ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪০ ভাগ কম ব্যয়ে উৎপাদন

সরকারী বিদ্যুত কোম্পানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করলে উৎপাদন খরচ কমবে

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ১৭ জুলাই ২০২০

সরকারী বিদ্যুত কোম্পানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করলে উৎপাদন খরচ কমবে

রশিদ মামুন ॥ সরকারী বিদ্যুত কোম্পানিগুলো ৪০ ভাগ কম খরচে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। সরকারী কোম্পানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকারী বেসরকারী এবং আমদানি বিদ্যুতের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে দেশে ইউনিট প্রতি গড় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ছয় টাকা ৩০ পয়সা। আর সরকারী কোম্পানি বিদ্যুত উৎপাদন করছে প্রায় অর্ধেক তিন টাকা ৮০ পয়সা দরে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্র কম চালিয়ে বেসরকারী কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত কেনে পিডিবি। কমমূল্যের বিদ্যুত উৎপাদনে প্রাধান্য দিলে উৎপাদন খরচ আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ গ্রাহক পর্যায়ে কমিয়ে আনা হবে। সরকারী সূত্রগুলো বলছে নীতি অনুযায়ী বেসরকারীখাতে অর্ধেক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এখনও সরকারী এবং বেসরকারী বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ অর্ধেক। তবে এক্ষেত্রে সরকারী কোম্পানির কেন্দ্র নির্মাণে আরও বেশি প্রাধান্য দিলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিদ্যুত বিভাগের হিসেব বলছে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দেশে বিদ্যুত উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৪১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। সেখানে সরকারী এবং উন্নয়ন তহবিলের ভর্তুকি ছিল দুই হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দেশে ৩৮ হাজার ৫১২ কোটি টাকার বিদ্যুত উৎপাদন হয়েছে। সেখানে সরকার দুই হাজার ৩৫১ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব হলে সরকারী ভুর্তুকি যেমন আর লাগবে না তেমনি বিদ্যুতের দামও কমানো সম্ভব হবে। যদিও গত কয়েক বছরে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ান হয়েছে। সব সময় সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুত উৎপাদনের কথা বলা হলেও বিদ্যুত বিভাগের হাতে সুযোগ থাকলেও তা বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ রয়েছে। এখন পিডিবির মাধ্যমে খোদ সরকারী পর্যায়ে বিদ্যুত উৎপাদন খরচ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ৪০ টাকা এরপর ২০১৮-১৯ এ ছিল ৪ দশমিক ৬০ টাকা। এর থেকেও সরকারী বিদ্যুত কোম্পানির বিদ্যুতের দাম আরও কম পড়েছে। সরকারী কোম্পানির বিদ্যুত উৎপাদন খরচ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক ৫০ টাকা এরপর ২০১৮-১৯ এ ছিল ৩ দশমিক ৮০ টাকা। অর্থাৎ ২০১৭-১৮ থেকে ২০১৮-১৯ এ সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ ইউনিট প্রতি কমেছে ৭০ পয়সা করে। অন্যদিকে বেসরকারী উৎপাদানকারীদের আইপিপি বিদ্যুতের দাম ২০১৭-১৮ তে ছিল ৫ দশমিক ৭০ টাকা সেখানে ২০১৮-১৯ এ এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪০ টাকায়। রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রে ২০১৭-১৮ তে ছিল ৮ দশমিক ৮০ টাকা সেখানে ২০১৮-১৯ এ এসে তা কিছুটা কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৪০ টাকা। ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির খরচ ২০১৭-১৮ তে ছিল ৫ দশমিক ৯০ টাকা আর ২০১৮-১৯ এ ছিল সাড়ে পাঁচ টাকা। জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরাদের এখানে সরকারী যেসব বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে তারা গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করে। এজন্য তাদের ইউনিট প্রতি উৎপাদন খরচ কম হয়। আর যেহেতু বেসরকারী উৎপাদনকারীরা তেলে বিদ্যুত উৎপাদন করে তাই তাদের দাম বেশি পড়ে। এখন দেশে যে বিদ্যুত উৎপাদন হয় এর মধ্যে পিডিবির পাশাপাশি পিডিবির কোম্পানি হিসেবে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল), ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি (ইজিসিবি), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল) বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) এর রুরাল পাওয়ার কোম্পানি নামে আরও একটি কোম্পানি বিদ্যুত উৎপাদন করছে। যদিও আরও কয়েকটি সরকারী বিদ্যুত কোম্পানি গঠন হলেও এই কোম্পানিগুলো এখনও উৎপাদন শুরু করেনি। সরকারী কোম্পানিগুলোর শতভাগ মালিকানা সরকারী। এই কোম্পানির প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে যা খুবই সামান্য। কোম্পানিগুলো কখনও কখনও নিজস্ব বিনিয়োগেও কেন্দ্র নির্মাণ করে। তবে সরকারের তরফ থেকে ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয়াতে ঋণ পাওয়া সহজ হয়। সরকারী কোম্পানি গঠন করে বিদ্যুত উৎপাদনের ইতিহাস খুব বেশি পুরাতন না হলেও ইতোমধ্যে সাফল্য দেখিয়েছে বিদ্যুতখাতের এসব কোম্পানি। বেসরকারী বিদ্যুত কোম্পানির মতোই আগ্রাসী বিনিয়োগও করছে কোন কোন কোম্পানি। যার সুফল হিসেবে কম দরে বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। সরকারী কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারী কোম্পানির উৎপাদন খরচ অনেক কম হওয়তে এখান থেকে বেশি বেশি বিদ্যুত কেনাকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। তিনি মনে করেন এটি করা হলে সরকারের বিদ্যুতখাতে কোন ভর্তুকি দেয়ার দরকার হতো না। তবে সরকারী কেন্দ্রগুলোকে পুরোদমে অনেক ক্ষেত্রে না চালিয়েই বেসরকারী কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত কেনার অভিযোগ করেন তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, এক্ষেত্রে বিদ্যুত বিভাগের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা জরুরী। জানতে চাইলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (বিদ্যুত) মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, আমরা যে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহের নির্দেশ দেই অনেক ক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা তা সরবরাহ করতে পারে না। তবে সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রর উৎপাদন বাড়ান গেলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি তারা পর্যালোচনা করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
×