ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংকে এটিএম কার্ড সঙ্কট, ভোগান্তি

প্রকাশিত: ২১:৫১, ১৮ জুলাই ২০২০

ব্যাংকে এটিএম কার্ড সঙ্কট, ভোগান্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের কারণে বাসা থেকে অফিসের কাজ করেন আল হায়সাম চন্দন। এটিএম কার্ড ব্যবহার না করে ব্যাংকে গিয়ে চেক দিয়ে টাকা তুলে খরচ করতেন তিনি। এখন বাসাতেই থাকেন অধিকাংশ সময়। বাসায় বসে অনলাইনে কেনাকাটা করার সুযোগ থাকায় তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় গিয়ে তিনমাস আগে ডেবিট কার্ডের আবেদন করেছেন। কিন্তু এখনও ব্যাংক থেকে কার্ড দিতে পারেনি। শুধু চন্দন একা নন। তার মতো আরও বেশ কয়েকজন গ্রাহকের অভিযোগ দুই থেকে তিন মাস আগে ব্যাংকের কাছে কার্ডের আবেদন করা হলেও এখনও কার্ড পাননি। করোনাভাইরাসের এই সময়ে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে চেক দিয়ে টাকা তোলার ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। করোনা সঙ্কটের কারণে প্রায় চারমাস ধরে নতুন কোন কার্ড ইস্যু করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলতে হচ্ছে। ঘরে বসে অনলাইনে কেনাকাটা করলেও পেমেন্ট করতে হচ্ছে নগদ টাকায়। সময়মতো গ্রাহকের কাছে কার্ড সরবরাহ করতে না পারলে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার কাজও ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বেসরকারী ব্যাংক এমডিদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, অনেক ব্যাংক চাহিদা মতো গ্রাহকের কার্ড সরবরাহ করতে পারছে না। আমদানিকারকদের কাছে পর্যাপ্ত কার্ড না থাকায় সরবরাহ কমে গেছে। জানা গেছে, ডিজিটাল লেনদেনে এটিএম কার্ডের জুড়ি নেই। ডেবিট, ক্রেডিট অথবা প্রিপেইড কার্ড দিয়ে বুথ থেকে টাকা তোলা, কেনাকাটা করা, অনলাইন পেমেন্ট করতে ব্যবহার হচ্ছে কার্ড। প্রতি বছর দেশে গড়ে ১০ লাখ এটিএম কার্ডের চাহিদা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের আইক্লিক, কনা সফটওয়্যার ল্যাব লিমিটেড, লার্ক লিমিটেড, নেটওয়ার্ল্ড লিমিটেড, আহমেদ মুস্তাক এন্টারপ্রাইজসহ ৮-১০টি প্রতিষ্ঠান ভিসা-মাস্টার, আমেরিকান এক্সপ্রেস, ডাইনার্স ক্লাব, জেসিবি মোনার্ক, চায়না ইউনিপে কার্ড আমদানি করে ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করে। আমদানিকৃত এসব ব্র্যান্ডের বিপুল পরিমাণ কার্ড গত তিনমাস ধরে বিমানবন্দর কাস্টমসে আটকে আছে। এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধান আরিফুর রহমান বলেন, কাস্টমসের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আমদানিকৃত প্লাস্টিক কার্ড সঙ্কটের কারণে আমরা গ্রাহকের অনুকূলে নতুন কার্ড ইস্যু করতে পারছি না। আমদানিকারকদের দাবি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ট্যারিফ আদায় করতে চায় বিমানবন্দর কাস্টমস। ৪০ মার্কিন সেন্টে প্রতিটি কার্ড আমদানি করা হলেও কাস্টমস আমদানি মূল্য ধরতে চায় ৭০ থেকে ৭৬ সেন্ট। তার সঙ্গে রয়েছে আরও ৭৫ শতাংশ ট্যারিফ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের ইনভয়েস থাকা সত্ত্বেও কার্ডের দাম ৭০ থেকে ৭৫ সেন্ট ধরে ট্যারিফ আরোপ করতে চায়। এতে কার্ডের দাম বেড়ে যাবে অনেক। চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংকগুলো বেশি দামে আমাদের কাছ থেকে কার্ড নেবে না। এ কারণে আমরা কার্ডগুলো ছাড় করাতে পারছি না। বাজারে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কার্ড আমদানিকারকের দাবি, ঢাকা কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উম্মে নাহিদা আক্তার, অতিরিক্ত কমিশনার-২ কাজী তাওহিদা আক্তারের খামখেয়ালিপনায় এসব কার্ড আটকে আছে। তারা এনবিআরের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজেদের ইচ্ছেমতো কার্ডের দাম ধরে ট্যারিফ আদায় করতে চান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আমাদের প্রতিবেশী ভারত, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, নেপালসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে এটিএম কার্ড আমদানিতে কোন ট্যারিফ দিতে হয় না। শুধু বাংলাদেশেই ট্যারিফ দিতে হচ্ছে। ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার ক্ষেত্রে অনেক দূর পিছিয়ে রেখেছে কার্ড আমদানির ট্যারিফ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টমসের কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ব্যাংকের এটিএম সেবার জন্য আমদানিকৃত প্লাস্টিক কার্ড বিমানবন্দরে আটকে থাকার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×