ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্ত বাণিজ্য

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১৬ জুলাই ২০২০

মুক্ত বাণিজ্য

করোনা মহামারীজনিত কারণে প্রায় সারা বিশ্ব কয়েক মাস লকডাউনে থাকায় স্থবির হয়ে পড়ে বৈশ্বিক অর্থনীতি। থেমে যায় আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, আমদানি-রফতানি ও অন্যান্য। এ সময়ে নিতান্ত জরুরী পণ্য যেমনÑ খাদ্য, ওষুধপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম ইত্যাদি ছাড়া অন্যবিধ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় চলেনি। জ্বালানি তেলের দাম নেমে যায় একেবারে তলানিতে। অর্থাৎ, এক ব্যারেল তেল কিনলে এক ব্যারেল ফ্রি! এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আর্থিক মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ। দেশে দেশে খাদ্যাভাব তথা দুর্ভিক্ষাবস্থার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। স্বীকার করতে হবে যে, উন্নত দেশগুলোসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এর উত্তাপ অনুভূত হয়েছে কমবেশি। অবশ্য সরকারের যথাযথ প্রস্তুতি এবং বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় বাংলাদেশে করোনাজনিত লকডাউনের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি কমই অনুভূত হয়েছে তুলনামূলকভাবে। নগদ আর্থিক প্রণোদনাসহ মাত্র দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি এবং ব্যাপক ত্রাণকার্যক্রম মানুষের দুুর্গতি-দুর্ভোগ কমিয়ে আনতে সহায়ক হয়েছে অনেকাংশে। তবে প্রধান রফতানি পণ্য পোশাক খাত ও চামড়া শিল্প কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার প্রণোদনা তহবিল দিয়ে সহায়তা করছে এ দুটো খাতে। এর পাশাপাশি বিস্ময়করভাবে আয় বেড়েছে প্রবাসী খাতে। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ইতোমধ্যে ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এক্ষণে করোনার ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে চায়। এর জন্য অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আপাতত ১১টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। এর উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রায় অবাধে পণ্য রফতানির সুযোগ পাওয়া। এর ফলে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সাপটা ও আপটা চুক্তির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এফটিএ ও পিটিএ থেকে সুবিধা প্রাপ্তিই এর অন্যতম লক্ষ্য। করোনা মহামারীর ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। জাতীয় বাজেটে তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছে সরকার। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনসহ কর্মসংস্থানের ওপর। এর জন্য ইতোমধ্যেই সরকার এক লাখ কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার সুফল পাচ্ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। এর বাইরেও রয়েছে ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে অন্তত দু’মাসের কর রেয়াত, যার সুবিধা পাবেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। এর পাশাপাশি কৃষিসহ গবাদি পশু, পোল্ট্রি, ফুল-ফল উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের জন্য দেয়া হয়েছে স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা ও প্রণোদনা। এসব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি সরকার জাতীয় বাজেটে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর। এ জন্য নেয়া হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। যার মধ্যে রয়েছে কর্পোরেট কর হার কমানো, স্বল্পসুদে দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদী শিল্পঋণ সুবিধা, সর্বোপরি অপ্রদর্শিত আয় তথা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। করমুক্ত আয়ের পরিসীমাও বাড়ানো হয়েছে। এসবই আগামীতে দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। দেশে শ্রমমজুরি সস্তা ও সাশ্রয়ী এবং বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। সরকার ইতোমধ্যে ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করেছে, যেখানে বিদ্যুত-গ্যাস-পানি-অবকাঠামো সহজলভ্য। এর পাশাপাশি স্বল্পসুদে শিল্পঋণ সুবিধা পেলে নিশ্চয়ই উৎসাহিত হবেন দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। ফলে কর্মসংস্থানও বাড়বে নিঃসন্দেহে।
×