ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাটে মাস্ক, গ্লাভস হেড কভার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে ডিএনসিসি

ঈদের দিনসহ ৫ দিন ৬ স্থানে বসবে পশুর হাট

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৫ জুলাই ২০২০

ঈদের দিনসহ ৫ দিন ৬ স্থানে বসবে পশুর হাট

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটে আসতে চাইলে বাধ্যতামূলকভাবে ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারের নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের মুখে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার পরে পশুর হাটে আসতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। অন্যথায় কোন ব্যক্তিকেই হাটে প্রবেশ করতে দেবে না সংস্থাটি। একইসঙ্গে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না ও ক্রেতার সঙ্গে অনেক লোককে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কঠোরভাবে পরিপালনের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। কোন ব্যক্তি বা ইজারা সংশ্লিষ্ট কেউ এসব নির্দেশ না মানলে করোনা রোধ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ এবং সিটি কর্পোরেশন আইন-২০০৯ ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন-বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, সংস্থাটি ঈদের দিনসহ একটানা মোট পাঁচদিন ও ডিএনসিসির ৬টি স্থানে হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানা, হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী রাস্তার ওপরে পশুর হাট না বসানো, চিহ্নিত স্থানের বাইরে রাস্তার ওপর হাট স্থাপন না করা, হাটের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হাটে ওয়াচ টাওয়ার বসানো, ইজারা গ্রহীতা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখা, হাটে জেনারেটরের ব্যবস্থা করাসহ ইজারাদারদের বেশ কিছু শর্ত প্রদান করেছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে সংস্থাটি পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা ইজারাদার ও দর্শনার্থীরা যেসব নির্দেশনা অব্যশ্যই মানতে হবে তাও ঠিক করে দিয়েছে ডিএনসিসি। এদিকে হাটে গিয়ে পশু কেনার চেয়ে অনলাইনে পশু কিনতে নাগরিকদের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আজহায় কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অন্য বছরের ন্যায় হাট বসতে দেয়া হবে না। পশুর হাট পরিচালনার জন্য ইজারাদারগণ এসব শর্ত না মানলে তাদের ইজারা বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ডিএনসিসি সূত্র জানায়, ডিএনসিসি) এলাকায় মোট ৬টি হাট বসবে। কোনক্রমেই ৫ দিনের বেশি ও নির্ধারিত সীমানার বাইরে (নক্সা অনুসারে) কোন হাট বসানো যাবে না। করোনা সংক্রমণ রোধে ইজারাদারকে অস্থায়ী পশুর হাটে বাধ্যতামূলকভাবে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা হচ্ছে, হাটে প্রবেশ পথে টিভিস্ক্রীনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রবেশকারীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা ও গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। হাটে প্রত্যেক প্রবেশকারীকে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, হেড ক্যাপ ও হ্যান্ড- স্যানিটাইজার নিয়ে হাটে প্রবেশ করতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও হেড কভার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং এ কাজ তদারকির জন্য মনিটারিং টিম রাখতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি সংবলিত ব্যানার, পোস্টার টাঙ্গানোসহ এতদ্বিষয়ে মাইকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা, জীবাণুনাশক দিয়ে হাটের সর্বত্র ও আশপাশের সংশ্লিষ্ট জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও ক্রেতা, বিক্রেতা ও ইজারাদারের নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সকলকে মাস্ক, গ্লাভস, হেড কভার পরে হাটে আসতে হবে। হাটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাবান, পানির ড্রাম ও বেসিন রাখতে হবে। হাটে প্রবেশ এবং বাইরের জন্য পৃথক পৃথক গেট ব্যবহার করা, নির্ধারিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাটে প্রবেশ বা বের হতে হবে। একাধিক প্রবেশ পথ হলে প্রত্যেক প্রবেশ পথেই টিভি স্ক্রীনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার থাকবে। জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের নিমিত্তে করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো এলইডি স্ক্রীনে সার্বক্ষণিকভাবে দেখানো হবে। হাটে কাজ করতে প্রশিক্ষিত ও স্বেচ্ছাসেবক টিম থাকবে। ক্রয়কারী সঙ্গে করে অনেক লোক নিয়ে হাটে আসতে পারবে না এবং ক্রেতাকে নির্ধারিত দূরত্ব থেকে গরু দেখতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতাকে অনলাইনে পশু ক্রয়-বিক্রয়ে উৎসাহিত করতে হবে। হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাস্টবিন