ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতে শনাক্ত দশ লাখ ছাড়াল, ব্রাজিলে বিশ লাখ

প্রকাশিত: ২২:৫০, ১৮ জুলাই ২০২০

ভারতে শনাক্ত দশ লাখ ছাড়াল, ব্রাজিলে বিশ লাখ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার মেয়ে মৃত্যুর সময় করোনা আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে জন্দোয়া ম্যান্ডেলা। যদিও তিনি ভাইরাসজনিত জটিলতার কারণে মারা যাননি। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক শনাক্তে রেকর্ড হয়েছে। আর ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া দেশটির তেলেঙ্গানা রাজ্যে দুই হাজার করোনা রোগীকে পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়েছে সেখানকার প্রশাসন। অন্যদিকে স্পেন করোনার প্রকোপ বাড়ায় এক লাখ মিংক (এক ধরনের পশু) হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনার হটস্পট হয়ে ওঠা ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ অতিক্রম করেছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এএফপি, রয়টার্স, ডেইলি মেইল, এনডিটিভি ও ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর। ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, এখন পর্যন্ত সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক কোটি ৪০ লাখ ৭০ হাজার ৯১৮ জন। মারা গেছেন পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ১৪৯ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ৫০ লাখ ৮০ হাজার ৪০১ জন। যাদের মধ্যে ৫৯ হাজার ৯৭৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একদিনে সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৯ জন। মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৭৪২ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩৪ হাজার ৭০৫ জন। একদিনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর রয়েছে ব্রাজিল, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বিয়া, রাশিয়া, মেক্সিকো, পেরু, আর্জেন্টিনা। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ব্রাজিলে এক হাজার ২৯৯। পরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। করোনা হয়েছিল ম্যান্ডেলার মেয়ের ॥ গত সোমবার জোহানেসবার্গের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা প্রয়াত নেলসন ম্যান্ডেলার ছোট মেয়ে জিন্দজি ম্যান্ডেলা। মৃত্যুর কারণ এখনও নিশ্চিত না হলেও তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার জিন্দজির ছেলে জন্দোয়া ম্যান্ডেলা রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসএবিসিকে বলেছেন, মৃত্যুর দিন আমার মা করোনা পজিটিভ ছিলেন ঠিকই। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, তিনি ভাইরাসসংক্রান্ত জটিলতায় মারা গেছেন। পরীক্ষায় তিনি শুধু পজিটিভ ধরা পড়েছিলেন। সোমবার ভোরের দিকে মারা যান জিন্দজি ম্যান্ডেলা। যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিক শনাক্তে রেকর্ড ॥ লকডাউন শিথিল করার পর যুক্তরাষ্ট্রে করোনা সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ব্রাজিল। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রেকর্ড ৭৭ হাজার ২১৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ফ্লোরিডা, সাউথ ক্যারোলাইনা ও টেক্সাসে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বাড়ছে। মারাও গেছেন ৯৬৯ জন। যা গত ১০ জুনের পর সর্বোচ্চ। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩৮ হাজার ৩৫৮ জন মারা গেছেন। যেভাবে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বাড়ছে তাতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে। নতুন করে রোগী বাড়তে থাকায় বিভিন্ন রাজ্যের হাসপাতাল থেকে সতর্ক করা হয়েছে। বর্তমানে টেক্সাস ও আরিজোনা অঙ্গারাজ্যে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। সেখানে মর্গগুলোতে মৃতদেহ রাখার আর জায়গা নেই। ভারতে শনাক্ত রোগী ১০ লাখ ॥ করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ দশ হাজার ২৫০ জন হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৩৪ হাজার ৯৫৬ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে সেখানে। এর আগে ভারতে একদিনে এত বেশি রোগী আর পাওয়া যায়নি। