ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক/এগারোর কুশীলবদের বিচার প্রকৃতিই করেছে ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১৭ জুলাই ২০২০

এক/এগারোর কুশীলবদের বিচার প্রকৃতিই করেছে ॥ তথ্যমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০০৭ সালের এই দিনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার মধ্যদিয়ে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকেই বন্দী করা হয়েছিল। সে কারণে ১৬ জুলাই শুধু জননেত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস নয়, গণতন্ত্রেরও বন্দী দিবস। তিনি আরও বলেন, এক-এগারোর কুশীলবদের বিচার প্রকৃতিই করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এক-এগারোর কুশীলবদের বিচার প্রকৃতিই করেছে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদ প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। ওই দিনই ড. ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। পরে এই ঘটনা ওয়ান/ইলেভেন (১/১১) হিসেবে পরিচিতি পায়। ১/১১-এর পেছনে যারা ছিল সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কেন-জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, যারা এক-এগারোর কুশীলব তাদের অনেকেরই প্রাকৃতিক বিচার হয়ে গেছে। প্রকৃতি তাদের বিচার করে ফেলেছে। তিনি বলেন, পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, প্রাকৃতিকভাবে তাদের বিচার হয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তাদের অনেকের প্রাকৃতিকভাবে বিচার হয়ে গেছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, এক-এগারোর কুশীলবরা সুশীল ছদ্মাবরণে নানান কথা বলে। তাদের গতিবিধির ওপর সরকারের নজর আছে। তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অগ্নিবীণা, যার ধমনিতে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্রোত প্রবহমান, যার কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হয় এবং সঙ্কটে-সংগ্রামে যিনি অবিচল-অনির্বাণ, আমাদের প্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এইদিনে গ্রেফতার করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায়। পিতার অপরাধে নাবালিকা কন্যাকে গ্রেফতার, স্বামীর অপরাধে অসুস্থ স্ত্রীকে গ্রেফতার- তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ ধরনের কাজগুলোর যখন কেউ প্রতিবাদ করছিল না, আমাদের আপোসহীন জননেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে কণ্ঠরোধ করার জন্য, গণতন্ত্রকে বন্দী করার জন্যই সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু সেদিন যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা অনুভব করতে বাধ্য হয়েছে যে, মুক্ত শেখ হাসিনার চেয়েও বন্দী শেখ হাসিনা অনেক বেশি শক্তিশালী বর্ণনা করে ড. হাছান বলেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ সেদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং সেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে তারা বাধ্য হয়েছিল, শেখ হাসিনার মুক্তি লাভের মাধ্যমে গণতন্ত্র মুক্তি পেয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ ধস নামানো বিজয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে ডিসেম্বরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছিল। মন্ত্রী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা গত সাড়ে ১১ বছর ধরে বাংলাদেশকে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ তার নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে, খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, দারিদ্র্য ৪১ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। তার নেতৃত্বে গত সাড়ে ১১ বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যোগ করলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ এবং বাঙালী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পৃথিবীর সামনে মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজকে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদ্যম গতিতে এগিয়ে চলছে, তার এ নেতৃত্বের জন্য বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ, পৃথিবীর বরেণ্য নেতৃবৃন্দ যখন প্রশংসা করে, তখনও এক-এগারোর কুশীলবরা ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টায় লিপ্ত। যখনই দেশে কোন বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়, আমরা দেখতে পাই তারা দেশে-বিদেশে সক্রিয় হয়, আবার ছোবল মারার অপচেষ্টা চালায়। তাদের গতিবিধির ওপর সরকারের নজর আছে সেইসঙ্গে আমাদের দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে যারা গণতন্ত্রের অব্যাহত অভিযাত্রায় বিশ্বাস করে, তাদের সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাই। এ সময় সরকারী কর্মচারীরা রিজেন্ট ও জেকেজি’র ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে থাকলে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না -এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের কাছ থেকে কেউ যদি ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে থাকে বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, ভুয়া সার্টিফিকেটধারীদের কখনও সরকার প্রণোদনা দেবে না। তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে আনা হবে কি না -এ প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারেক জিয়া শাস্তিপ্রাপ্ত আসামি। তার একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে। আরেকটি মামলায় ১০ বছর সশ্রম কারাদ- হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যেহেতু আমাদের বন্দীবিনিময় চুক্তি নেই, সেজন্য আলাপ-আলোচনা চলছে। আমি মনেকরি সে যদি রাজনীতিবিদ হয় তারই উচিত ছিল আদালতের কাছে আত্মসমর্পণ করা। সত্যিকারের রাজনীতিবিদ কখনও আইন-আদালতকে ভয় পায় না। সত্যিকারের রাজনীতিবিদ নয় বিধায় তারা আর কখনও রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে চলে গিয়েছিল। সরকারী কর্মচারীরা রিজেন্ট ও জেকেজির ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে থাকলে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের কাছ থেকে কেউ যদি ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে থাকে বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, ভুয়া সার্টিফিকেটধারীদের সরকার কখনও প্রণোদনা দেবে না।
×