ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২৪ ঘণ্টায় কোরবানির পশুর বর্জ্য সরাবে ডিএনসিসি

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ১৮ জুলাই ২০২০

২৪ ঘণ্টায় কোরবানির পশুর বর্জ্য সরাবে ডিএনসিসি

মশিউর রহমান খান ॥ করোনাকালীন নাগরিকদের সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সঠিক পদ্ধতিতে পশু কোরবানি, পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুততর সময়ে নাগরিকদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নগর ফিরিয়ে দিতে মাঠে নামছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। কোরবানির দিনসহ মোট তিনদিনব্যাপী কাজ করতে এক বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, এ বছর দুই শতাধিক স্থানে পশু কোরবানির জন্য মার্কিং করেছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে একটি ওয়ার্ড কমিটি ও কেন্দ্রীয়ভাবে সকল কর্মকান্ড মনিটরিংয়ের জন্য কমিটি গঠন করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এ বছর ঈদে ২৪ ঘণ্টার আগেই কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করবে সংস্থাটি। এছাড়া ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে পশু জবাই ও নির্দিষ্ট স্থানে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোরবানির পশু জবাইসহ সার্বিক কাজ করতে ৫০০ জন ইমাম ও কসাইকে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে ডিএনসিসি। ৫৪টি ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট স্থানেই পশু কোরবানি করার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত স্থানে ও সময়ের মধ্যেই পশুর বর্জ্য জমা করার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএনসিসির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য ৫৪টি ওয়ার্ডেই নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন করেছে সংস্থাটি। প্রতিটি ওয়ার্ডের আয়তন বুঝে ৫ থেকে ১০টি পর্যন্ত স্থানে পশু কোরবানি করতে অনুরোধ করেছে ডিএনসিসি। এসব স্থান থেকেই পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করা হবে। এ বছর ঈদের দিন ২টার সময় একযোগে ৫৪ ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজের উদ্বোধন করবে ডিএনসিসি মেয়র। পশুর গোশত, হাড়, রক্ত, বর্জ্য, পশুর উচ্ছিষ্ট খাবার পরিষ্কার করে দ্রুততর সময়ে শেষ করে সুন্দর পরিচ্ছন্ন নগরী নাগরিকদের উপহার দিতে চান মেয়র। তাই এবছর কম সময়ে নিজ ওয়ার্ড পরিষ্কারকারী কাউন্সিলরদের মধ্যে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন মেয়র। মূলত ডিএনসিসি এ বছর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সকল বর্জ্য অপসারণ করতে চায়। এজন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট ১১ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে নামাবে। প্রতিদিন সংস্থাটির মোট ৩ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করলেও কোরবানির কারণে ঈদের সময় তা তিনগুণের বেশি বেড়ে ১০ হাজার টনে পৌঁছে। তাই সংস্থাটি নিজস্ব তিন রকমের যানবাহনের পাশাপাশি অন্য সংস্থা থেকে পরিবহন ভাড়া করেছে বলে জানা গেছে। এসব পরিবহন মোট ৩ দিন কাজ করবে। এছাড়া পশুর বর্জ্য রক্ত ও পচা গোশতের দুর্গন্ধ থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে সংস্থাটি ঈদের ২ দিন আগেই প্রতিটি এলাকায় ও মহল্লায় ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে ও স্যাভলন মেশানো পানি দিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দেবে। ঈদের দিন পশুর রক্ত ও বর্জ্য ধুয়ে ফেলতে ডিএনসিসির পানির গাড়িসহ ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত পানি ছিটানোর গাড়ি চেয়েছে সংস্থাটি। জানা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে কোরবানি সংশ্লিষ্ট সকল কাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য সেল গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর দায়িত্বে থাকবেন ও এছাড়া সংস্থাটির অঞ্চল-৩ এ কেন্দ্রীয় সেল গঠন করা হয়েছে। সেখান থেকেই সার্বিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সূত্র জানায়, সঠিক পদ্ধতিতে পশু জবাই করতে প্রতি জোনে ২৫ জন ইমাম ও ২৫ জন কসাই করে ১০টি ওয়ার্ডে মোট ৫০০ জন ইমাম ও কসাইকে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেবে ডিএনসিসি। মূলত পশুর জবাই পদ্ধতি ও কোন কোন স্থানে কিভাবে পশু জবাই করতে হবে, কতদিন পর্যন্ত ও কোন বিধান অনুযায়ী পশুকে জবাই করতে হবে, পশুর গোশত কাটা, কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি শেখানো হবে। সূত্র জানায়, প্রতিটি এলাকায় সুষ্ঠুভাবে কোরবানির পশু কোরবানি করতে ঈমামদের তালিকা চেয়েছে ডিএনসিসি। এই তালিকার ভিত্তিতে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন। এসব প্রশিক্ষিত লোকজনকে যে কোন নাগরিক তাদের চাহিদামতো কাজে লাগাতে পারবেন। জানা গেছে, কোরবানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য মেয়র সম্প্রতি সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ডিএনসিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে অনলাইনে একটি বৈঠক করেন। তখন কোন কোন কাউন্সিলর বলেন যে, এ বছর ঈদের দিন দুপুর ২টায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরুর ২ ঘণ্টার মধ্যেই সকল বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হবেন কাউন্সিলররা। মেয়র তাদের কম সময়ে অধিক সেবা দিতে সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর মোঃ সাইদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কোরবানি করা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। সঠিক পদ্ধতিতে পশু কোরবানি, পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুততর সময়ে নাগরিকদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নগর উপহার দিতে আমরা সকল কাউন্সিলর ও দায়িত্বরতদের নিয়ে একযোগে কাজ করছি। আমরা কোরবানির দিনসহ মোট তিন দিনব্যাপী এসব কাজ করব।
×