ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কারও সঙ্গে ছবি তুললেই তিনি পৃষ্ঠপোষক হয়ে যান না

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৫ জুলাই ২০২০

কারও সঙ্গে ছবি তুললেই তিনি পৃষ্ঠপোষক হয়ে যান না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতারণাকে নির্ভরযোগ্য পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে রিজেন্ট চেয়ারম্যান সাহেদ করিম। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঠগবাজি করে কীভাবে এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে, যা একটি অনন্য খারাপ দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাব সদর দফতরে ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যাম শাখার পরিচালক লে. ক. আশিক বিল্লাহ। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক, রাজনীতিক, আমলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সাহেদের ছবি তোলার বিষয়ে লে.কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, সাহেদের ছবির বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা দরকার। কারও সঙ্গে কারও ছবি থাকা মানে এই নয় যে, তিনি তার পৃষ্ঠপোষক। যে কারও সঙ্গে বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মানুষ ছবি তুলতে চাইবেই। এটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তার মানে এই নয় যে, ওই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সাহেদকে একজন প্রতারক জেনেও তার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন কারও সঙ্গে ছবি তোলেন সেটি নেহায়েতই সৌজন্যবশত। এর পেছনে যদি কারও পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, সেটি নিশ্চয়ই তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে খতিয়ে দেখবেন। তিনি বলেন, আমাদের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত ছিল, যাতে সে কোনভাবেই দেশত্যাগ করতে না পারে, তাই সে দেশ থকে পালিয়ে যেতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাবের কাছে আরও অভিযোগ রয়েছে, রিজেন্ট কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের জাল সনদ দেয়া হতো। র‌্যাবের পরিচালক আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, এতে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। যে সনদগুলো শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে, তা জাল। এই সনদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিজীবন ও শিক্ষা জীবনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, যে কোন সময়, যে কোনও মুহূর্তে সাহেদকে গ্রেফতার করা হবে। পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে সারাদেশের পাশাপাশি সীমান্তেও নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। যাতে কোনভাবেই সাহেদ দেশত্যাগ না করতে পারে। আশিক বিল্লাহ বলেন, একটি বিষয় স্পষ্ট করে সবাইকে জানাতে চাই, সাহেদের পাসপোর্ট আমাদের কাছে। আমরা জব্দ করেছি। সে যদি দেশত্যাগ করতে চায়, তাহলে সেটা তার জন্য অবৈধ পন্থা হবে। সে যাতে কোনভাবেই দেশত্যাগ না করতে পারে, সেজন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ রয়েছে। র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। গ্রেফতার না করতে পারার কারণ সে প্রতারক। এর চেয়ে বড় অপরাধীদের গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সাহেদকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এই ঘটনায় সাহেদ ছাড়াও অন্য আসামি গ্রেফতারের জন্য র‌্যাবসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। মূল তদন্তকারী কর্মকর্তা সব অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মূল আসামি সাহেদকে গ্রেফতারে র‌্যাবের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি। এ মামলার অন্য আসামিও এই মুহূর্তে পলাতক রয়েছে বলে উল্লেখ করে আশিক বিল্লাহ বলেন, সাহেদ গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করত। আমরা তার গানম্যান ও তাদের অস্ত্রের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি। তার পাঁচ থেকে সাত জনের গানম্যানের দল ছিল। তাদের সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছি। তাদের অস্ত্রের উৎস ও অস্ত্রের বৈধতা খতিয়ে দেখছি। ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে চেক নিয়েও প্রতারণা করেছে। যা ব্যাংক কর্মকর্তাদেরও বিস্মিত করেছে। র‌্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেন-সাহেদ পাওনাদারদের যে চেক দিত, তাতে একেক চেকে একেক স্বাক্ষর করত। সত্যিকারের স্বাক্ষর সে দিতো না– যা ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিস্মিত করেছে। এসব চেক ব্যাংক থেকে বাউন্স হয়েছে। এই জালিয়াতির ঘটনায় অভিজ্ঞ ব্যাংকাররাও অবাক হয়েছেন। সাহেদ তার বৈধ চেকে অবৈধ স্বাক্ষর করেছে। অর্থাৎ ব্যাংকে তার যে স্বাক্ষর রক্ষিত আছে, সেই স্বাক্ষর না দিয়ে ভিন্ন স্বাক্ষর দিত। তাই পাওনাদাররা ব্যাংক থেকে ওই চেক দিয়ে টাকা তুলতে পারেনি। সব চেক ব্যাংকে ডিসঅনার হয়েছে। র‌্যাব জানিয়েছে, সারাদেশে সাহেদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অর্ধশতকেরও বেশি মামলার খবর রয়েছে- যার বেশিরভাগই প্রতারণার মামলা। তার বিষয়ে র‌্যাব আরও খোঁজ খবর নিচ্ছে। যদি কারও অভিযোগ থাকে তাহলে জানালে -এতে তদন্তে র‌্যাবের সুবিধা হবে।
×