ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনে চুক্তি সই

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে চীনা বিনিয়োগ আসছে

প্রকাশিত: ২৩:২২, ১৫ জুলাই ২০২০

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে চীনা বিনিয়োগ আসছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে চীনের বড় বিনিয়োগ আসছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ মেগাওয়াট সৌর এবং বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যে চীন এবং বাংলাদেশ একটি যৌথ মূলধনী কোম্পানি গঠনের চুক্তি করেছে। এজন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। সরাসরি বিনিয়োগ পদ্ধতিতে চীন থেকে এই অর্থ আনা হবে। মঙ্গলবার বিকেলে অনলাইনে চুক্তিটি করতে ঢাকা এবং বেজিং সংযুক্ত হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি)’র মধ্যে চুক্তিটি সই হয়। বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) রিনিউএ্যাবল হবে নতুন এই কোম্পানির নাম। বেজিং থেকে সিএমসির চেয়ারম্যান রুয়ান গুয়াং এবং ঢাকা থেকে এনডব্লিউপিজিসিএল’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী এ. এম. খোরশেদুল আলম চুক্তিতে সই করেন। এ সময় রুয়ান গুয়াং বলেন, বাংলাদেশের পাশে বিশ^স্ত বন্ধুর মতো প্রযুক্তি এবং দক্ষকর্মী বাহিনী নিয়ে পাশে থাকবে সিএমসি। বাংলাদেশের সঙ্গে সুদীর্ঘ ৩০ বছরের পথ চলার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নে সব সময় সহযোগিতা করতে চাই। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, এর মধ্যেদিয়ে ঢাকা বেজিং’র সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এর আগে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) পায়রাতে দুটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে একটি কেন্দ্রর প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করেছে। প্রকৌশলী এ. এম. খোরশেদুল আলম চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং সুইডেন শতভাগ বিদ্যুত উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সরকারও চাইছে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন করতে। তিনি বলেন, আমরা ৫০০ মেগাওয়াটের যে কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি সেখানে সিরাজগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট, পাবনার সুজানগরে ৬০ মেগাওয়াট এবং বেড়াতে ১০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীর পায়রাতে ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এখন দেশে ২৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। সেই হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুত উৎপাদন হওয়ার কথা দুই হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। কিন্তু এখন সেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন মাত্র ৩৬০ মেগাওয়াট বলে দাবি করা হয়। যদিও এরমধ্যে ৫০ মেগাওয়াটও গ্রিড সংযুক্ত নয়। দেশের টেকনাফে একটি ২০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র ছাড়া আর কোথাও বড় সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র নেই। সরকার বেসরকারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য সরকারী কোম্পানিকে দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের চেষ্টা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিদ্যুত জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অকৃষি জমির অপ্রতুলতার জন্য সৌর শক্তি ব্যবহার করে বড় আকারের বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা যাচ্ছে না। ছাদে সৌর বিদ্যুত এবং ভাসমান সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন উৎস হতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুত উৎপাদনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জি মিং বলেন, চীন মোট বিদ্যুত উৎপাদনের ৪২ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন করছে। বাংলাদেশের এই উদ্যোগের ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমবে। যা পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। কোম্পানিটি গঠনের জন্য গত বছর ২৭ আগস্ট সিএমসি এবং এনডব্লিউপিজিসিএল একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। গত ৮ জুন মন্ত্রিসভা কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করে। কোম্পানিতে বাংলাদেশ এবং চীনের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। বিদ্যুত সচিব ড. সুলতান আহমেদের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বিপিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ বেলায়েত হোসেন বক্তব্য রাখেন।
×