ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বনভূমি ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় আশাবাদ

করোনাভাইরাস থেকেও দেশবাসী মুক্তি লাভ করবে

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ১৭ জুলাই ২০২০

করোনাভাইরাস থেকেও দেশবাসী মুক্তি লাভ করবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এক যুগ আগে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ১১ মাসের কারাবাস থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন উল্লেখ করে বলেছেন, দেশের জনগণ ও প্রবাসী বাঙালীদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিলাম বলেই জাতীয় আন্তর্জাতিক চাপে আমাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা যে, তাদের সমর্থনে আমি মুক্তি পেয়েছিলাম ২০০৮ সালে। করোনাভাইরাস থেকে সকল দেশবাসীর মুক্তি লাভের দৃঢ় আশাবাদ পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস যদিও আমাদের সকল অগ্রযাত্রা সাময়িকভাবে থামিয়ে দিয়েছে। তবে আমি আশা করি, জনগণ এর থেকে মুক্তি পাবে এবং আবার আমরা এগিয়ে যাব। তার সরকারের নেতৃত্বে দেশ আবারও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার গণভবনে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান-২০২০ এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে সারাদেশে এক কোটি গাছের চারা বিতরণ ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের জন্য, জাতির জন্য কাজ করা এটা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে শিখেছি। যেকোন অবস্থা মোকাবেলা করা, প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করে চলা আর সৎপথে থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণ করা। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তার আদর্শে বাংলাদেশকে গড়তে চাই ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেফতার এবং জনগণের সমর্থনে মুক্তির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আজকের দিনটা একটা বিশেষ দিন। কারণ ২০০৭ সালে তদানীন্তন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমাকে গ্রেফতার করেছিল, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই আমার বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, প্রবাসীদের প্রতি এবং বিশ্ব নেতাদের প্রতি। তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনে আমি মুক্তি পেয়েছিলাম ২০০৮ সালের ১১ জুলাই।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ওই সময় আমার মুক্তির দাবিতে প্রায় ২৫ লাখ জনগণের সিগনেচার (স্বাক্ষর) সংগ্রহ করে, সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অফিসে দিয়েছিলেন। তাদের এই সমর্থন আমি পেয়েছিলাম বলেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে আমাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। যদিও আমার বিরুদ্ধে বিএনপির আমলে বারোটা মামলা দেয়া হয় আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আরও পাঁচটা মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। প্রতিটা মামলায় আমি বলেছি যে তদন্ত করে দেখুন আমি দুর্নীতি করেছি কি না? ঠিক সেটাই করা হয়েছে। কাজেই আল্লাহর রহমতে সব কিছু থেকেই আমি খালাস পেয়েছি। জনগণের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা কারণ তাদের অকুণ্ঠ সমর্থনেই আমি মুক্তি পেয়েছিলাম।