ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যাবর্তনে অংশীদার হতে পেরে গর্বিত হোল্ডার

প্রকাশিত: ০০:২৬, ১৫ জুলাই ২০২০

প্রত্যাবর্তনে অংশীদার হতে পেরে গর্বিত হোল্ডার

এন্ডি রবার্টস বলছিলেন, ‘টাকার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের গিনিপিগ বানানো হয়েছে।’ ক্যারিবীয় কিংবদন্তি পেসারের বক্তব্য ছিল করোনা মহামারীর মাঝে যখন একের পর এক দিপক্ষীয় সিরিজ বন্ধ অথবা স্থগিত তখন উইন্ডিজের ইংল্যান্ড সফর মেনে নেয়া যায় না। জবাবে অধিনায়ক জেসন হোল্ডার বলেছেন, টাকা নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত তার দল। জাদুকরী নৈপুণ্যে সেই গর্ব আরও বাড়িয়ে দিলেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, জার্মেইন ব্ল্যাকউডরা। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিপূর্ণ সাউদাম্পটন টেস্টের শেষ দিনের শেষ বেলায় ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেটের জন্মদাতা ইংলিদের তাদেরই মাটিতে হারিয়ে করোনাকালে ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন স্মরণীয় করে রাখে ক্যারিবীয়রা। ভিভ রিচার্ডস, ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকর, কুমার সাঙ্গাকারা, বিরাট কোহলি, ভিভিএস লক্ষণের মতো গ্রেট যখন ‘জাদুকরী’ উইন্ডিজে মুগ্ধ, সব কিছুতে দোষ খোঁজা এন্ডি রবার্টসরা কিন্তু নিশ্চুপ! এ জয় ক্রিকেটের। দর্শকশূন্য দ্য রোজ বোল স্টেডিয়াম, যারা টেলিভিশন বা কোন ডিভাইসের সামনে নিজেকে আটকে রাখলেন, অথবা পরে খবরটা জানবেন উৎকণ্ঠায়, তাদের জন্য সুখবর। ক্রিকেট তার ফেরা সম্পন্ন করেছে তার রূপেই। সাউথাম্পটন-ক্ল্যাসিকে ২০০ রান তাড়ায় ২৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়েও জার্মেইন ব্লাকউডের ৯৫ রানের ইনিংসে ভর করে ইংল্যান্ডকে হতাশ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। করোনাভাইরাস মহামারীর পর প্রথম টেস্টে তারা পেয়েছে দারুণ এ জয়, ৩ টেস্টের সিরিজে এগিয়ে গেছে ১-০তে। এটি হতে পারত শুধুই ক্রিকেটের ফিরে আসার উপলক্ষ্য। তবে ৫ দিনের মাঝে বৃষ্টি, আলোক-স্বল্পতা, রিভিউ, দুই অধিনায়কের লড়াই, আগুনসম পেস, উইকেটের অসম বাউন্সে ব্যাটসম্যান-বোলারদের লড়াই, আর শেষদিনের রোমাঞ্চ- ছিল সবকিছুই। শেষদিন রোমাঞ্চকর হবে, সেটির ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগেরদিনই। সব রকমের ফলের সম্ভাবনা ছিল, শেষ সেশনে গিয়ে মিললো সেটি। বারকয়েক এই টেস্ট যাওয়া-আসা করেছে দুই দিকেই। প্রথম দিনের প্রায় পুরোটা বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ার পরও রোমাঞ্চকর সমাপ্তি, এটা বদলে যাওয়া আধুনিক টেস্টেরই প্রতিচ্ছবি। ২০০ রানের টার্গেটে ক্যারিবীয়দের দারুণ জয়ের ভাগিদার অনেকেই। প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের পথে ৪২ রান দিয়ে অধিনায়ক নিজে নিয়েছেন ৬ উইকেট। সঙ্গী গ্যাব্রিয়েল ৪। তাতে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া ইংলিশরা অলআউট ২০৪ রানে। এরপর ৩১৮ রান তুলে সফরকারীদের এগিয়ে নেয়ার নেপথ্যে দুই ব্যাটসম্যান ক্রেইগ ব্রেথওয়েট (৬৫) ও শেন ডওরিচ (৬১)। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের হয়ে ডম সিবলি (৫০) ও জ্যাক ক্রাউলি (৭৬) যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন তাতে লিডটা তিন শ’ও হয়ে যেতে পারত! স্বাগতিকদের ৩১৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে লক্ষ্যটা সামর্থ্যরে মধ্যে রাখতে এবার বড় ভূমিকা গ্যাব্রিয়েলের (৫/৭৫)। ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও হয়েছেন এই পেসার। গ্যাব্রিয়েল ম্যাচসেরা হয়েছেন তবে শেষ দিনে কঠিন পরিস্থিতিতে অনবদ্য ৯৫ রানের ইনিংসে নেপথ্যের নায়ক হয়ে থাকবেন জার্মেইন ব্ল্যাকউড। করোনাকালে প্রত্যাবর্তনের টেস্টে নেতৃত্বে-পারফর্মেন্সে হোল্ডার ছিলেন চোখ জুড়ানো। ইংল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ধসিয়ে দিয়ে ৪২ রানে নেন ৬ উইকেট। ক্যারিয়ারসেরা এই বোলিংয়ের পাশাপাশি দেখার মতো ছিল তার অধিনায়কত্ব। প্রথম ইনিংসের সময় আকাশ ছিল মেঘে ভরা। কন্ডিশনের সুবিধা নিতে স্পিনারের হাতে আর বলই দেননি। নিজেসহ বাকি তিন পেসারকে ব্যবহার করেছে বুদ্ধিদীপ্তভাবে। শুরুতেই শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের কাঁপানো স্পেল অনেকটাই এগিয়ে দেন ক্যারিবিয়ানদের। পরে ছোট ছোট স্যুয়িং আদায় করে তিনি নিজে নাকাল করেছেন ইংলিশদের। প্রথম ইনিংসে ফিল্ডিংয়ে তিনটি রিভিউ নিয়েও সাফল্য পেয়েছেন তিনি। গভীর মনোযোগ রাখা আর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ায় হোল্ডার শুরুতেই বেন স্টোকসকে হারিয়ে দেন। ৯ উইকেট নিয়ে নায়ক বনে যাওয়া পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ছিলেন আগ্রাসী আর নিখুঁত। প্রথম ইনিংসে ৬২ রানে ৪ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে ৫ উইকেট। সহায়ক কন্ডিশনে বল হাতে পেয়ে শুরুতেই ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তার আনা মঞ্চেই হোল্ডার নেচেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তো তিনিই রাজা। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে জয়ের পথ করে দিয়েছেন তিনিই। ঘণ্টায় ৯০ মাইলে বল করেছেন, তবে গতি রাখতে গিয়ে তাল হারাননি, ছিল নিখুঁত লাইন- লেন্থ। চোটের কারণে শুরুতে স্কোয়াডে না থাকা গ্যাব্রিয়েলের বোলিং ছিল দৃষ্টিসুখকর। করোনা মহামারীর পর প্রথম কোন ক্রিকেট ম্যাচ। খেলোয়াড়, ম্যাচ অফিসিয়াল, সংশ্লিষ্ট সবাইকে বারেবারে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো, জৈব সুরক্ষিত পরিবেশ বানানো আর দর্শকশূন্য মাঠের ব্যবস্থা। সাউদাম্পটন টেস্টে নতুন ছিল অনেক কিছুই। বোলাররা বল চকচকে করতে লালা ব্যবহার করতে পারেননি। এই প্রথম লালা ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে হলো একটি টেস্ট ম্যাচ। টেলিভিশনে এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি দেখা টেস্টে দর্শকরা উপভোগ করেছেন সেরা ক্রিকেট প্রদর্শনী। স্পোর্টিং উইকেটে যেমনটা হয় শুরুতে সুবিধা পেয়েছেন পেসাররা। টিকতে পারলে ব্যাটসম্যানদের জন্যও ছিল অনেক কিছু। কন্ডিশন সহায়ক থাকায় মিলেছে মুভমেন্ট। লালা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বেন স্টোকসকে দেখা গেছে রিভার্স সুইং পেতে। ক্রিকেটাররা লালা ব্যবহার না করলেও ঘাম ব্যবহার করেই কাজ সেরেছেন। ব্যাটে-বলের লড়াই তাই হয়েছে জম্পেশ। শেষ দিনের শেষ সেশন পর্যন্ত ম্যাচ ছিল দোলাচলে। উইন্ডিজের জয়ের রেশ যে ব্যাপকভাবে ক্রিকেট বিশ্বে লেগেছে, ম্যাচের পরো সোশ্যাল মিডিয়া তার প্রমাণ। করোনার কারণেই নিরপেক্ষ ম্যাচ অফিসিয়ালের ব্যবস্থা করা যায়নি। আম্পায়ার, টিভি আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি, রিজার্ভ আম্পায়ার সবাই ছিলেন ইংল্যান্ডের। মাঠের দুই আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ ও রিচার্ড ক্যাটেলবোরো প্রথম ইনিংসেই চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। একবার নয় তিন তিনবার তাদের দেয়া নট আউটের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সাফল্য পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
×