ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপদমুক্ত থাকুন

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ১৬ জুলাই ২০২০

বিপদমুক্ত থাকুন

পৃথিবীতে কোন ক্ষতিই কারও কাম্য নয়। মৃত্যু তো নয়ই। কিন্তু প্রতিটা ক্ষতির বা ধ্বংসের পিছনে কিছু শিক্ষা থাকে, থাকে কিছু ভাল দিক। যেমন, বন্যা জীবন হানি করে, ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা, গবাদী পশু, বন্য পশু, ক্ষেতের ফসল ইত্যাদি ধ্বংস করে। তারপর বন্যা যখন চলে যায় রেখে যায় পলি। জমি উর্বর হয়। বন্যার পর সে বছর ক্ষেতে ফসল ভাল হয়। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণের পর আমার মতো অনেকেই বিশ্ব মহামারীর অভিজ্ঞতা অর্জন করেনি, যা এবার আমরা প্রথমবারের মতো করছি। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষের দিনে মানুষ যখন পৃথিবীর সব কিছুকে জয় করে চাঁদে স্থায়ী বসতি স্থাপন আর মঙ্গলে পাড়ি জমানোর দ্বারপ্রান্তে, ঠিক উন্নতির সেই চরম মুহূর্তে একটি অতি ক্ষুদ্র ভাইরাস যা খালি চোখে দেখাই যায় না, তার কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছি। এটা বড় ধরনের একটা ট্র্যাজেডি বৈকি। করোনা ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতিকে করেছে পর্যুদস্ত, কোটি কোটি চাকরিজীবী ও শ্রমিক কাজ হারিয়ে আজ বেকার। ক্ষুদ্র মাঝারি এমনকি বড় ব্যবসায়ীরাও তাদের মূলধন হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছে, বহু মানুষ তাদের বহু কষ্টে সঞ্চিত শেষ সঞ্চয়টুকু নিঃশেষ করে ফেলেছে। কিন্তু মানুষের জীবন থেমে থাকে না। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে তাকে ঘর থেকে বের হতে হয়। আমাদের সরকারের পক্ষেও হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া লাখ লাখ মানুষকে ঘরে বসিয়ে খেতে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই জীবিকার তাগিদে মানুষ বেরোতে বাধ্য হচ্ছে। এমতাবস্থায় অবশ্যই নিজেকে নিজেই সুরক্ষিত রাখতে হবে। কিন্তু মানুষের আচরণ দেখে হতাশ হতে হয়। একটা প্রবাদ আছে, আপন ভাল পাগলেও বোঝে। কিন্তু কিছু মানুষের আচরণ দেখে মনে হয়, পাগল তো দূরের কথা, অনেক সুস্থ-স্বাভাবিক, শিক্ষিত-ভদ্র লোকেরাও নিজের বা নিজের পরিবারের ভাল বুঝতে চাচ্ছেন না। করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার প্রথম ও প্রধান শর্তই যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সেখানে তারা অবলীলায় সেই বিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। কেউ যদি নিজের থেকে সচেতন না হন, তবে আইন দিয়ে, পুলিশ দিয়ে তাদেরকে সচেতন করা যায় না। পরিষ্কার বোঝা যায় যারা বিধি লঙ্ঘন করে বের হচ্ছেন, তাদের কারও কারণ যৌক্তিক, কারও অযৌক্তিক। কেউ বলছেন তারা বেরিয়েছেন লক ডাউন দেখতে বা কিছু কিনতে। কেউ বেরোচ্ছেন ধূমপান করতে, কেউবা চা অথবা ডাব খেতে। শেষোক্ত এই লোকগুলো যেন ইয়ার্কি করে। মানুষ যেখানে মারা যাচ্ছে, সারা পৃথিবী যেখানে ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে, তখন এরা তামাশা করছে। এই তামাশা করা লোকগুলোর জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। আর যারা সচেতন তারা নিজেরা যেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, তেমন অন্যদের বোঝাবেন, খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে যেন না বের হই, বার বার কমপক্ষে কুড়ি সেকেন্ড করে সাবান দিয়ে হাত ধুই, মাস্ক পরি, কমপক্ষে তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি ইত্যাদি। পৃথিবীতে কোন বিপদই চিরস্থায়ী নয়। আমরা আশাবাদী একদিন করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার হবে। কিন্তু যতদিন না হচ্ছে, ততদিন আসুন আমরা সচেতন হই এবং নিজেদের নিজেরাই সুরক্ষিত রাখি। ফকিরহাট, বাগেরহাট থেকে
×