ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ক্ষমতাসীন দল সুবিধাভোগীরা সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে থাকতে চায় দুর্নীতিবাজরা নিজ দলের হলেও ছাড় দিচ্ছে না সরকার সরকারের আপোসহীন নীতির পরও একটি গোষ্ঠীর সমালোচনা

হোতারা রেহাই পাবে না ॥ স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৫ জুলাই ২০২০

হোতারা রেহাই পাবে না ॥ স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স

রাজন ভট্টাচার্য ॥ শুরু থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে বর্তমান সরকার। ইতোপূর্বে নিজ দলের লোকদেরও ছাড় দেয়া হয়নি। এবার স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারী দলের ছত্রছায়ায় করোনাকে কেন্দ্র করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না তাদের। অন্য সব দুর্নীতি-অনিয়মের মতোই স্বাস্থ্য খাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় ভুয়া রিপোর্ট, মাস্ক ও সুরক্ষা সামগ্রী কেনায় অনিয়মসহ স্বাস্থ্য খাতে সার্বিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলছে চিরুনি অভিযান। তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ইতোমধ্যে নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে। রিজেন্টসহ বেশকিছু হাসপাতাল ও ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। কোভিড পরীক্ষায় অক্ষম বেসরকারী বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সমাজে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সব সময় ক্ষমতাসীনদের কাছাকাছি অবস্থান করতে পছন্দ করে। নানা ফাঁকফোকর দিয়ে এরা প্রবেশ করে নিজেদের আখের গুছাতে থাকে। বর্তমান সরকার শুরু থেকেই এসব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফাঁকফোকর দিয়ে যেসব দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাসীন দলে প্রবেশ করেছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছেন তারা। সরকারের এমন অবস্থানের পরও বিরোধী দলসহ একটি গোষ্ঠী বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সরকারের কঠোর সমালোচনায় মত্ত হচ্ছে। কখনও কখনও সমালোচনার ভাষা সকল শালিনতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তাই আক্ষেপ করে বলেছেন, চোর ধরেও আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। অবৈধ সম্পদ অর্জন থেকে ক্যাসিনো কা-। তারপর পেঁয়াজ কেলেঙ্কারি, টিসিবি পণ্য আত্মসাৎ, পাপিয়া কা-, ত্রাণ চুরি থেকে স্বাস্থ্য খাতে কেলেঙ্কারি। কাউকেই ছাড় দেয়া হয়নি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরই সাধারণ মানুষ তা জানতে পেরেছে। সব ঘটনার সঙ্গেই কোন না কোনভাবে সরকারী দলের নাম জড়িয়েছে। তাদের ছাড় না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক অভিযান পরিচালনা করেছে। সরকারী দলের মধ্যেও দলের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে বলে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। যারা এ ধরনের প্রতিবাদ করতে চেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যন্ত চলছে শুদ্ধি অভিযান। গত বছর থেকে একের পর এক এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে সময়ের কারণে অভিযানের ধরন ও গতিপথ বদলেছে। একদিকে দুর্নীতি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা। যখন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত রাঘব বোয়ালদের ধরা হয়, তখন সরকারের বিরুদ্ধে আরও বদনাম। কার্যত দুর্নীতির জন্য সরকারকেই দোষারোপ করা হয়। তাহলে কি দুর্নীতিবাজদের ধরা হোক; তা চায় না বিরোধী পক্ষ? নাকি সমালোচনার খাতিরে সরকারের ভাল কাজগুলো নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় সবসময়। এরই ধারাবাহিকতায় উল্টো কথাবার্তা বলা স্বভাবে রূপ নিয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে কোন পথে যাবে সরকার। সম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মোহাম্মদ সাহেদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতা এবং স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের সদস্যদের সমালোচনার জবাবে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে কোন দলের সেটা বড় কথা না। কে এ ধরনের দুর্নীতি, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত- আমরা যাকে পাচ্ছি, যেখানে পাচ্ছি ধরছি। আর ধরছি বলেই যেন আমরা চোর ধরে, চোর হয়ে যাচ্ছি। আমরাই ধরি আবার আমাদেরকেই দোষারোপ করা হয়। এটাই হলো দুর্ভাগ্য। রাজনীতিক ও সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন, সমাজে দুর্নীতির শিকড় নতুন কিছু নয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, এরশাদসহ খালেদা জিয়ার আমলেও দুর্নীতির বহু রকম ঘটনা ঘটেছে। তবে দুর্নীতির যাত্রা শুরু হয়েছে জিয়াউর রহমানের আমলেই। অর্থাৎ তখন দুর্নীতি সমাজে সবচেয়ে বেশি আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় রাজনৈতিক বিবেচনায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্নীতিবাজ ও সুযোগ সন্ধানীরা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের স্বার্থে খোলস বদলায়। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। তারা মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকা মানেই, নিরাপদ। অর্থ ও নানা স্বার্থের বিনিময়ে এসব অসাধু ব্যক্তিদের অনেক নেতাই আশ্রয় দিয়ে থাকেন। প্রকৃত অর্থে তারা রাজনীতিক নন। সুবিধাবাদী। তাই দলে পরীক্ষিত লোকদের গুরুত্ব থাকা উচিত। হাইব্রিড বা বহিরাগতরা অর্থের বিনিময়ে পদ পদবি নিলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তবে সার্বিক দুর্নীতির যে চিত্র তা দূর করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দক্ষ করতে হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। যারা এ খাতে দুর্নীতি করছে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দলের ভেতরে বর্ণচোরা সেজে যারা অর্থসম্পদ বৃদ্ধির চেষ্টা করে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করবে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। কোনভাবেই দলের আদর্শের অপব্যবহার করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন। জনগণের বুকের গভীরে রয়েছে এর শেকড়। অবাঞ্ছিত কাউকে দলে এসে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ভাগ্য বদলাতে দেয়া যাবে না। দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মীদের পেছনে রেখে আওয়ামী লীগে আশ্রয়ী, লোভী, ষড়যন্ত্রকারীদের আর সুযোগ নেই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। এ বিষয়ে শেখ হাসিনার সরকার স্ব-প্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি উদঘাটন করে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান থেকে শুরু করে ত্রাণ কার্যক্রম, স্বাস্থ্য খাতসহ যেখানেই অনিয়ম দুর্নীতি সেখানেই কঠোর অবস্থানে সরকার। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, জনগণ এখন আর তাদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হয় না। বিএনপির মরিচা ধরা কৌশল আজ অকৌশলে রূপ নিয়ে বুমেরাং হচ্ছে। দেশের মানুষ এখন দোষারোপের রাজনীতি পছন্দ করে না। কিন্তু বিএনপি এমন মিথ্যাচার করে যে তার জবাব না দিয়েও পারা যায় না। এসব প্রতারক এবং দুর্বৃত্তরা সাপের মতো খোলস বদলায় বলে মনে করেন দুর্নীতি দমনের কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। তাদের অপকর্ম করতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল প্রয়োজন হয়। কারণ বাংলাদেশে একটি ধারণা আছে ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত থাকলে দুর্নীতি ও প্রতারণা সহজ হয়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা টাকা পয়সার বিনিময়ে তাদের আবার দলে আশ্রয় দেয়। তাই এসব প্রতারকের সঙ্গে যাদের ছবি প্রকাশ হয়েছে, যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা গেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কারোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত। তার মতে, এখন তো আর বহিরাগত বলে দায় এড়ানো যাবে না। জেকেজি কেলেঙ্কারি হোতারা আইনের আওতায় করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া জেকেজি হেলথকেয়ারে চেয়ারম্যান ডাঃ সাবরিনা আরিফকে তিন দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। রবিবার তাকে গ্রেফতার দেখানোর পর সোমবার আদালতে হাজির করে তেজগাঁও থানায় করা প্রতারণার মামলায় চারদিনের রিমান্ডে আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সম্প্রতি সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে অর্থ নিচ্ছিল জেকেজি। পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিচ্ছিল। এ অভিযোগে সাবরিনাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পাশাপাশি গত ২২ জুন জেকেজি হেলথকেয়ারের সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানতে পারে, জেকেজি হেলথকেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপে তৈরি করা হয়। জব্দ করা ল্যাপটপে এর প্রমাণ মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে সাবরিনা জানান, জেকেজির সাত-আট কর্মী ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করেন। নমুনা পরীক্ষার জন্য বিদেশী নাগরিকদের জন্য নেয়া হতো ১০০ ডলার (প্রায় ৮ হাজার ৫০০ টাকা)। বাংলাদেশীদের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা। যদিও দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতির ভিত্তিতে বিনামূল্যে তাদের স্যাম্পল কালেকশন করার কথা ছিল। এসব ঘটনার পর ২৪ জুন জেকেজি হেলথকেয়ারের নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল তা বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান অবস্থান প্রমাণ করবে যে যতই প্রভাবশালী হোক অন্যায় করলে কোন ছাড় নেই। যারা রাজনৈতিক লেবাসে অপকর্ম করেছেন তাদের জন্য এই অভিযান একটি সতর্কবার্তাও বটে। তিনি বলেন, অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে তড়িঘড়ি করে কোন অবস্থাতেই মামলার চার্জশীট দেয়া যাবে না। তাহলে অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বিনা শাস্তিতে ছাড় পেয়ে যেতে পারে। যেন কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হয় সে রকম চার্জশীট আদালতে উপস্থাপন করার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তিনি। পার পায়নি রিজেন্ট কেলেঙ্কারির হোতারা ॥ সর্বশেষ বেসরকারী রিজেন্ট হাসপাতালে সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি ভুয়া করোনা টেস্টের ঘটনায় ছয় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে। কয়েকজন কর্মচারীকে গ্রেফতার এবং হাসপাতালটি বন্ধ করে দিলেও ওই ঘটনার মূল হোতা মোঃ সাহেদ এখনও পলাতক। রিজেন্ট হাসপাতালের কোন বৈধ লাইসেন্স নেই ২০১৩ সাল থেকে। তারপরও স্বাস্থ্য অধিদফতর ওই হাসপাতালের সঙ্গে করোনা চিকিৎসার জন্য চুক্তি করেছিল। