ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহাপ্রতারক!

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ১৮ জুলাই ২০২০

মহাপ্রতারক!

বেশ কয়েকটা দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত বুধবার ভোরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা থেকে র‌্যাব মহাপ্রতারক সাহেদ করিম ওরফে মোঃ সাহেদকে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে আদালত তার দশ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। গত কিছুদিন ধরে সারা দেশেই আলোচনার বিষয় ছিলেন এই ঠগিবাজ। মহামারীর সময়ে স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে শঙ্কিত হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন করার মতো মহাঅপরাধ করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গোচরে আসার পরপরই তার মালিকানাধীন দুটি হাসপাতাল সিলগালা করে দেয়া হয়। এখন জানা যাচ্ছে শুধু স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই নয়, নানা নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে জামানত সংগ্রহ এবং উচ্চপর্যায়ে তদ্বিবের আশ্বাস দিয়ে বহুজনের কাছ থেকেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই নরাধম। এমনকি নয়টি ব্যাংক তাকে ঋণ দিয়ে সে টাকা উদ্ধারেও ব্যর্থ হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নিকট অতীতের সব ধরনের প্রতারকদের ভেতর সাহেদ ‘বিশিষ্ট’ প্রতারক হয়ে উঠেছেন তার সহজাত প্রতারণা গুণে। এমনকি আদালতেও নিজেকে করোনা রোগী দাবি করে প্রতারণার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। করোনার বিরুদ্ধে এখন চলছে সর্বাত্মক যুদ্ধ, আর সাহেদ নামের প্রতারক নিজেকে করোনাযোদ্ধা হিসেবে মহান প্রতিপন্ন করার অন্তরালে করোনাক্রান্ত এবং সম্ভাব্য করোনা রোগীদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছেন। তার মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালকে ব্যবহার করা হয়েছে মহাপ্রতারণার কেন্দ্র হিসেবে। আবার বেসরকারী টিভি চ্যানেলে এসে বড় বড় কথা বলেছেন তিনি। একেই বলে বুঝি চোরের মায়ের বড় গলা। পরীক্ষা না করেই ইচ্ছামতো কোন রোগীকে পজিটিভ আবার কোন রোগীকে নেগেটিভ বলা হয়েছে। র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী রিজেন্ট হাসপাতালে ছয় হাজারের বেশি রিপোর্টে জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজার সম্পূর্ণ ভুয়া বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভিযোগ ওঠায় গত ২৩ মে থেকে আইপিএইচ রিজেন্ট হাসপাতালের কোন নমুনা পরীক্ষা করেনি। ওই তারিখ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত রিজেন্ট আইপিএইচের প্যাডে যত রিপোর্ট দিয়েছে তা নিজেরা কম্পিউটারে বানিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে টাকা হাতাতে বিভিন্ন স্থানে মোটা অঙ্কের কমিশনের মাধ্যমে রোগী আনত রিজেন্ট। করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষ হাসপাতাল হিসেবে সরকারের অনুমোদন নিলেও জরুরী ভিত্তিতে করোনা পরীক্ষার কোন ধরনের ব্যবস্থাও ছিল না হাসপাতালটির। রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভাষ্যে উঠে আসে হাসপাতালটির অনিয়ম-অব্যস্থাপনার চিত্র। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ২০১৪ সাল থেকে নেই আর আইসিইউ যেটা আছে এটা নরমাল ওয়ার্ডও না।’ সমাজ নিকট অতীতে আর এমন বহুরূপী প্রতারক দেখেনি। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজের ভাবমূর্তি বাড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করতেন এই নকল বুদ্ধিজীবী। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিদের কারা তাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন এ বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে। আদালতের দন্ড প্রদান এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরও দশটি বছর ধরে তিনি আইনের আওতার বাইরে কিভাবে বহাল তবিয়তে থাকলেন, সেটি মহাবিস্ময়ের। গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার দায়িত্ব কাদের ওপর ছিল সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। সর্ষের ভেতরের ভূত না তাড়ালে এ জাতীয় মহাপ্রতারকরা দেশ ও দেশের মানুষের সর্বনাশ করতেই থাকবেন। স্বাস্থ্য খাতের নানা দুর্নীতি নিয়ে দ্রুত তদন্তকাজ শুরু হওয়া চাই। সাহেদের মতো সব দুর্নীতিবাজ মহাপ্রতারকদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলেই আর কেউ দেশবাসীর ভোগান্তি ও দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের দুঃসাহস দেখাতে পারবে না বলে মানুষ আশা করে।
×