ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ চায় প্রকাশনা শিল্পের উদ্যোক্তারা

প্রকাশিত: ১৮:৩১, ১৬ জুলাই ২০২০

প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ চায় প্রকাশনা শিল্পের উদ্যোক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রকাশনা শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এখাতের বার্ষিক প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বাজারের মধ্যে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের সংকট ও প্রতিকার নির্ধারণ’ শীর্ষক ওয়েবনার ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি এম এ মোমেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অর্থপ্রবাহ নিশ্চিত করাই এখন উদ্যোক্তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ মহামারী সংকট শুরু হওয়ার পরপরই সরকার তা মোকাবেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তবে ঘোষিত এ প্যাকেজ হতে ঋণ সুবিধা পাওয়া উদ্যোক্তাদের সংখ্যা তেমন উল্লেখযোগ্য নয় এবং বর্তমান অবস্থা উত্তরণে তিনি ব্যাংক সমূহকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি এম এ মোমেন বলেন, প্রতিবছর এখাতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার হয়ে থাকে, তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যেখানে বর্তমানে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচলনাই অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়াও এ শিল্পের স্থানীয় উদ্যোক্তা ও উৎপাদনকারীদের বাচিঁয়ে রাখতে তিনি তাদের আর্থিক এবং নীতি সহায়তার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি-এর সভাপতি ফরিদ আহমেদ প্রকাশনা ও মুদ্রণ খাতে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকৃতি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে গবেষণা পরিচালনা করা এবং দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রদানের উপর জোরারোপ করেন। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই স্থানীয় উদ্যোক্তাবৃন্দ প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ করে সরকারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে, তবে এখাতের উদ্যোক্তাদের ১০০ কোটি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের সক্ষমতা রয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ সরাসরিভাবে জীবিকা নির্বাহে মুদ্রণ খাতের উপর নির্ভরশীল এবং কোভিড-১৯ মহামারীর সময়কালে এখাতের বাৎসরিক মোট ১২ হাজার কোটি টাকার বাজারের মধ্যে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার বাজার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি এ শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার জন্য ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতরণের উপর জোরারোপ করেন। বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ভরসা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এখাতের উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি ৭০ শতাংশ কমে গেছে এবং বর্তমান অবস্থা উত্তরণে প্রণোদনা প্যাকেজের সুষম বন্টনের প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সসোরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারর্স এন্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আব্দুল কাদের খান বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজ হতে বিজিএমপিএমই’র সদস্যবৃন্দের মধ্যে মাত্র ১ জন ঋণ সুবিধা পেয়েছেন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির সংখ্যা একেবারেই নগন্য। তিনি এখাতের কাঁচামাল আমদানির উপর আরোপিত শুল্ক হার কমানোর দাবি জানান। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল বলেন, প্রায় ২০ লক্ষ জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সমূহে অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম চালু হলেও মুদ্রিত বইয়ের চাহিদা কমার কোন সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের ব্যাংকিং খাত প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন এবং সরকারের উচিত বিষয়গুলোর প্রতি আরো মনোযোগ দেওয়া। ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ বাশির উদ্দিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ^বিদ্যালয়সহ অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মুদ্রণ শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা মাত্রারিক্তভাবে হ্রাস পেয়েছে, এমতাবস্থায় এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের বেঁচে থাকার জন্য সরকারের আর্থিক প্রণোদনা একান্ত জরুরি। তিনি এ শিল্পের অসম শুল্ক কাঠামোর সংষ্কার, ডিউটি ড্র-ব্যাক পদ্ধতির জটিলতা নিরসন এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানান। ডিসিসিআই’র সভাপতি জনাব শামস মাহমুদ-এর সঞ্চালনায় পরিচালিত এ ওয়েবনারে নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি-এর সভাপতি ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি-এর চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত, বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স এসোসিয়েশন-এর সভাপতি শফিকুল ইসলাম ভরসা, হাসেম পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল হোসেন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সসোরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারর্স এন্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আব্দুল কাদের খান, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল, বাংলাদেশ লোকাল কার্টন ম্যানুফেকচার্স এসোসিয়েশনেরএর সভাপতি বাশার পাটোয়ারী এবং চট্রগ্রাম কাগজ ও সেলোফোন এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ বেলাল প্রমুখ যোগদান করেন।
×