ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জোট বাঁধছেন প্রতারিতরা

করোনার নকল সনদ ॥ সাবরিনার বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ২৩:০০, ১৫ জুলাই ২০২০

করোনার নকল সনদ ॥ সাবরিনার বিরুদ্ধে মামলা

আজাদ সুলায়মান ॥ সাহেদের মতো ডাঃ সাবরিনার বিরুদ্ধে খুলতে শুরু করেছেন প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা। একজন ভুক্তভোগী তার বিরুদ্বে করোনার নকল সনদ প্রদানের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া আরও কজন প্রতারিত নারী পুরুষ তেজগাঁও থানা ও ডিবি অফিসের সামনে ভিড় জমান। এদিকে তেজগাঁও থানায় জেকেজির বিরদ্ধে দায়ের করা প্রতারণার মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগে হ¯তান্তর করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ওই মামলার তদন্তে এ পরিবর্তন আনা হয়। জেকেজির চেয়ারম্যান আলোচিত চিকিৎসক সাবরিনা আরিফকে ওই একই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবিতে নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি চিকিৎসার নামে যে প্রতারণা করেছে- সেখানে তার ভূমিকাসহ সংশ্লিষ্টতার আদ্যোপান্ত খোঁজা হবে। এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, জেকেজির বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত আমরা করছি। ওই মামলায় সোমবার ডাঃ সাবরিনা আরিফকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ড চেয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে তেজজগাঁও থানার পরিদর্শক হাসনাত খন্দকার। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ডিবি সূত্র জানিয়েছে- ডাঃ সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলেই সে অসুস্থতার ভান করে। কৌশলে এড়িয়ে যায় অনেক বিষয়। নিজেকে বরাবরই আগের মতোই জিকেজির চেয়ারম্যান নন বলে দাবি করছেন। কিছু কথা বারবারই একই বাক্যে হুবহু দিচ্ছে। সাবরিনাকে গ্রেফতারের আগে তার স্বামী আরিফ চৌধুরীর দেয়া তথ্যের সঙ্গে অনেক কিছুই গরমিল হচ্ছে। এই দম্পতির গুলশানের বাসায় কারা কারা যাতায়াত করতেন, কোভিড পরীক্ষার প্রতারণায় ঠিক কতজন জড়িত, কত মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছে- সেই টাকা কোথায় রাখা বা পাচার করা হয়েছে মূলত এসব বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডিবি সূত্রের মতে-সাবরিনা আরিফ দম্পতির কিভাবে কোভিড পরীক্ষার অনুমতি পেলো সেটাই তদন্তের মুখ্য বিষয়। এজন্য নজরদারিতে রাখা হযেছে এই জেকেজিসহ ওভাল গ্রুপের আরও ৭ পরিচালককে। কাগজে কলমে দেখা যায়- জয়েন্ট স্টক থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয়ার সময় গ্রুপটিতে আটজন ডিরেক্টরের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। এই আটজনের মধ্যে আরিফ চৌধুরীও একজন। গ্রুপের অন্যান্য পরিচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ওভাল গ্রুপের সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হলো, ওভাল কমিউনিকেশন লিমিটেড, ওভাল সিকিউরিটি প্রাইভেট লিমিটেড, ওভাল ফ্যাশনস লিমিটেড, ওভাল এডভারটাইজিং লিমিটেড ও ওভাল কর্পোরেশন। এর মধ্যে করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। একমাত্র অবৈধভাবে জেকেজি হেল্থ কেয়ারের কর্মকা-ই চলছিল ধুমধামে। এ প্রতিষ্ঠান দিয়েই কোটি কোটি টাকা করোনা রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। জানা গেছে- সাবরিনা যে কেজির মাধ্যমে প্রতারণা করবেন, সেটা ছিল সুপরিকল্পিত। যেমন তার মোবাইল ফোনের সিমটা তার নামে নয়। পারভীন নামের এক নারীর নামে আইডি কার্ড দিয়ে মোবাইলের রেজিস্ট্রেশন নেয়া হয়েছে। ওই মোবাইলের কললিস্ট পাাওয়া গেছে- স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নাম। আছেন ক’জন ভিআইপিরও নাম। এই দম্পতির গুলশানের কনফিডেন্স টাওয়ারের বাসভবনে একটি রুমে পাওয়া গেছে হেরেমখানার পরিবেশ। মদ, কনডম, ইয়াবা ও নারীদের গমনাগমনের তথ্য প্রমাণাদি পাওয়া গেছে। সেখানে কারা আড্ডা দিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে জেকেজির করোনা পরীক্ষায় শত শত রোগী প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারা এখন আরিফ ও সাবরিনা বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে কল্যাণপুরের কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি মামলা দায়ের করে সাংবাদিকদের বলেন- আমি এক সাধারণ মানুষ। আমার বাসার মালিক করোনা আক্রান্ত হন। বাসার মালিক আমাদের সাতজনকে করোনা পরীক্ষা করাতে বলেন। আমরা জেকেজি হেলথ কেয়ারে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করে প্রতারিত হয়েছি। তাই আমি বাদী হয়ে একটি মামলা করেছি যাতে এই প্রতারকরা শাস্তি পায়। উল্লেখ্য, গত রবিবার দুপুরে আলোচিত চিকিৎসক সাবরিনাকে তেজগাঁও বিভাগীয় উপপুলিশ কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতেই তাকে হাজত বাস করতে হয়। এর আগে ২৩ জুন জেকেজির সাবেক কর্মী সিস্টার তানজিনা ও হুমায়ুন কবির হিমুকে গ্রেফতারের পর তাদের দেয়া তথ্য মতেই পুলিশ গুলশানের ওই অফিসে অভিযান চালায়। সাবরিনা স্বামী আরিফসহ অন্যদের গ্রেফতার করা হয়। তারা এখন সবাই কারাগারে।
×