ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চাল ডাল চাই না, ভাঙ্গন ঠেকান

প্রকাশিত: ০০:৪০, ১৬ জুলাই ২০২০

চাল ডাল চাই না, ভাঙ্গন ঠেকান

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে হতাশ খয়মন বেওয়া(৭০) বলছিলেন, এখন আবার তাকে অন্যের জমিতে গিয়ে বাড়িঘর বানাতে হবে। আর তারা এতটাই গরিব যে, নতুন করে ঘরতোলাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। আবার মানুষ বাড়ি করার জন্য জমিও দিতে চাইছে না। তিস্তা পাড়ে খয়মন বেওয়ানের মতো অনেকের চোখে শূন্যতা, কারণ সামনে কি রয়েছে, তা তাদের জানা নেই। কিছামত চর থেকে কুঁড়েঘরের মাথাটা নৌকায় করে নিয়ে কোনরকমে প্রাণ নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদীর ডানতীরে পূর্বখড়িবাড়ির স্পার বাঁধে। বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, উজানের ঢলে ভয়াবহ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তিস্তাপাড়ে চলছে নদীভাঙ্গন। একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদীভাঙ্গন কবলিত ডিমলার কিছামতচর গ্রামে আসার পথে কয়েকটি বাড়ি, গাছপালা নদীতে ভেঙ্গে পড়তে দেখা গেল। একটি বাড়ি যখন নদীতে পড়ছে, সেটির মালিকরা তখনও বাড়িটি থেকে ইট-কাঠ খোলার চেষ্টা করছিলেন। অনেকে ভাঙ্গনের মুখে পড়তে যাওয়ার আগেই বসতঘর সরিয়ে আরেক স্থানে বসতঘর তৈরি করছে। দেখা গেল নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেক পরিবার কিছামত চরের আরেক উঁচুস্থানে বসতঘর সরিয়ে কোনরকমে উঠিয়ে রেখেছে। সংসারে জিনিসপত্র সব এলোমেলো। সকলেই বলছিল বন্যা ভাঙ্গনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই আমরা টিকে আছি ও টিকে থাকার চেষ্টা করছি। আমাদের ভরসা আল্লাহ। সার্বিকভাবে তিস্তাপাড়ের পরিবারগুলো বলছে আমরা ‘চাল ডাল চাই না, নদীভাঙ্গন ঠেকান’।জেলার ডিমলা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর পানি কমছে। তবে বাড়ছে দুর্ভোগ। তীব্র হচ্ছে নদীভাঙ্গন। হারিয়ে যাচ্ছে সহায় সম্বল। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি জমি ও ফসল। কমে যাচ্ছে জেলার কৃষি উৎপাদন। গৃহহীন হচ্ছে নদী শিকস্তি পরিবার। বন্যায় জেলায় কৃষকের এবং যোগাযোগের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে ব্রিজ ও রাস্তাঘাট। নদী ভাঙ্গনের শিকার এবং বন্যার্তদের মাঝে জ্বালানি, খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গোখাদ্যেরও চরম সঙ্কট চলছে। বেড়ে গেছে গোখাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম। ফলে নদী ভাঙ্গন ও বন্যাদুর্গতরাসহ সর্বস্তরের ক্রেতারা দারুণ বেকায়দায় পড়েছে। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন, তিস্তার বন্যায় ডিমলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ছয় হাজার ২৭০টি পরিবার বন্যাকবলিত হয়। পাশাপাশি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১৪৭টি পরিবারের বসতভিটা। বসতভিটা হারানো পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা ও ভেন্ডবাড়ি গ্রামে ৮৭ পরিবার, টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি, পূর্বখড়িবাড়ি এলাকায় ২৪ পরিবার, খালিশাচাঁপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর ও ছোটখাতা গ্রামে ১৩ পরিবার ও খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামত চরে ২৩ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য নতুন করে সরকারীভাবে ১১০ টন চাল, নগদ ১ লাখ টাকা ও এক হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
×