ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৮ জুলাই ২০২০

মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। ভাটিতে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী দুদিনের মধ্যে ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলসহ মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। এদিকে পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রবল স্রোতে ফেরি পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে সব ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘাটের পারাপারে অপেক্ষায় রয়েছে ৫ শতাধিক যানবাহন। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে তীব্র স্রোতের কারণে মূল চ্যানেল থেকে তিন-চার কিলোমিটার উজান দিয়ে ঘুরে পার হতে হচ্ছে ফেরিগুলোকে। এ কারণে সময় বেশি লাগায় ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে। অপরদিকে মাওয়া-কাওড়াকান্দী রুটে স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ওই রুটে অতিরিক্ত চাপ এ নৌ-রুটে পড়েছে। এতে উভয় ঘাটে ৭ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকসহ যাত্রীবাহী যানবাহন পারের অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ঘাটে পার হতে আসা যাত্রী ও চালকরা। বিশেষ করে পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের ঘাটে দুই-এক দিন অপেক্ষার পর ফেরি পার হয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় দেশের ১৮ জেলার ৯২ উপজেলার ৫৩৫টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। সরকারী হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সোয়া ২২ লাখ মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের নদ-নদীর ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৪৪টি পয়েন্টেই শুক্রবার পানি বেড়েছে। এর মধ্যে বিপদসীমার ওপরে বয়ে যাচ্ছে ২২টি পয়েন্টে। ৫৭টি স্টেশনে পানি কমতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ধরলা, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও গৌড় নদীর পানি চারটি পয়েন্টে এবং যমুনা নদীর পানি দুটি পয়েন্টে কমেছে। মেঘনা অববাহিকার সুরমা, কুশিয়ারা ও পুরাতন সুরমার পানি তিনটি পয়েন্টে এবং গঙ্গা অববাহিকার নদী আত্রাইয়ের পানি একটি পয়েন্টে কমে এসেছে। এর ফলে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের বন্যার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টা তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৗশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভুইয়া। তবে ভাটির দিকে পানির চাপ বাড়ায় দেশের মধ্যাঞ্চল মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার প্রবণতা আগামী দুই দিন অব্যাহত থাকবে। পদ্মা নদী আগামী এক দিনের মধ্যে সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমা পেরিয়ে যেতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভাটিতে পানি চাপ বাড়তে থাকায় মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি দিকে যাচ্ছে। বর্তমানে ২২টি অঞ্চলে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তার মধ্যে যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ অংশে প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। তারা বলছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমছে। অপরদিকে যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি অব্যাহতভাবে কমতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে। তবে পানি কমলে প্রধান নদীর পানি এখনও বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির দেয়া তথ্য অনুযায়ী ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম অংশে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার, ঘাঘট গাইবান্ধা অংশে ৮৮, করতোয়া চকরহিমাপুর অংশে ১৪, ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া অংশে ৭৮, ব্রহ্মপুত্র চিলমারী অংশে ৮৯, যমুনা নদীর পানি ফুলছড়ি অংশে ১১৮, বাহাদুরাবাদ অংশে ১২৫, সিরাজগঞ্জ অংশে ১০০, যমুনার আরিচা অংশে ৬৭, গুড় নদীর সিংড়া অংশে ৪৮, আত্রাইয়ের বাঘাবাড়ির অংশে ৯২, পদ্মার গোয়ালন্দ অংশে ৯৯, পদ্মার ভাগ্যকূল অংশে ৬২, পদ্মার মাওয়া অংশে ৫৭, সুরমার কানাইঘাট অংশে ৩৬, কুশিয়ারা আমলশীদ অংশে ৬৭, শেওলা অংশে ১৫ এবং পুরাতন সুরমার দিরাই অংশে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর- মানিকগঞ্জ ॥ ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শুক্রবার আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা-যমুনায় দ্রুত পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার শিবালয়, দৌলতপুর, হরিরামপুর এবং ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর এবং ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। জেলা সদরের হরিরামপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানিতে প্লাবিত হয়েছে হরিরামপুর উপজেলা পরষিদ চত্বর। জেলার ৪টি উপজেলার চরাঞ্চলের ৫ শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার পদ্মা-যমুনা নদী তীরবর্তী শিবালয়, দৌলতপুর, হরিরামপুর উপজেলার ১২ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষ বন্যা মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। জেলায় ১৫ সহস্রাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী। মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের প্রায় ৫ হাজার জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। মরিচচাষীরাও বিপাকে পড়েছে। মাদারীপুর ॥ নেমে আসার পানির কারণে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। শিবচর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি উঠায় ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে শত শত পরিবার। এছাড়াও উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদী সংলগ্ন সন্ন্যাসীরচর, দত্তপাড়ার নিম্নাঞ্চল, শিরুয়াইল, বহেরাতলা, নিলখী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বানভাসিরা ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। এদিকে পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গনও। নদীর ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। মাছের ঘের ভেসে গেছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা নদীতে ভাঙ্গনও দেখা দিয়েছে। ফরিদপুর ॥ সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটেছে। শহরের ভাজন ডাঙ্গা এলাকায় পদ্মা নদীর পাড় ভেঙ্গে ফরিদপুর পৌরসভার অন্তত আড়াই সহস্রাধিক পরিবার নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া ফরিদপুর-চরভদ্রাসন আঞ্চলিক সড়কের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে পানি বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করছে। ওই সড়কের গদাধরডাঙ্গী এলাকায় অন্তত ৫০ মিটারব্যাপী দীর্ঘ ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে ফাটলের ওই অংশ ধসে যেতে পারে। রাতারাতি পানি ঢুকে ঘরবাড়ি নিমজ্জিত হওয়ায় লোকজনকে উদভ্রান্তের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে। সাহায্য করার জন্য সরকারী কিংবা বেসরকারী পর্যায়ের কাউকে দেখা যায়নি। অপরিবর্তিত উত্তরাঞ্চল ॥ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই কুড়িগ্রাম ॥ ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি কমলেও বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। ঘর-বাড়ি ও নলকূপ তলিয়ে থাকায় নদ-নদীর অববাহিকার ৪শ’ ৫টি চর-দ্বীপচরের ৫শ’ গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। তীব্র হচ্ছে গবাদিপশু ও শিশু খাদ্যের সঙ্কটও। এ অবস্থায় সামান্য ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা সবার ভাগ্যে জুটছে না। চোখে পড়ছে না কোন বেসরকারী ত্রাণ তৎপরতা। দুর্গম চরাঞ্চলগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেখানকার মানুষজনের জীবন-যাপনের একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে নৌকা। ঘরের ভেতর এক বুক পানি থাকলেও পার্র্শ্ববর্তী কোন উঁচু বাঁধ বা শুকনো জায়গা না থাকায় তারা নৌকার মধ্যেই ছাগল, ভেড়া, নিয়ে দিন যাপন করছে। এসব এলাকার নলকূপ তলিয়ে থাকায় তারা বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কটে পড়েছে। ঘরে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার না থাকায় তারা একবেলা খেয়েই দিন পাড় করছে। রাজশাহী ॥ বাগমারায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির স্রোতে বিল ও পুকুরের প্রায় আট কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে পানবরজ, ভুট্টা, আউশ খেতসহ বাড়িঘর। এলাকার অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। কমপক্ষে ৩৮টি পুকুরের মাছও ভেসে গেছে বলে মৎস্যচাষীরা জানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুর রহমান জানান, বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার পানবরজ, আউশ খেতসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ বলেন, হঠাৎ করে পানি বেড়ে যাওয়া ও বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক দিকে নজর রাখা হচ্ছে। বগুড়া ॥ বেড়েছে ভাঙ্গনের তীব্রতা। সারিয়াকান্দিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৪৩ কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, পানি কমে যাওয়ার এই প্রবণতা সাময়িক। উজানে ঢলের গতি বাড়লে ফের পানি বাড়বে। জুলাই শেষ পর্যন্ত এই বন্যা থাকবে। তিন উপজেলায় এখনও অন্তত ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। বন্যায় ডুবেছে ১৩৫টি গ্রাম। সিরাজগঞ্জ ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার সোয়া দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা ও রাস্তাঘাট। যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির হার কিছুটা কমলেও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে দ্রুতগতিতে পানি বাড়ছে। জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ২২৪টি গ্রামে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় সোয়া দুই লাখ মানুষ। জেলার অর্ধশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, কমিউনিটি ক্লিনিক পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। জেলার ৬টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ২২৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ৪৭ হাজার দুটি পরিবার পানিবন্দী ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে সাড়ে ৫৩ কিলোমিটার রাস্তা, বাঁধ ও ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তলিয়ে গেছে ১৪ হাজার ১৩ হেক্টর জমির ফসল। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বন্যাকবলিতদের জন্য ২৬৭ মেট্রিক টন চাল ও ৩৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নওগাঁ ॥ আত্রাইয়ে প্রবল বর্ষণ ও ঢলের পানিতে তিনটি স্থানের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। চারপাশে থৈ থৈ করছে অথৈ পানি। আর তাই নৌকা তৈরি ও বিক্রির ধুম পড়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে লাগাতার বর্ষণ এবং উজান থেকে আসা ঢলের পানিতে আত্রাই নদী ফুঁসে উঠেছে। উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া ও মধুগুড়নই গ্রামে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার আত্রাই- বান্দাইখাড়া পাকা সড়কের জাতআমরুল নামক স্থানে এবং আত্রাই-সিংড়া পাকা সড়কের বৈঠাখালী ও পাঁচুপুর নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে অসংখ্য গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। পানিবন্দী অনেকে পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া উজান থেকে আসা ঢলে তিতাস নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে সরাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চল। তিতাস নদীর পানি বাড়ায় হাওড় ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে এখনও পানি বাড়িঘরে প্রবেশ করেনি। এদিকে, আখাউড়া তিতাস নদীর পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
×