ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যাঞ্চলেও

১৯ দিন ধরে বন্যায় ভাসছে উত্তরের বিভিন্ন জেলা

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৫ জুলাই ২০২০

১৯ দিন ধরে বন্যায় ভাসছে উত্তরের বিভিন্ন জেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা ১৯ দিন বন্যার কবলে দেশ। গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে দেশের উত্তরের বিভিন্ন জেলা বন্যায় ভাসছে। এই বন্যা এখন ছড়িয়ে পড়েছে মধ্যাঞ্চলে। বন্যার অবনতি হয়েছে উত্তর পূর্বাঞ্চলেও। মাঝখানে দুদিন বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বর্তমানে অব্যাহতভাবে অবনতি ঘটছে। বন্যার বিস্তৃতি ঘটছে দ্রুত। দেশের ১৭ জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ার আভাস দিয়েছে। ফলে এই সময়ের মধ্যে আরও ১০ জেলায় বন্যার বিস্তৃতি ঘটতে পারে। তারা জানায়, এখন পর্যন্ত দেশের ২৫ শতাংশ এলাকা বন্যার কবলে রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান বলেছেন, বর্তমানে দেশের ১৭ জেলায় বন্যার বিস্তৃতি ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ মানুষ। চলমান বন্যা ২৩ জেলায় বিস্তৃতি লাভ করবে। তা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বন্যা ভয়াবহ রূপ না নিলেও এই বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে চলেছে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যা স্থায়ী হলে তা ইতিহাসের রেকর্ড ৪৩ দিন বন্যার কবলে থাকবে দেশের বিভিন্ন এলাকা। এর আগে দেশে ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়া। ওই দুটি বন্যার স্থিতিও ও বিস্তৃতি হয়েছিল অনেক। ১৯৯৮ সালের বন্যার স্থায়িত্ব টানা দিন ৩৩। ওই বছর আগস্ট মাসজুড়েই সারাদেশ বন্যার কবলে ছিল। তবে গত বছরও বন্যার স্থায়িত্ব ছিল ১৭দিন। এবার ইতোমধ্যে ১৯ দিন হতে চলেছে বন্যার স্থায়িত্ব। তারা জানায়, ’৯৮-এর বন্যায় দেশের ৬৩ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। ১৯৮৮ সালের বন্যায় দেশের ৬৭ শতাংশ ও ২০০৭-এর বন্যায় ৫৩ শতাংশ এলাকা ডুবে যায়। তবে চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ২৫ শতাংশ এলাকা ডুবেছে। এবার দেশের ৪০ শতাংশ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হতে পারে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, যে হারে নদীগুলোর পানি বাড়ছে তাতে সামনে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। বিশেষ করে আগামী ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত দেশের সব নদ-নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে পারে। বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আগামী ৫ দিন বাড়তে পারে। ২০ জুলাই নাগাদ তা স্থিতিশীল হতে পারে। এর ফলে আগামী ৭ দিন কুড়িগ্রাম, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে টাঙ্গাইল জেলার এলাসিন পর্যবেক্ষণ স্টেশন ও মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা স্টেশনে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে এসব জেলায় বন্যার স্থায়িত্ব হতে পারে দিন দশেক। তারা জানায়, আগামী সাত দিনে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে এবং মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকূল পয়েন্টে পানি বাড়তে থাকবে। এই সময়ে রাজবাড়ী জেলার বন্যা পরিস্থিতি আর অবনতি হতে পারে। ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর পানি বাড়লেও বিপদসীমার উপরে যাওয়ার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের নদ-নদীগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৬৪টি পয়েন্টে পানি বেড়েছে। এর মধ্যে ২৩টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ৩৪ স্টেশনে পানি কমেছে। ৩টি পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও রংপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, নওগাঁ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীর ব্রিফিং ॥ এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য তুলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধিটা অব্যাহত থাকবে। কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় পানির সমতল কমছে, এটা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করবে। ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলার পানি কমবে। গত ২৭ জুন থেকে যে বন্যা শুরু হয়েছিল সেটা আগাম বন্যা ছিল, গত ৬ ও ৭ জুলাই থেকে উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু ১১ জুলাই থেকে আবার পানি বেড়েছে। পানি ১৭ জুলাই পর্যন্ত সর্বোচ্চ বাড়বে। সেই বৃদ্ধিটা আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ স্থায়ী হবে। ২৩টি জেলায় বন্যা বিস্তৃতি লাভ করবে। তিনি বলেন, মেঘালয়, চেরাপুঞ্জি, অসম, ত্রিপুরা, চীন ও নেপালের পানি এসে দেশে এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই মুহূর্তে বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১৭টি, মোট বন্যা আক্রান্ত ইউনিয়নের সংখ্যা ৪৬৪টি, পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৯৪ হাজার ২৭৪টি, বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ জন। তিনি বলেন, ‘বন্যার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে যাতে মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে যেতে পারে সেজন্য বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে আট হাজার ২১০ টন চাল, দুই কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গো-খাদ্য কেনার জন্য ৪৮ লাখ টাকা এবং শিশুখাদ্য কেনার জন্য ৪৮ লাখ টাকা আমরা দিয়েছি। কোথাও কোথাও নদী ভাঙ্গনে ঘর ভেঙ্গেছে, এজন্য ঘর মেরামতে ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিন, নয় লাখ টাকা নগদ দিয়েছি। তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা যদি ত্রাণ প্রস্তুত ও বিতরণের কাজে অংশগ্রহণ করেন তাহলে অতীতে যেমন বড় বড় বন্যা মোকাবিলা করেছি, একইভাবে এবারও মোকাবিলা করতে পারব, মানুষের দুঃখকষ্ট লাঘব করতে পারব। যে ১২টি জেলা বন্যাকবলিত এবং আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, আশ্রয় কেন্দ্রে লোক উঠেছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি, শুধু রান্না করা খাবার তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। ইতোমধ্যে এক হাজার ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে, সেখানে ২০ হাজার ১০ জন আশ্রয় নিয়েছে বলেও জানান এনামুর রহমান।
×