ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এমাজউদ্দীন আহমদের ইন্তেকাল

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ১৮ জুলাই ২০২০

এমাজউদ্দীন আহমদের ইন্তেকাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ আর নেই। শুক্রবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা ও ২ দফা জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে স্ত্রী সেলিমা আহমদের কবরে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেয়ার পর ইউনির্ভাসিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) ভিসি ছিলেন তিনি। খাালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রথম সরকারের সময় ১৯৯২ সালে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদক পান এমাজউদ্দীন আহমদ। এমাজউদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে। খালেদা জিয়ার পরামর্শদাতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের প্রতি শোক প্রকাশের পাশাপাশি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিএনপি নেতারা। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের নেতারা শুক্রবার সকালে এলিফ্যান্ট রোডে এমাজউদ্দীনের বাসায় গিয়ে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তারা নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রফেসর এমাজউদ্দীনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সামনে বলেন, তিনি এভাবে হঠাৎ করে চলে যাবেন এটা আমরা কেউ বিশ্বাস করতে পারছি না। কয়েক দিন আগেও আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর এই চলে যাওয়া আমাদের জন্য একটি বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করল, এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। ফখরুল বলেন, এমাজউদ্দীন আহমদ দেশের একজন অভিভাবক ছিলেন। স্বাধীনতাকামী, গণতন্ত্রকামী মানুষের অভিভাবক ছিলেন। তিনি সত্যিকার অর্থেই একজন নির্লোভ নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি সবসময় চেয়েছেন, দেশ সত্যিকার অর্থে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়ে উঠুক, দেশ সত্যিকার অর্থে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হোক এবং জনগণের মুক্তি হোক। ফখরুল বলেন, সত্যিকার অর্থে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ একজন তারকা ছিলেন, সূর্য ছিলেন। সেই সূর্যের আলোয় আমরা সবাই আলোকিত হতাম। তার অসংখ্য লেখা রয়েছে। তার লেখাগুলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখা। খালেদা জিয়ার ওপর সবশেষে যে বইটি তিনি কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছেন আবদুল হাই শিকদারের সঙ্গে মিলে, এটা একটা ডকুমেন্ট। তাঁর লেখা এরকম অসংখ্য বই রয়েছে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরুল আমিন, সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকবালুর রহমান রোকন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সাবেক ছাত্র নেতা সুরঞ্জন ঘোষ প্রমুখ। বিএনপির কোন পদে না থাকলেও খালেদা জিয়ার একজন পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত শত নাগরিক কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন এমাজউদ্দীন আহমদ। এ সংগঠনের ব্যানারে তিনি বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনার করতেন। জানা যায়, শারীরিক অসুস্থতার কারণে বৃহস্পতিবার রাত ২টায় এমাজ উদ্দীন আহমদকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভোর ৫টায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। ভোড় সাড়ে ৫টার দিকে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সকাল সাড়ে ৭টায় চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর পর তাঁর লাশ নিয়ে আসা হয় এলিফ্যান্ট রোডের বাসায়। সকালে অধ্যাপক এমাজউদ্দীনের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তাঁর স্বজন ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। বাদ জুমা কাঁটাবন মসজিদে প্রথম ও বাদ আসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জানাজা শেষে এমাজউদ্দীন আহমদের লাশ মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ ১৯৩২ সালের ১৫ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন মালদহ জেলায় (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংলগ্ন) জন্মগ্রহণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের গোহাল বাড়ি এলাকায় পরিবারসহ দীর্ঘদিন বসবাস করেন এমাজউদ্দীন। তিনি শিবগঞ্জের আদিনা সরকারী ফজলুল হক কলেজ ও রাজশাহী কলেজের ছাত্র ছিলেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা হিসেবে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ কারাবরণ করেন। এমাজউদ্দীন আহমদ ছাত্রজীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি প্রায় আড়াই দশক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, মহসিন হলের প্রভোস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, প্রো-ভিসি ও ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। দেশ বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তার প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক। প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে আরও যারা শোক প্রকাশ করেছেন তারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মোঃ আখতারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাসদ (একাংশ) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ। তারা মরহুমের আত্মার মাগফেরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
×