ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জোয়ারে ভাসে, ভাটায় জাগে কুতুবদিয়া

প্রকাশিত: ০১:১২, ১৬ জুলাই ২০২০

জোয়ারে ভাসে, ভাটায় জাগে কুতুবদিয়া

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ কুতুবদিয়াবাসীকে রক্ষায় ১৪ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের জন্য দুই দফায় ১২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু গত চার বছরেও ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসৎ কর্মকর্তার দুর্নীতি ও কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কুতুবদিয়ার এক অংশ সাগরের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। এক কি.মি. বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা অবস্থায় ফেলে রাখায় উত্তরধুরুং এলাকার মানুষ অনেকটা পানিতেই বাস করছে। কেউ কেউ ঘরের ভেতর ম্যাচা তৈরি করে ঘর পাহারা ও রাতে ঘুমিয়ে পড়েন বলে জানা গেছে। জানা যায়, জোয়ার-ভাটায় চলছে তাদের জীবন। ঠিকাদার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বললেও গত ৪ বছর ধরে পানিতে ভেজা ও ময়লাযুক্ত ছাড়া এক টুকরো শুকনো জায়গা দ্বীপবাসীর ভাগ্যে জোটেনি। ৯২ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রকল্প কাজ এখনও শেষ হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পানি উন্নয়নবোর্ডের তত্ত্বাবধানে মোটাদাগের বরাদ্দ পাওয়া সত্ত্বেও কুতুবদিয়াবাসীর মুখে হাসি নেই। দ্বীপবাসী বলেন, সরকার বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য যথেষ্ট বরাদ্দ দিয়েছে। ওই বরাদ্দের টাকা ঠিকাদার-কর্মকর্তারা ভাগবাটোয়ারা করলে এখানে সরকারের দোষ আমরা দেখছি না। ঠিকাদারকে বললে এই তো একমাসের মধ্যে করে দিচ্ছি বলে আর তাদের দেখা মেলে না। কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানালে ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান। স্থানীয়রা নিরীহ লোক, তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে সঠিকভাবে প্রকল্প কাজ আদায় করে নেয়ার সাহসও পাচ্ছে না। ফলে ফেলে রাখা বেড়িবাঁধের কারণে উত্তর ধুরুং এলাকা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এতে কাইছারপাড়া, নয়াকাটা, চরধুরুং এলাকা প্রত্যেহ দুইবার সাগরের জোয়ারের পানিতে ভাসছে। নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছে সেখানকার বসতিগুলো। কুতুবদিয়ার বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াহিয়া খান কুতুবী বলেন, ১২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া সত্ত্বেও বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ কারণে চরধুরুং নয়াকাটা ও কায়ছারপাড়া অমাবস্যা পূর্ণিমার জোয়ারে প্লাবিত হয়। বাপ-দাদার বসতভিটার মায়ার টানে ছেড়ে না যাওয়ায় বহু পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় দিনযাপন করে। কুতুবদিয়া উপকূল রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে ঠিকই। তবে উত্তর ধুরুং এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নেই। মেরামত কাজে বাঁধের উচ্চতা ও ব্লক বসানো নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাঁধের উচ্চতা কম হওয়ায় জোয়ারের পানি বাঁধের ওপর উপচে পড়ে বসতবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। জানা যায়, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কুতুবদিয়াবাসীকে রক্ষার খাতিরে ১৪ কি.মিটার বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য প্রথমে ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডক ইয়ার্ডের নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার ঈগল রিচ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেড়িবাঁধ মেরামত ও উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু গত ৪ বছরেও তারা কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি। তবে কাহারপাড়া, তেলিপাড়া, পূর্ব-পশ্চিম তাবলরচর, আনিচের ডেইল, জেলেপাড়া, দক্ষিণ মুরাণিয়া, অমজাখালী, দক্ষিণ কায়ছারপাড়া এলাকাসহ প্রায় ৬ কিলোমিটার মাটি দিয়ে বাঁধ মেরামত করেছে। তন্মধ্যে প্রাক্কলনে ৭ কিলোমিটার সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা বাঁধ মেরামত কাজের মধ্যে কাহারপাড়া, তাবলরচর, জেলেপাড়া, দক্ষিণ কায়ছারপাড়া এলাকায় এক কিলোমিটার সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দ্বারা বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করেছে। অবশিষ্ট কাজ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সমাপ্ত করা হবে বলে জানা গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ওই এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এক মাসের মধ্যে বাঁধের মাটির কাজ শেষ করার জন্য সরঞ্জামাদি মজুদ আছে। উল্লেখিত এলাকা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড শাখা কর্মকর্তা এলটন চাকমা জানান, সাড়ে ৫ কিলোমিটার সিসি ব্লকের কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান শেষ করতে না পারায় ওই এলাকা অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।
×