ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিয়ালের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার

প্রকাশিত: ২১:২১, ১৮ জুলাই ২০২০

রিয়ালের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার

জাহিদুল আলম জয় ॥ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ মানেই রিয়াল মাদ্রিদের একতরফা প্রাধান্য। স্প্যানিশ জায়ান্টরা এ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে সর্বোচ্চ ১৩বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ইউরোপ সেরার মতো স্পেনের ঘরোয়া লীগেও একচ্ছত্র আধিপত্য গ্যালাক্টিকোদের। কিন্তু সবশেষ দশ বছরে এই আধিপত্যে বেশ ছেদ পড়েছিল। এটা হয়েছিল লিওনেল মেসির কারণে। আর্জেন্টাইন জাদুকরের ছোঁয়ায় ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত লা লিগায় ছয়বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বার্সিলোনা। এর মধ্যে রিয়াল জিতেছে মাত্র তিনবার। একবার এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। কিন্তু লীগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে শ্রেষ্ঠত্বে রিয়ালের ধাওে কাছে নেই কোন ক্লাব। এমনকি তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সিলোনাও। বৃহস্পতিবার রাতে নিজেদের অনুশীলন মাঠ আলফ্রেডো দ্য স্টেফানোতে ভিয়ারিয়ালকে ২-১ গোলে হারিয়ে লা লিগার ২০১৯-২০ মৌসুমের শিরোপা জিতে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। দুর্দান্ত জয়ে দলটির হয়ে জোড়া গোল করেন ফরাসী ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমা। দুই বছর পর শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করা রিয়ালের এটা লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৪তম ট্রফি জয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বার্সিলোনা। আর তিনে থাকা এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের শোকেসে জমা ১০টি ট্রফি। ফরাসী কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের কোচিংয়ে এ নিয়ে ১১তম শিরোপা জিতেছে রিয়াল। ক্লাবটির হয়ে প্রথম মেয়াদে ৯টি। দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেয়ার পর এটিসহ দুটি। গত জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপারকাপ জিতেছিল জিদানের দল। করোনাভাইরাস বিরতির পর পুনরায় মাঠে গড়ানো লীগে শুরুতে বার্সিলোনার চেয়ে দুই পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল রিয়াল। ‘নতুনরূপে’ ফেরা লীগে তারাও যেন ফেরে নতুন চেহারায়। ফেরার পর ১০ ম্যাচ খেলে সবকটিতেই জিতেছেন রামোস-বেনজেমারা। ৩৭ ম্যাচ শেষে ২৬ জয় ও আট ড্রয়ে চ্যাম্পিয়ন রিয়ালের পয়েন্ট ৮৬। ব্যর্থতার ষোলকলা পূরণ করা বার্সিলোনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে শিরোপা খোয়ানের রাতে হেরেছে লজ্জাজনকভাবে। নিজেদের মাঠ ন্যুক্যাম্পে ওসাসুনার কাছে মেসিদের হার ২-১ গোলে। রানার্সআপ হওয়া বার্সিলোনার ভা-ারে জমা হয়েছে ৭৯ পয়েন্ট। শিরোপা ফয়সালা হয়ে গেলেও লীগে এখনও প্রতিটি দলের একটি করে ম্যাচ বাকি আছে। নিজেদের চেনা মাঠে শুরু থেকেই সফরকারী ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে দাপটের সঙ্গে খেলতে থাকে স্বাগতিক রিয়াল। ম্যাচের ২৯ মিনিটে লুকা মডরিচের সহযোগিতায় দলকে এগিয়ে দেন বেনজেমা। এই এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় চ্যাম্পিয়নরা। বিরতির পর ৭৭ মিনিটে ডি বক্সে রামোসকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় রিয়াল। আগের ম্যাচগুলোর মতো এবার আর স্পট কিক নিতে আসেননি রিয়াল অধিনায়ক রামোস। এবার কিক নেন বেনজেমা। সফল শটে রিয়ালের জয় অনেকটাই নিশ্চিত করেন তিনি। ৮৩ মিনিটে ভিসেন্টে ইবোরা ভিয়ারিয়ালের হয়ে এক গোল পরিশোধ করলেও হার এড়াতে পারেননি। ম্যাচ শেষে বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন রিয়ালের ফুটবলাররা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর রিয়ালের গর্বিত কোচ জিনেদিন জিদান বলেন, আমার পেশাদার ক্যারিয়ারে এটি অন্যতম একটি সেরা দিন। লকডাউন ও পরবর্তীতে সবকিছুর পর এই শিরোপা সত্যিই স্মরণীয়। দলটির অধিনায়ক সার্জিও রামোস বলেন, এতদিন আমরা যা করেছি তার পুরস্কার পেয়েছি। আমাদের হাতে আরও একটি ম্যাচ বাকি আছে। এখন লক্ষ্য ১১ ম্যাচে ১১ জয় তুলে নেয়া।। শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধার করে রিয়াল উচ্ছ্বাসে ভাসলেও বিপরীত চিত্র বার্সিলোনা শিবিরে। দলটিতে এখন গৃহবিবাদ ওপেন হয়ে গেছে। দলটির কোচ কিকে সেটিয়েনের ছাঁটাই হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। কাতালানদের সেরা তারকা লিওনেল মেসি নিদারুণ হতাশ দল নিয়ে। রিয়ালের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়ে মেসি বলেন, তারা (রিয়াল) যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাদের অভিনন্দন। এখন আমাদের সবকিছু নতুন করে ভাবতে হবে। সবকিছুর অবশ্যই পরিবর্তন করতে হরে। এবারের মৌসুমে যা কিছু হয়েছে তা নিয়ে ক্লাবের প্রতিটি মানুষই বিরক্ত। আর এটাই স্বাভাবিক। খেলোয়াড়দের অনুভূতিটাও একই। আমাদের অবশ্যই আত্মসমালোচনা করতে হবে। খেলোয়াড়দের থেকে শুরু করে যা পুরো ক্লাবের জন্যই প্রযোজ্য। বর্তমান ফিফা সেরা তারকা আরও বলেন, অনেকদিন আগেই আমি বলেছিলাম এভাবে চলতে থাকলে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে জয় পাওয়াটা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে। আর এখন লা লিগায় তাই ঘটেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে আমাদের লড়াই করতে হলে অবশ্যই পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ তা নাহলে নেপোলির কাছে হার নিশ্চিত।
×