা পুলিশকে দিয়ে মুজিবর নামের এক ব্যক্তিকে ধরিয়ে দেন। তার কাছে অস্ত্র পাওয়া যায় বলে অভিযোগ করা হয়। এ বিষয়ে এলাকাবাসী জাকারিয়ার কাছে জানতে গেলে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তিনি ও তার ছোট ভাই জাফরিন গ্রামবাসীর ওপর এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। এ অবস্থায় একপর্যায়ে এলাকাবাসী স্থানীয় মসজিদের মাইকে গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘোষণা দিলে গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে দফায়-দফায় বিক্ষোভ করেন। পরে বিক্ষুব্ধ জনগণ জাকারিয়া, জাফরিন, কবির ও মিল্টন এ চার ভাইয়ের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েকটি বাড়িঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। একটি গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়নি ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী। উত্তেজিত জনগণ রাত ২টার দিকে জাকারিয়ার লোক মোকসেদ আলীর ছেলে জিহাদ শেখকে গণপিটুনি দেয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এদিকে শুক্রবার সকালে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জাকারিয়া ও তার ভাইয়ের বাড়ির দরজা জানালা গ্রিল খুলে নিয়ে যায়। এলাকাবাসী শুক্রবারও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে হত্যাকারীদের প্রশ্রয়দাতা উল্লেখ করে তার অপসারণ দাবি করেন। বর্তমানে মশিয়ালী গ্রামের প্রবেশ মুখে খুলনা-যশোর সড়কে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) কানাই লাল সরকার জানান, মশিয়ালীর পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। গুলির ঘটনায় অভিযুক্ত জাকারিয়া ও জাফরীনের সহযোগী জাহাঙ্গীর নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে কেএমপি ও সংলগ্ন এলাকায় পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় এখনও (শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত) মামলা হয়নি বলে তিনি জানান।
×