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন চত্বরে তিনটি গাছের চারা রোপণ করে মুজিববর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সারাদেশে ১ কোটি চারা বিতরণ, রোপণ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী তেঁতুল, ছাতিয়ান এবং চালতা তিনটি গাছের চারা রোপণ করেন এবং একই সঙ্গে তিনি ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী ২০২০’র উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ২৫ শতাংশে উন্নীত করায় তাঁর সরকারের লক্ষ্য পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রথমবার ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন দেশে বনভূমির পরিমাণ ছিল মাত্র ৭ শতাংশ। যা আজকে আমরা ১৭ শতাংশে উন্নীত করতে সমর্থ হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য সারাদেশে ২৫ শতাংশ বনায়ন করব। যে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ আমাদের দেশটা একটা ব-দ্বীপ বিধায় এদেশে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে দেশকে রক্ষার পাশাপাশি উন্নত করায় এ সময় সকলকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন রক্ষা করা দরকার তেমনি জনগণের খাদ্য ও পুষ্টির দরকার। সেই কারণেই আমাদের এই বৃক্ষরোপণ করাটা অত্যন্ত দরকার। তিনি বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই সিদ্ধান্ত দিয়েছি প্রত্যেককে একটি ফলজ, একটি বনজ এবং একটি ভেষজ এই তিনটি করে গাছ লাগাতে হবে। কাজেই আজকে আমি লাগিয়েছি একটি তেঁতুল গাছ, একটি চালতা গাছ এবং একটি ছাতিয়ান গাছ।’ শেখ হাসিনা তাঁর লাগানো গাছগুলোর উপযোগিতা তুলে ধরে বলেন, ছাতিয়ান গাছ খুব বড় এবং কা- মোটা হয়। যেটি কাঠ হিসেবে খুব ভাল, সেজন্য এটা লাগানো হয়েছে। আর তেঁতুলের কথা শুনলেই জিবে যেমন পানি আসে তেমনি ছোটবেলার কথাও মনে পড়ে যায়। এটা শরীরের জন্যও খুব উপকারী। কারও উচ্চরক্তচাপ রোগ থাকলে তার জন্য, তাছাড়া শরীরকে ঠাণ্ঠা রাখার জন্য তেঁতুল খুবই উপকারী। আর চালতা গাছের পাতা ও ফুল যেমন সুন্দর দেখতে, তেমনি চালতা গাছেরও অনেকগুণ রয়েছে। বনায়নের পাশপাশি যেন সবুজ বেষ্টনীর সৃষ্টি হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সারাদেশে এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে বৃক্ষরোপণ করে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। তাঁরই স্মরণে আমরা এই কর্মসূচী পালন করছি এবং প্রতিবছরই এই কর্মসূচী আমরা পালন করে থাকি। তিনি বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে প্রতি বছর ১ আষাঢ় সারাদেশে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষকলীগ উদ্যোগ গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করে আসছে। যাতে মূল সংগঠনসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে দেশবাসীর উদ্দেশে করে বলেন, যেখানে আপনার যতটুকু জায়গা আছে, আপনি যা পারেন একটা গাছ লাগান। অথবা যারা শহরে থাকেন, ছাদে বাগান করেন বা ব্যালকনিতে একটা টবে গাছ লাগান। যেভাবে হোক একটু গাছ লাগালে ভালও লাগবে, মনটাও ভাল লাগবে আর আপনার নিজের অর্থনৈতিক সচ্ছলতাও আসবে। আর নিজের হাতে লাগানো একটা গাছের ফল বা কাঁচামরিচ খেলেও কিন্তু ভাল লাগবে। করোনাভাইরাসের সঙ্কট সমাধানে সবাইকে আল্লাহর দরবারে দোয়া/ প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের সকল অগ্রযাত্রা সাময়িকভাবে থামিয়ে দিয়েছে। আমি আশা করি জনগণ এ থেকে বেরতে পারবে, আবার আমরা এগিয়ে যাব। এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশের না, বিশ্বব্যাপী। কাজেই সবাই যেন এই সমস্যা কাটিয়ে তুলতে পারে। দেশবাসীসহ সমগ্র বিশ্বের জনগণ যেন এর কবল থেকে মুক্ত হতে পারে সেজন্যও মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণকালে গণভবনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, পিএমও সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পরিবেশ ও বন সচিব জিয়াউল হাসান এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ১২ জুলাই ভার্চুয়াল বৈঠকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচীর উদ্বোধন শেষে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় তিনটি চারা-একটি ফলজ, একটি বনজ এবং একটি ওষুধি গাছের চারা আনুষ্ঠানিকভাবে লাগান হবে। পরে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়ম বজায় রেখে কর্মসূচী উদ্বোধনের দিন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর চলতি বৃক্ষরোপণ মৌসুমে দেশের ৪৯২টি উপজেলার প্রতিটিতে ২০ হাজার ৩২৫টি চারা রোপণ করা হবে বলেও জানান পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।
×