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তারা চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সাহেদ আত্মসমর্পণ না করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে। তাকে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। সোমবার র‌্যাবের পক্ষ থেকে এক ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, রিজেন্ট কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্তদের অনেককেই ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাহেদের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে তার পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে কাজ করছে বলেও জানানো হয়। এর বাইরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে নকল মাস্কসহ সুরক্ষাসামগ্রী জব্দ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গ্রেফতার করা হয়েছে এসব অপকর্মে জড়িত হোতাদের। এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর ঠিকাদার জিকে শামিমকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তার বিরুদ্ধে রয়েছে টেন্ডার কেলেঙ্কারিসহ নানা ধরনের অভিযোগ। প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ সিকিউরিটি গার্ড নিয়ে সব সময় চলাফেরা করতেন জিকে শামীম। বাগিয়ে নিতেন বড় বড় টেন্ডার। আর ক্যাসিনোকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল হোসেন স¤্রাটকেও গ্রেফতার করা হয়। নানা রকম কেলেঙ্কারির অভিযোগে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীকেও যুবলীগ থেকে বিদায় দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে খালেদ মাহমুদকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। মতিঝিল এলাকায় তিনি ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন। ঢাকায় ৬০টি অবৈধ ক্যাসিনোর সন্ধান মিলেছে। খালেদ মাহমুদের দখলে ছিল ১৭টি ক্যাসিনো। ওয়েস্টিন হোটেল কেলেঙ্কারির যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া যুবলীগের প্রভাবেই সব অপকর্ম করেছেন। তাকে গ্রেফতারের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, মন্ত্রী এমপিদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ও ছবি প্রকাশ পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে আটকের পর তাকে যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। টিসিবির তেল কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ত্রাণ চুরির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলাসহ ইউনিয়নে শতাধিক জনপ্রতিনিধিকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকেও এসব জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করার কথা রয়েছে। ত্রাণ আত্মসাতের সঙ্গে যুক্তদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলসহ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও সব দলের নেতাদের নাম এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগে মেডিট্যাক ইমেজিং লিমিটেডের পরিচালক হুমায়ুন কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার একইদিনে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট লিমিটেডের মালিক মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে তলব করা হয়েছিল। তিনি দুদকে উপস্থিত না হয়ে দুজন আইনজীবী পাঠিয়েছেন। গত রবিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের কয়েকজনকে মাস্ক কেলেঙ্কারির জন্য দুদুকে তলব করা হয়। মানব পাচারের অভিযোগে আলোচিত সাবেক এমপি বদিসহ অনেকের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে ব্যবস্থা। একই অপরাধে এমপি কাজি শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানে সরকার। এতসব ব্যবস্থার মধ্যেও প্রতিদিন সরকারের সমালোচনায় মুখর বিএনপি নেতারা। একদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর বাইরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতাসহ বিভিন্ন বাম দলের নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে গিবত করে যাচ্ছেন প্রতিদিন। মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা পরীক্ষা নিয়ে আর কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, ‘করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ যেমন উদ্বেগ বাড়িয়েছে, তেমনি বিদেশে দেশের ইমেজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই এ ধরনের অপকর্ম নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ ভবিষ্যতে আর কোন প্রতিষ্ঠান যেন এ ধরনের অপরাধ করতে না পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রাহমান কার্জন। তার মতে প্রশাসনিক দুর্নীতি কোন সরকার ক্ষমতায় তার ওপর নির্ভর করে না। এটা সব সময়ই হয়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে যারা ক্ষমতায় থাকে তারা দুর্নীতি করতে প্রশাসনিক সুবিধা পায়। তাই প্রতারক এবং দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পরিচয় কেনে অথবা সরাসরি যুক্ত থাকে। তিনি বলেন, ধরা পড়ার পর রাজনৈতিক দল তাদের অস্বীকার করে বা বহিষ্কার করে। কিন্তু তাতে কিছুই হয় না। কয়েকদিন পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়।
×