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী, বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে এ পর্যন্ত শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ তিন হাজার ৮৩২ জনে। কেবল শনাক্তে নয়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় মৃত্যুরও রেকর্ড হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে। ওই সময়ে আরও ৬৮৭ জনের মৃত্যুতে দেশটিতে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৬০২ জন। জানুয়ারিতে কেরলে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ভারতে রোগীর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছতে সময় লাগল সাড়ে ৫ মাস। এর মধ্যে শেষ এক লাখ শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৩ দিনে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্চে ভারতজুড়ে কঠোর লকডাউন দেয়ার কারণে সংক্রমণের হার ছিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। পরের দিকে লকডাউন শিথিলের পর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা। ভারতের মধ্যে কেবল মহারাষ্ট্রেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যু হয়েছে ১১ হাজার ১৯৪ জনের। শনাক্ত রোগী দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে তামিলনাড়ুতে; দিল্লীতেও সরকারী হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার। কর্ণাটকে শনাক্ত রোগী ৫১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে; ৪৫ হাজার ৪৮১ রোগী নিয়ে পেছনেই আছে গুজরাট। ভারতে করোনা মৃত্যুর তালিকায় মহারাষ্ট্রের পরেই অবস্থান দিল্লী ও তামিলনাড়ুর। পশ্চিমবঙ্গেও কোভিড-১৯ এ মৃত্যু হাজার ছাড়িয়েছে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ১১৭ জনে। সংক্রমণের উর্ধগতি নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও সুস্থ হয়ে ওঠার হার কর্মকর্তাদের স্বস্তি দিচ্ছে। দেশটিতে এখনও পর্যন্ত ৬ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এদিকে তেলেঙ্গানা রাজ্যে ২ হাজারের বেশি করোনা রোগীকে খুঁজে পাচ্ছে না প্রশাসন। রাজ্য স্বাস্থ্যদফতরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১০ দিনে তেলেঙ্গানায় কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসা ২ হাজারের বেশি মানুষকে খুঁজে পাচ্ছে না প্রশাসন। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ঘটনার কথা জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে তেলেঙ্গানা স্বাস্থ্যদফতর। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সরকারী হাসপাতাল ও অন্যান্য পরীক্ষা কেন্দ্রে গত ১০ দিন ধরে চলা র‌্যাপিড টেস্টে দুই হাজারেরও বেশি জনের পজিটিভ ফল আসে। ওই সব রোগীরা টেস্টের সময় ভুল (মিথ্যা) ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। অনেকে তাদের বাড়ির ঠিকানাও ভুল দিয়েছিলেন। এখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। মূলত সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয় থেকেই রিপোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন এসব রোগীরা। এমনটাই ধারণা কর্তৃপক্ষের। স্পেনে মিংক হত্যার সিদ্ধান্ত ॥ বিভিন্ন প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় স্পেনে একটি খামারের সব মিঙ্ক হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি খামারের প্রায় এক লাখ মিঙ্ক হত্যা করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। ইউরোপের কিছু দেশে বেজির মতো এক ধরনের প্রাণী মিংক হিসেবে পরিচিত। মূলত পশম সংগ্রহের জন্যই প্রাণীগুলোকে খামারে পালন করা হয়। স্পেনের আরাগন প্রদেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি প্রথম জানা যায় সেখানকার একটি খামারের এক কর্মচারীর স্ত্রীর করোনা শনাক্তের পর। এরপর ওই নারীর স্বামীসহ খামারের আরও কয়েকজন কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হন। ওই ঘটনার পর কিছুদিন মিংকগুলোকে আলাদা করে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর ১৩ জুলাই পরীক্ষার পর যখন জানা যায় যে, প্রায় ৯২ হাজার সাত শ’ মিংকের মধ্যে ৮৭ ভাগেরই করোনা পজিটিভ। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এরপরেই সবগুলো প্রাণীকে হত্যার নির্দেশ দেয়। আরাগন অঞ্চলের কৃষিবিষয়ক মন্ত্রী হোয়াকিন ওলোনা বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, মিংকগুলো হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যেন মানুষের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়ানো যায়। প্রাণী থেকে সরাসরি মানুষের মধ্যে এই রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়। তিনি ধারণা প্রকাশ করেছেন যে, খামারের কোন কর্মী অনিচ্ছাকৃতভাবে হয়তো প্রাণীগুলোর মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিয়েছে। ব্রাজিলে আক্রান্ত ২০ লাখ ছাড়িয়েছে ॥ ব্রাজিলে এক মাসেরও কম সময়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। দেশটিতে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছেই। এর মধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ১৪ হাজার ৭৩৮ জন হয়েছে। করোনা মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশজুড়ে প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারোর প্রতি ক্ষোভ বাড়তে শুরু করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই ৪০ হাজার মানুষ প্রাণঘাতী ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ১০ লাখ থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ১২ হাজার ১৫১।
×