ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ১৬ জুলাই ২০২০

নতুন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

করোনা দুর্যোগে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যে বেহাল দশা তা সবার সামনে উন্মোচিত হয়েছে। প্রতিটি সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালের মানসম্মত দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সরকারী চিকিৎসালয়গুলো তাদের সীমিত ক্ষমতা নিয়ে এখন অবধি করোনা দুর্যোগে শামিল হলেও বেসরকারী হাসপাতালগুলো তা দেখাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি, সেবা প্রকল্পে গাফিলতিসহ সব ধরনের সঙ্কট ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা দুর্যোগে যথাসম্ভব তার নজরদারি অব্যাহত রাখলেও সব দিক রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়নে মহামারীর দুঃসময়কে যে বিপর্যয়ের মধ্যে টেনে নিয়ে গেছে তাও লোকসম্মুখে এসেছে। রিজেন্টের সাহেদ থেকে আরম্ভ করে জেকেজি হেলথ কেয়ারের ডাঃ সাবরিনার করোনা নমুনা পরীক্ষা নিয়ে যে অমানবিক ব্যবসা মানুষকে তা হতবিহ্বল করে দিয়েছে। ব্যবসায়িক স্বার্থ ন্যক্কারজনকভাবে অসুস্থ মানুষের স্বাস্থ্য ও প্রাণ ঝুঁকিকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। এমন সব পঙ্কিল অধ্যায় আর চরম বাণিজ্যিক পুঁজির একচেটিয়া আধিপত্যকে সমূলে বিনাশ করাই শুধু নয়, তার চেয়েও বেশি পুরো স্বাস্থ্য পরিষেবাকে নতুনভাবে ঢালে সাজিয়ে একে গণমুখী এবং জনবান্ধব করা অত্যন্ত জরুরী। সোমবারে অনুষ্ঠিত হয়েছে সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় নতুন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবার আধুনিক প্রকল্প তৈরির প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার এই বৈঠকটি দেশের ইতিহাসে এই প্রথম। খুলনায় একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির জন্য উত্থাপিত প্রস্তাবনাটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে এই চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়টি তার নতুন কর্মপ্রকল্পে এগিয়ে যাবে আগামীতে। মহতী এই উদ্যোগটি যেন সব ধরনের স্বচ্ছতা, গণমুখিতা এবং নীতি নৈতিকতায় তার নতুন কর্মযোগকে শাণিত করতে পারে সেটাই হবে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। এখানে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে অনবচ্ছেদভাবে সম্পৃক্ত থাকবে জ্ঞানচর্চার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নবতর এবং সময়োপযোগী গবেষণা প্রকল্পে নতুন ধারা সূচনা করার মহান ব্রত নিয়ে এই স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার সর্বোচ্চ পাদপীঠটি তার লক্ষ্যকে নির্ধারণ করবে। অতীতের সমস্ত ভুল-ভ্রান্তি এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে শিক্ষা নিয়ে আধুনিক আন্তর্জাতিক মানসম্মত একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে যা যা প্রয়োজন সবটাই আমলে নিতে হবে। ২০১৮ নির্বাচনী অঙ্গীকারে বিভাগীয় শহরগুলোতে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির যে রূপরেখা ছিল, সেটারই প্রথম উদ্যোগ হিসেবে খুলনা বিভাগে এই বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালটি তৈরির প্রকল্প অনুমোদিত হয়। ক্রমশ অন্যান্য বিভাগীয় শহরে তা সম্প্রসারণের কর্মপরিকল্পনাও হাতে নেয়া হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মানসম্মত শিক্ষক, গবেষক এবং বিশেষজ্ঞ তৈরির মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই এই চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু করা হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্পকে তার প্রাসঙ্গিকতায় নতুনভাবে সাজানো গোছানো হবে বলে মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। সময়ের প্রয়োজনে এই যুগোপযোগী পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরী। এক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজে মানসম্মত চিকিৎসা ছাড়াও গবেষক ও বিশেষজ্ঞ তৈরিতে নতুন করে অবদান রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। বর্তমানে সারাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার উন্নত মান নির্ধারণে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয় তার যথাযথ ভূমিকা পালনে এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যাশা। নতুন এই উদ্যোগ আধুনিক ও আগামীর বাংলাদেশ তৈরির ক্ষেত্রে সমস্ত অব্যবস্থাপনাকে সমূলে উৎখাত করে নতুন এক নজির উপস্থাপন করুক এটাও সকলের প্রত্যাশা।
×