ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৯ শিল্পীর ক্যানভাসে নিসর্গের নান্দনিক আখ্যান

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ১৫ জুলাই ২০২০

১৯ শিল্পীর ক্যানভাসে নিসর্গের নান্দনিক আখ্যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্যানভাসজুড়ে টলমল করছে জলের ধারা। জলাশয়ের একাংশে ঝুঁকে পড়েছে ঘন সবুজে আচ্ছাদিত একটি গাছের ডাল। রাশি রাশি পাতার ভেতর থেকে উঁকি মারছে হলদে ফুল। আরেকটি চিত্রকর্মে উদ্ভাসিত হয়েছে বরফে ঢাকা পাহাড়ী জনপদ। আরেক শিল্পীর ছবিতে অন্তরীক্ষে দৃশ্যমান মেঘের ঘনঘটা। আর নিচে ঢেউ তোলা জলরাশি চিরে এগিয়ে চলেছে মাছ ধরা নৌকা। নিসর্গের এমন নান্দনিক আখ্যান মেলে ধরা শতাধিক ছবি এঁকেছেন একঝাঁক নবীন-প্রবীণ চিত্রকর। ১৯ শিল্পীর ক্যানভাসে সজ্জিত প্রদর্শনীটির শিরোনাম সেলিব্রেটিং নেচার। প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশের দৃশ্যময় চিত্রকর্মগুলো শিল্পরসিকের নয়নে ছড়ায় প্রশান্তির অনুভব। সেসব চিত্রকর্মে সজ্জিত প্রদর্শনীটি চলছে উত্তরার গ্যালারি কায়ায়। মহামারির দুঃসময়ে নিউ নিউরমাল আখ্যা দেয়া হচ্ছে এই শিল্পায়োজনকে। অধিকাংশ দর্শক প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখছেন গ্যালারি কায়ার ফেসবুক পেজে। এমনকি শিল্প-সংগ্রাহকরাও একইভাবে ছবি দেখার পর সংগ্রহ করেছেন পছন্দের চিত্রকর্মটি। আবার খুব আগ্রহী কেউ চাইলে গ্যালারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরাসরি প্রদর্শনালয়ে হাজির হয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবলোকন করেছেন প্রদর্শনী। প্রশ্ন জাগেÑকতটা সাড়া পড়েছে মহামারীর সময় অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীতে। উত্তরে গ্যালারি কায়ার পরিচালক চিত্রশিল্পী গৌতম চক্রবর্তী বলেন, এখন সময়টা অন্যরকম। একইসঙ্গে শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ এক সময়। এমন সময় আমরা আগে দেখিনি। তবে এই সময়েও প্রদর্শনী নিয়ে দর্শকের যেটুকু আগ্রহ দেখেছি তাতে ভাল লেগেছে। এমনকি বেশ কিছু চিত্রকর্ম বিক্রিও হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিল্প-সংগ্রাহকরা গ্যালারির ফেসবুক পেজে ছবি দেখে পছন্দেরটি সংগ্রহ করেছেন। সব মিলিয়ে এ প্রদর্শনী আয়োজনের মাধ্যমে নিজেও মানসিক শক্তি অর্জন করেছি। কারণ, এর আগে করোনার কারণে টানা চার মাস বসেছিলাম। কোন প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পারিনি। কিন্তু আর কত? যার যার নিজস্ব কাজটা তো করে যেতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা পরের প্রদর্শনী আয়োজনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রদর্শনীর ছবিতে উঠে এসেছে চিরায়ত বাংলার প্রকৃতি। প্রতিটি ক্যানভাসই যেন দিয়ে যায় নতুন বাস্তবতার ইঙ্গিত। সেটি হচ্ছে, করোনাকালে মানুষ যখন ঘরবন্দী তখন প্রকৃতি উদারভাবে মেলে দিয়েছে তার সৌন্দর্যের সবটুকু। চারপাশে উচ্চকিত হচ্ছে নিসর্গের জয়গান। কমেছে নগরের যান্ত্রিক ব্যস্ততা, হ্রাস পেয়েছে প্রকৃতিজুড়ে দূষণের কালো ছায়া। আর এতেই প্রকৃতি হয়ে উঠেছে নির্মল, ¯িœগ্ধ, সতেজ। প্রকৃতির সেই সতেজ ¯িœগ্ধ রূপই ফুটে উঠেছে শিল্পীদের ক্যানভাসে। আদিগন্ত প্রকৃতি, গ্রামের মেঠো পথ, নদীতে বাঁধা নৌকা, অরণ্য, পাহাড়-নিসর্গের এমন মনরাঙানো রূপে সেজেছেন এই শিল্পায়োজন। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া শিল্পীরা হলেন- হামিদুজ্জামান খান, জামাল আহমেদ, আব্দুল্লাহ আল বশীর, আহমেদ শামুসদ্দোহা, আলপ্তগীন তুষার, আনিসুজ্জামান, আশরাফুল হাসান, আজমীর হোসেন, চন্দ্র শেখর দে, কামালুদ্দীন, মোহাম্মদ ইকবাল, মং শং শ, রণজিৎ দাস, রুহুল আমিন তারেক, শাহানুর মামুন, শেখ আফজাল হোসেন, সোহাগ পারভেজ, সুমন ওয়াহেদ এবং তরুণ ঘোষ। জলরং, তেলরং, এ্যাক্রেলিক, মিশ্র মাধ্যম, চারকোল ও প্যাস্টেল মাধ্যমে চিত্রিত ১২০টি চিত্রকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রদর্শনী। ২৬ জুন সূচনা হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে আগামী ১৭ জুলাই।
×