স্থাপন করা হবে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত মেডিক্যাল বর্জ্য যেমন- গ্লাভস, মাস্ক হেড কভার, সেনিটাইজার বোতল রাখার জন্য পৃথক ডাস্টবিন রাখা হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন নিশ্চিত করবে ডিএনসিসি। এছাড়া ইজারাদারগণ চুক্তিপত্রের যে কোন শর্ত লংঘন করলে কোন প্রকার কারণ দর্শানো নোটিস ছাড়াই ইজারা বাতিল করবে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, ইজারা গ্রহীতা নিজ ব্যবস্থাপনায় হাটের চৌহদ্দি সংরক্ষণ পূর্বক চৌহদ্দির বাইরে যাতে পশুর হাট প্রসারিত না হয় তা নিশ্চিত করবেন। পশুর বিক্রয় মূল্যের ওপর সরকার অনুমোদিত শতকরা ৫ ভাগ হারে হাসিল আদায় করতে হবে। ইজারা গ্রহীতা নিজ খরচে বাজারে দৃশ্যমান একাধিক স্থানে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য টোল চার্ট প্রদর্শনের ব্যবস্থা করবেন। হাট হস্তান্তর করার পূর্বে কোন টোল আদায় করা যাবে না। বিধি ও নিয়মানুযায়ী হাসিল (ফিস) আদায় হয় কিনা তা পরিদর্শন ও তদারকি করাতে ডিএনসিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পরিদর্শন করবেন। কোনভাবেই অন্যের নিকট ইজারা প্রদান বা হস্তান্তর বা সাব-লিজ দেয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতীত কোন হাটের অংশ বিশেষ অন্যত্র স্থানান্তর করা বা নতুন কোন হাট তৈরি করা যাবে না। হাটের খালি জমিতে কোন প্রকার অবকাঠামো নির্মাণ, হাটের স্থানের কোন প্রকার ক্ষতি বা হাটের সীমানা বৃদ্ধি বা সংকোচন করতে পারবেন না ইজারাদারগণ। এছাড়া হাটে পশু বেঁধে রাখার জন্য বা অন্য কোন কাজে রাস্তার ইলেকট্রিক পিলার ব্যবহার করা যাবে না। হাটের যে কোন দুর্ঘটনার জন্য ইজারা গ্রহীতা নিজেই দায়ী থাকবে। ইজারা গ্রহীতা নিজ দায়িত্বে বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ করবে এবং স¤পূর্ণ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করবে। হাটে জেনারেটরের ব্যবস্থা করতে হবে। ইজারাদার হাট এলাকায় নিজ খরচে পুলিশ/আনসার মোতায়েনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া হাটের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব কর্মী নিযুক্ত করবে। পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে হাটের মধ্যে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখা যাবে না। হাট পরিচালনার জন্য রাস্তার ও অন্যান্য অবকাঠামোর ক্ষতি করলে জামানত বাজেয়াফতকরণসহ আইনানুগ ক্ষতিপূরণ ধার্য্য করা হবে এবং ইজারা গ্রহীতা তা পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে। ইজারা গ্রহীতা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখবেন। নাগরিক দুর্দশা লাঘবে ইজারা গ্রহীতা জোরপূর্বক কোন পশুকে হাটে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করতে পারবে না এবং হাটের আশপাশের সড়কপথ বা জলপথ দিয়ে গমনকারী কোন পশুর ওপর জোরপূর্বক কোন হাসিল (ফিস) আদায় করতে পারবে না। এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে ডিএনসিসির ভিজিলেন্স টিম কাজ করবে। এছাড়া রাস্তায় যান ও জন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে এমন রাস্তার পার্শ্বে/রাস্তার এমন কোন জায়গায় র‌্যাম তৈরি করে গবাদি পশু ট্রাক হতে লোড-আনলোড করা যাবে না। হাটের মধ্যে পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণপূর্বক পশু নামানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। হাটের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি ওয়াচ টাওয়ার বসাতে হবে। পর্যাপ্ত সংখ্যক অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করতে হবে। অস্থায়ী টয়লেটের স্থানে হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক সাবান রাখতে হবে ইজারাদারদের। জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন স্থাপন, ক্যান্টিন স্থাপন করতে হবে। ইজারা গ্রহীতাকে হাসিল আদায়ের সময় পশুর ক্রেতাকে বড় আকারের একটি পলিথিন (পশুর নাড়িভুঁড়ি ভরে ডাস্টবিনে রাখার জন্য) সরবরাহ করবে। হাট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইজারাদারের নিজ দায়িত্বে হাটের বাঁশ-খুঁটি অপসারণ করতে হবে এর ব্যত্যয় ঘটলে অপসারণ খরচ তার জামানত হতে কর্তন করবে ডিএনসিসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, কোরবানির পশুর হাটে এবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে। করোনার বিস্তার রোধে আমরা ঈদের দিনসহ একটানা মোট ৫ দিন ও ডিএনসিসিতে ৬টি স্থানে হাট বসাবো। এসব হাটে বাধ্যতামূলকভাবে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদারের নিয়োজিত সংশ্লিষ্টদের মুখে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার পড়ে পশুর হাটে আসতে হবে। অন্যথায় কোন ব্যক্তিকেই হাটে প্রবেশ করতে দেব না। একইসঙ্গে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিকে না আসতে আমরা অনুরোধ করেছি। তাছাড়া পশু ক্রেতার সঙ্গে অনেক লোককে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
×