ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকমান্ডের নানামুখী কৌশল

সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ১৫ জুলাই ২০২০

সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে চায় বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর ফলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে স্থবির হয়ে পড়েছে দলটি। এ পরিস্থিতিতে আবার নতুন উদ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি মাঠের রাজনীতিও জোরদার করতে চায় তারা। এ জন্য নানামুখী কর্ম কৌশল গ্রহণ করেছে দলীয় হাইকমান্ড। ইতিমধ্যেই সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সূত্র মতে, বিএনপির নির্বাহী কমিটিসহ সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ কমিটিই মেয়াদউত্তীর্ণ। দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর অনেক আগে থেকেই সাংগঠনিক কার্যক্রমের গতি থামিয়ে দেয়া হয়। আর করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর সাংগঠনিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। এর ফলে এসব কমিটিতে থাকা নেতাকর্মীরা দলবিমুখ হয়ে পড়ায় সর্বস্তরের সাধারণ নেতাকর্মীরাও হতাশ হয়ে দলীয় কর্মকা- থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে। লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্র্সন তারেক রহমানের নির্দেশে সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কার্যক্রম চললেও এ নিয়ে নানান সমস্যা দেখা দেয়ায় এক পর্যায়ে গতি থেমে যায়। এর ফলে সারাদেশের সর্বস্তরে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করে। এর মধ্যেই এ বছর মার্চ থেকে দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরু হলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়েই সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে দেশে করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সার্বক্ষণিক গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থান করলেও বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। আবারও মুক্তির সময় বাড়িয়ে নেয়া যায় কি না এমন চিন্তাভাবনা থেকে তিনি এখন দলীয় রাজনীতি থেকে দূরে অবস্থান করছেন। দলের ক’জন সিনিয়র নেতা তার সঙ্গে দেখা করেও সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পর্কে কোন নির্দেশনা পাননি। তাই তারাও এতদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে এত সিরিয়াস ছিলেন না। তবে সম্প্রতি লন্ডন থেকে তারেক রহমান সিনিয়র নেতাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানান। আর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে দলের কিছু নেতা এখন এ বিষয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর কয়েক দফায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় বিএনপি। সর্বশেষ ২৬ জুনের ঘোষণা অনুসারে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম আজ ১৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আর আগামীকাল ১৬ জুলাই থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালু করবে বিএনপি। এ সময় সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিট পুনর্গঠনসহ মাঠের রাজনীতিতেও সক্রিয় হতে চায় দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপির ২৫ জুনের প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষিতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম ১৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি এবং সামাজিক দূরত্ব বিধি অনুসরণ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম ১৬ জুলাই থেকে পর্যায়ক্রমে সীমিত আকারে শুরু করা হবে। উল্লেখ্য, এর আগে প্রথম দফায় ২২ মার্চ বিএনপির পক্ষ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিতের কথা জানানো হয়। এর পর দ্বিতীয় দফায় তা ২৫ মে পর্যন্ত এবং তৃতীয় দফায় ২৫ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চতুর্থ দফায় ২৫ জুনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম ১৫ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। সূত্র জানায়, ঈদের আগেই সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে কেন্দ্র থেকে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে কোন এলাকায় সংগঠনের কি অবস্থা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হবে। এর পর কেন্দ্রীয় নেতারা আসন্ন ঈদের সময় নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে তৃণমূল পর্যায়ে দল পুনর্গঠনের প্রস্তুতি শুরু করবেন। সেই সঙ্গে তারা নিজ নিজ এলাকায় বিভিন্ন ইউনিটের সংগঠনিক অবস্থা কেমন সে বিষয়ে রিপোর্ট প্রদান করবেন। এরপর কেন্দ্র থেকে সমন্বয় করে পুরোদমে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু হবে। এদিকে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কর্মহীন হওয়ার কারণে অসহায় ও দুস্থদের এবং বন্যা দুর্গত এলাকার সহায়সম্বলহীন মানুষদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করবে বিএনপি। আর ঈদের পর সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে দলীয় কার্যক্রম গতিশীল করার চেষ্টা করবে। ইতিমধ্যেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের এ কথা জানানো হয়েছে। আর জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও নিজ স্বার্থেই তাদের এলাকায় দল পুনর্গঠন ও কর্মসূচী পালন করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলের হতাশ নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার বিভিন্নভাবে মাঠের কর্মসূচী পালনের চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি বিএনপি। তবে দলের অস্তিত্বের স্বার্থে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মনে করছেন এবারের চেষ্টায় সফলতা আসবে। তাই বিএনপির বিভিন্ন স্তরের কিছু নেতা নতুন উদ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের চেষ্টায় আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিহীন হয়ে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন কারণে মাঠের রাজনীতিতে স্বাভাবিকভাবে অংশ নিতে পারেনি নেতাকর্মীরা। তাই ১৬ জুলাই থেকে নতুন উদ্যমে বিএনপি সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি আস্তে আস্তে মাঠের রাজনীতিতেও গতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। এ চেষ্টায় সফলতা আসবে বলে দলীয় হাইকমান্ডসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। জানা যায়, বিএনপির ৭৮ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে সিংহভাগের কমিটিই মেয়াদউত্তীর্ণ। এসব জেলার আওতায় দলের অন্যান্য ইউনিট কমিটি ও বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিও মেয়াদউত্তীর্ণ। তাই জেলা কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও সর্বস্তরে পুনর্গঠন করার চেষ্টা চলছে। এভাবে সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন করে সর্বশেষে সুবিধাজনক সময়ে বিএনপির নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার কাজে হাত দেয়া হবে। সূত্র মতে, এবার নতুন উদ্যমে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের জন্য ক’জন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। তারা ইতিমধ্যেই ফাইলওয়ার্ক শুরু করে দিয়েছেন। সর্বস্তরে আগের কমিটিতে কারা কারা ছিলেন এবং দলীয় কর্মকা-ে তাদের অবস্থান কেমন ছিল তা পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
×