ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফের দু’দিনের রিমান্ডে

সরকারী কাজ নিয়ে স্বামীকে দিতেন সাবরিনা

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৮ জুলাই ২০২০

সরকারী কাজ নিয়ে স্বামীকে দিতেন সাবরিনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও দু’দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ডাঃ সাবরিনা আরিফকে। করোনার নমুনা পরীক্ষায় প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডাঃ সাবরিনা আরিফের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ উর রহমান শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এদিন ডাঃ সাবরিনার তিনদিনের রিমান্ড শেষে পুনরায় পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন এসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে ১৩ জুলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমান তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রথম দফার রিমান্ডে থাকাবস্থায় সাবরিনা স্বীকার করেন, তিনি নিজেই স্বামী আরিফকে স্বাস্থ্য খাতের কাজ পাইয়ে দিতেন। জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিফতরে প্রভাব খাটিয়ে স্বামী আরিফুল চৌধুরীর জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (জেকেজি) হেলথ কেয়ারকে সরকারী কাজ পাইয়ে দিতেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডাঃ সাবরিনা চৌধুরী। এতে করোনার এ দুর্যোগকালে জেকেজি হেলথ কেয়ার প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। আদালতে দেয়া প্রতিবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসব কথা উল্লেখ করেন লিয়াকত আলী। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- তিনদিনের রিমান্ডে থাকা অবস্থায় সাবরিনাকে দফায় দফায় মামলার বিষয়ে বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি মামলা সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। যা যাচাই-বাছাই চলছে। সাবরিনা তার সহযোগীদের (যাদের অনেকে আসামি) নিয়ে সরকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগো ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে করোনার পজিটিভ ও নেগেটিভের জাল রিপোর্ট সরবরাহ করেছিলেন। নিরীহ লোকদের টাকা আত্মসাৎ এবং অবহেলার মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ বিস্তারে সহায়তা করে আসছে সাবরিনা। সাবরিনা স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন সূত্রে প্রভাব খাটিয়ে স্বামী আরিফুল চৌধুরীর জেকেজি হেলথ কেয়ারকে বিভিন্ন সরকারী কাজের আদেশ পাইয়ে দিতেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামির সহযোগী অন্যান্য পলাতক আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ, গ্রেফতার, আলামত উদ্ধার, এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কোন ব্যক্তি এই ঘটনায় জড়িত তা উদঘাটনে আসামিকে আরও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাাওয়া গেছে এই দম্পতির কাছ থেকে এমনটি দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। বিশেষ করে পরীক্ষা না করেই নকল সনদ দিয়ে হাতিয়ে নেয়া কোটি কোটি টাকার কথা স্বীকার করলেও টাকা কোথায় রাখা হয়েছে সেটা প্রকাশ করছে না এই দম্পতি। মুখোমুখিতেও তারা টাকার বিষয়ে একই ডায়লগ দিচ্ছে। গত ২৩ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেকেজি হেলথ কেয়ারের নার্স তানজিনা পাটোয়ারী ও তার স্বামী হুমায়ূন কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের গ্রেফতারের পর জানা যায়, জেকেজি তারা দু’জন বাসায় বসে নিজেরাই করোনার ভুয়া টেস্ট করে মানুষকে দেয়া শুরু করে। তানজিনা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করত, আর ঘরে বসে তার স্বামী রিপোর্ট তৈরি করত। জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ ও নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করত। প্রতি রিপোর্টে পরীক্ষার কথা বলে ৫-১০ হাজার টাকা নিত। আর বিদেশীদের কাছ থেকে নিত ৮০-১০০ ডলার। সেই হিসাবে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা পুলিশের।
×