ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাঠাও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ যুক্তরাষ্ট্রে খুন

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ১৬ জুলাই ২০২০

পাঠাও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ যুক্তরাষ্ট্রে খুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশী রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাওয়ের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটনে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন। ফাহিমের ছিন্নভিন্ন দেহের পাশ থেকেই একটি বৈদ্যুতিক করাত উদ্ধার হয়েছে। ওই করাত দিয়েই ফাহিমকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় বলে নিউইয়র্ক পুলিশের ধারণা। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ বলছে, গত ১৪ জুলাই বিকেলে ম্যানহাটনের বাসা থেকে ফাহিমের লাশ উদ্ধার করা হয়। ফাহিমের হাত-পা ও মাথা শরীর থেকে আলাদা ছিল। লাশের পাশেই একটি বৈদ্যুতিক করাত পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই করাত দিয়েই ফাহিমকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। লাশ ফাহিমের নিজের এ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার হয়। গত বছর ২ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে তা কিনেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী এই ওয়েব ডেভেলপার। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি ইউনিভার্সিটিতে ইনফরমেশন সিস্টেমে পড়াশোনা করতেন ফাহিম। পরে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বসবাস শুরু করেন। পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম নাইজিরিয়া ও কলম্বিয়ার এমন আরও দুটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানির মালিক। নিউইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র কার্লোস নিয়েভাস বলেছেন, শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাওয়া গেছে। তা ঘটনাস্থলেই ছিল। বুধবার পর্যন্ত হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে গোয়েন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, ফাহিমের বোন ৯১১ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। একদিন পার হয়ে গেলেও ভাইয়ের দেখা না পেয়ে তিনি ৯১১ নম্বরে ফোন করেন। পুলিশ ধারণা করছে, সিসিটিভি ক্যামেরার সূত্র ধরে অপরাধীকে শনাক্ত করা যাবে। ইতোমধ্যেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করে তার পর্যালোচনা করছে পুলিশ। ভিডিওতে গত ১৩ জুলাই এক ব্যক্তি স্যুট, হাতে মোজা, মাথায় হ্যাট ও মুখে মাস্ক পরে ফাহিমের এ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করে । পুলিশ বলছে, শিকার হাতের নাগালে আসতেই ওই লোক কাবু করে ফেলেছে। তার সঙ্গে স্যুটকেস ছিল। খুনী একেবারেই পেশাদার বলে সার্বিক পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে। ফাহিম নিউইয়র্কের একটি হাই স্কুলে পড়ার সময় ‘উইজ টিন’ নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে বেশ অর্থ আয় করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন। এরপর ম্যাসাচুয়েটস স্টেটের বেন্টলি ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে স্নাতক করেন ফাহিম। উদ্ভাবনী মেধাসম্পন্ন ফাহিম কোন কোম্পানিতে চাকরির চেষ্টা না করে মা-বাবার জন্মস্থান বাংলাদেশে ছুটেন। ২০১৫ সালে আরও দুই জনের সঙ্গে মিলে ঢাকায় মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনের এ্যাপ ‘পাঠাও’ চালু করেন। রাজধানী ঢাকা ছাড়িয়ে পাঠাও চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিস্তৃত হয়। এক পর্যায়ে তা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নেপালেও সম্প্রসারিত হয়। এমন অবস্থায় ঢাকা ছাড়েন ফাহিম। ফাহিম সালেহর খুন হওয়ার খবর গণমাধ্যমে দেখেছেন পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন এম ইলিয়াস। তিনি বলেন, ‘ফাহিম সালেহ আমাদের কো-ফাউন্ডার ছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে তিনি আমাদের সঙ্গে নেই। নাইজিরিয়াতে একটি কোম্পানি চালু করেছিলেন তিনি। আমাদের এখান থেকে যাওয়ার পর তার সঙ্গে আর তেমন যোগাযোগ ছিল না।’ ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নাইজিরিয়ায় লাগোসে যৌথ উদ্যোগে এ্যাপভিত্তিক মোটরবাইক রাইড সার্ভিস ‘গোকাডা’ চালু করেন ফাহিম। সেই ব্যবসা জমে উঠলেও নানা কারণে তা বছরখানেক পর বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে একটি নতুন কোম্পানি চালু করেছেন বলে তার এক নিকটাত্মীয় জানালেও সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু মেলেনি। ফাহিম বিনোদনমূলক এ্যাপারেটাস কোম্পানি কিকব্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও এ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটলেরও সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
×