ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাল দাফন

রাষ্ট্রপতির ছোটভাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আর নেই

প্রকাশিত: ২১:৫১, ১৮ জুলাই ২০২০

রাষ্ট্রপতির ছোটভাই মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আর নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ১৭ জুলাই ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ছোটভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিএমএইচে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের (৬৭) জানাজা রবিবার বিকেল ৩টায় মরহুমের নিজ হাতে গড়ে তোলা বিদ্যাপীঠ মিঠামইনের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। পরে মিঠামইন উপজেলা সদরের কামালপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তার লাশ সমাহিত করা হবে। স্নেহের ছোট ভাইয়ের নামাজে জানাজা এবং দাফনে অংশ নিতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদও আসতে পারেন। তবে সরকারীভাবে এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বড় ছেলে ও কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক গণমাধ্যমকে জানান, তার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গত ২ জুলাই তার নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পরে গত ৫ জুলাই তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। গত ১২ জুলাই থেকে তাকে ভেনটিলেশনে রাখা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে ও আত্মীয়স্বজনসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার তিন সন্তানের মধ্যে দুই মেয়ে চিকিৎসক ও একমাত্র ছেলে প্রকৌশলী। এদিকে মোঃ আবদুল হাইয়ের মৃত্যুর সংবাদে নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একজন সৎ, বিনয়ী, সংস্কৃতিমনা সাদা মনের মানুষ হিসেবে তিনি এলাকায় সুপরিচিত ছিলেন। তার সরলতা ও সহজিয়া চরিত্রের জন্য আত্মীয়-স্বজন ও বড় ভাইয়ের কাছে তিনি ছিলেন কাছের মানুষ। পারিবারিক ও অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, আবদুল হাই কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম হাজী তায়েব উদ্দিনের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবদুল হাই ছিলেন পঞ্চম। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ এবং রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দ্বিতীয়। সবার বড় আব্দুল গণি ও তৃতীয় আব্দুর রাজ্জাক ইতোমধ্যে মারা গেছেন। রাষ্ট্রপতির একমাত্র ছোট বোন আছিয়া আলম বর্তমানে মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হলে আবদুল হাই তার সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন। আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদের স্পীকার হলে তাকে আবারও সহকারী একান্ত সচিব করা হয়। পরে মোঃ আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হলে আবদুল হাইকে জাতীয় সংসদের উপ-পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সেখান থেকে অবসরে যাওয়ার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় জানান, রবিবার সকালে বিশেষ বিমানে করে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাইয়ের মরদেহ কিশোরগঞ্জের হাওড় অধ্যুষিত মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাড়িতে আনা হবে। সঙ্গে আসতে পারেন বড় ভাই রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ওইদিন বিকেল ৩টায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারী কলেজ মাঠে জানাযা শেষে বাবা-মায়ের কবরের পাশে তার লাশ দাফন করা হবে। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী শুক্রবার বিকেলে জানান, রবিবারনাগাদ মহামান্য রাষ্ট্রপতির ছোট ভাই আবদুল হাইয়ের মরদেহ কিশোরগঞ্জে আনা হতে পারে। রাষ্ট্রপতিও আসতে পারেন। তবে সরকারীভাবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এখনও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ছোট ভাই মোঃ আবদুল হাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানান। এছাড়া তার মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
×