ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসাধু প্রকৌশলী ও কর্মচারী জড়িত

সওজের জমিতে উঠছে বহুতল ভবন

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ১৬ জুলাই ২০২০

সওজের জমিতে উঠছে বহুতল ভবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৫ জুলাই ॥ সড়ক ও জনপথ বিভাগের মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের পাশে বেড়া সিএ্যান্ডবি স্ট্যাক ইয়ার্ড, বাঁধেরহাট, আমিনপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, কাশিনাথপুর মোড়সহ নগরবাড়ির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রভাবশালীরা আবারও সড়কের জায়গায় অবৈধভাবে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করছে। অবৈধ দখলের সঙ্গে সওজের কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিসের কিছু অসাধু প্রকৌশলী ও কর্মচারী জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ গত বছরের শেষের দিকে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের জায়গা অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। সেই অভিযানে বেড়া স্ট্যাক ইয়ার্ড, কাশিনাথপুর, নগড়বাড়ি ও বাঁধেরহাটের ছয় শতাধিক আধাপাকা-কাঁচা দোকান ঘর গুড়িয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে উচ্ছেদকৃত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কিছু এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আরসিসি পিলারের ভিত্তি স্থাপন করে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সওজের কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিসের কিছু অসাধু প্রকৌশলী ও কর্মচারী লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নীরবতা পালন করছে। এমনকি তারা উর্ধতন কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুর রহমান আরজু এক সময়ের উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ও ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত নগরবাড়ির নলখোলা-মথুরাপুরে প্রায় তিন বছর আগে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সরকারের বিপুল পরিমাণ খাস জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে সেখানে বালু-মাটি ভরাট করে দু’পাশে ১৬১ রুমের বিশাল মার্কেট নির্মাণ করেছেন। প্রতিটি রুমের পজিশন বাবদ এক থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিমাসে দোকানগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পজিশন হস্তান্তর ও ভাড়ার টাকা কোন খাতে জমা বা ব্যয় হচ্ছে তা স্থানীয় প্রশাসন জানেন না। সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুর রহমান আরজু সরকারী জায়গার ওপর মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, তৎকালীন প্রশাসনের কাছ থেকে মৌখিক অনুমোদন নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। পজিশন হস্তান্তর ও ভাড়ার টাকা মার্কেট নির্মাণ এবং উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে। বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর-কাজিরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের বাঁধেরহাট বাজার সরেজমিনে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় গোলাপবার, কাঠমিস্ত্রি রবি, আমিরুলসহ কেউ কেউ সওজের জায়গা দখল করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অলিখিতভাবে পজিশন হস্তান্তর করেছে। এলাকার প্রভাবশালী মোঃ শামসুল মোল্লা, মোঃ দিলবর মন্ডল, মোঃ লুৎফর রহমান মোল্লা, বারেক মন্ডল, বকুল ফকির, নাদের মোল্লা, জলিল প্রামানিক, মজিদ মোল্লা, আরিফ মৃধা, রশিদ মোল্লা, রশিদ মাস্টার, হান্নাসহ অনেকেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে আরসিসি পিলারের ভিত্তি স্থাপন করে বহুতল ভবন ও মার্কেটের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, বাঁধেরহাটে যেসব বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে সওজের কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিসের উপÑসহকারী প্রকৌশলী আহসানুল কবির এবং কার্যসহকারী আব্দুল বাসেদের পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে। সম্প্রতি পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ মহাসড়কে দুই পাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য দখলদারদের নোটিস দেয়া হয়েছে। কিন্তু উল্লেখিত দখলদারদের কোন নোটিস দেয়া হয়নি।সওজের পাবনা অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিস থেকে অবৈধ দখলদারদের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে শুধু তাদেরই নোটিস দেয়া হয়েছে। এদিকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আমিনপুর ও কাশিনাথপুর মোড় এলাকায় সওজের উদ্ধারকৃত জায়গা পুনর্দখল করে পাকাবাড়ি ও দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে। বেড়া স্ট্যাক ইয়ার্ডের প্রায় ১৫ বিঘা জায়গার পুরোটাই আবারও অবৈধ দখলে চলে গেছে। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, হাট-বাজার থেকে আদায় করা খাজনার টাকা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলটি এবং সওজের কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে। একইভাবে আমিনপুর বাজারে হাজী মার্কেট, রেজাউল করিম, সেন্টু, মমতাজ ও লোকমান মাস্টার পাকা মার্কেট নির্মাণ করে নিজেরা ব্যবহার করছে এবং অন্যের কাছে ভাড়া দিয়েছে। কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিস থেকে যাদের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছিল গত বছরের শেষের দিকে শুধু তাদের দোকান ও বসতঘর উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ওই সময় ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল যে, মোটা টাকার বিনিময়ে আমিনপুর, নগরবাড়ী ও বাঁধেরহাটের কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম সুকৌশলে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল বলে তাদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আওতায় আসেনি। বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আনাম সিদ্দিকী জানান, সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুর রহমান আরজু নগরবাড়ীর নলখোলা-মথুরাপুরে অবৈধভাবে সরকারী জায়গার ওপর মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে পাবনা জেলা আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাবনা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য পাবনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের আইনী সহায়তা দেয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জোহা জানান, আমি এ বিষয়ে আমিনপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিস থেকে পাঠানো তালিকায় যাদের নাম আছে শুধু তাদেরই নোটিস পাঠানো হয়েছে। করোনাকালীন সঙ্কটকে পুঁজি করে বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধারকৃত জায়গা কিছু কিছু মানুষ আবারও অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। আমরাও খুব দ্রুত অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করব বলে তিনি জানিয়েছেন।
×